আন্দোলনে তরুণদের সংযুক্ত করতে চায় বিএনপি
প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৩, ১৯:৫৬
আন্দোলনে তরুণদের সংযুক্ত করতে চায় বিএনপি
মো. ইলিয়াস
প্রিন্ট অ-অ+

সরকারের পতন, সংসদ বিলুপ্তি, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। চলমান আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ের পূর্বে এবার তরুণ সমাজকে উজ্জীবিত করতে উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। ‘দেশ ও মানুষ বাঁচাতে তারুণ্যের সমাবেশ’ স্লোগানে মাঠে নামছে বিএনপির তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। ১১ দফা দাবিতে ঢাকাসহ ৬টি বিভাগীয় শহরে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল যৌথভাবে ‘তরুণ সমাবেশ’ করার ঘোষণা দিয়েছে। আগামীকাল ১৪ জুন বুধবার চট্টগ্রামে সমাবেশের মাধ্যমে তরুণ সমাবেশে শুরু হচ্ছে।


‘দেশ ও মানুষ বাঁচাতে তারুণ্যের সমাবেশ’- এ স্লোগানে প্রথম দিনই বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বড় জমায়েত করে চমক দেখাতে চায় দলটি। বিভাগীয় এই সমাবেশ সফল করতে নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। বিভাগের প্রত্যেক জেলা ও উপজেলা থেকে সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। সমাবেশ সফল করতে নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। তিন সংগঠন মিলে বিভাগীয় পর্যায়ে গঠন করা হয়েছে কমিটি। তরুণ সমাজকে উজ্জীবিত করতে বিতরণ করা হবে ৫০ লাখ লিফলেট।


চট্টগ্রামের পর ১৯ জুন বগুড়া, ২৪ জুন বরিশাল, ৯ জুলাই সিলেট, ১৭ জুলাই খুলনা এবং ২২ জুলাই ঢাকায় তারুণ্যের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।


তারুণ্যের সমাবেশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতারা জানান, তরুণদের মধ্যে দায়িত্ববোধ ও দেশপ্রেম তৈরির লক্ষ্যে এসব সমাবেশ হচ্ছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ১৫ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় রয়েছে। দীর্ঘ এই সময়ে ক্ষমতাসীনরা দেশের বিভিন্ন খাতে ব্যাপক ‘পরিবর্তন ও দলীয়করণ’ করেছে। তাছাড়া দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে দেশের প্রায় ৪ কোটি নতুন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। ক্ষমতাসীনদের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও করতে পারেননি। বিভিন্ন সময় দাবি আদায়ে রাজপথে নামলে হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন অনেকেই। সুতরাং এই সরকারের বিরুদ্ধে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের পাশাপাশি তরুণ সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে। ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষা করতেই তরুণ প্রজন্মকে জাগ্রত করতে হবে।


ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ বিবার্তাকে বলেন, তরুণ সমাজ গত এক যুগের বেশি সময় ধরে তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তাদেরকে গণতান্ত্রিক এবং ভোটাধিকারের পক্ষে সোচ্চার হওয়ার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। তরুণদের তারুণ্যের সমাবেশে যোগ দিয়ে ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, বেকারত্ব দূর করার জন্য সরকারকে বার্তা দিতে চাই। এর মাধ্যমে জানাতে চাই তরুণ সমাজ তাদের অধিকার আদায়ের সোচ্চার।


তারুণ্যের সমাবেশে তরুণদের জন্য কী বার্তা থাকবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাকরির ক্ষেত্রে তরুণদের যৌক্তিক বয়স, যে তরুণসমাজ দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ভোট দিতে পারেনি- তাদের ভোট দেওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করা। বেকারত্ব দূরীকরণে সরকারের উদ্যোগ এবং আওয়ামী লীগ সরকার যে ঘরে ঘরে চাকরির কথা বলেছে- এই মিথ্যে প্রতিশ্রুতিতে দেশের প্রায় ৪ কোটি তরুণ অবহেলার শিকার হচ্ছে। তরুণদের দেশপ্রেম এবং অধিকারের প্রতি সোচ্চার হয়ে রাজপথে নামার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।


জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রাজীব আহসান বিবার্তাকে বলেন, আমাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য হলো তরুণদেরকে রাজনীতিতে আরো বেশি সচেতন করা। তারা যেন রাজনীতি নিয়ে ভাবে এবং পজিটিভ দিকগুলো চিন্তা করে। সেই হিসেবে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে আন্দোলন চলছে সেখানে তরুণরা যেন অংশগ্রহণ করে; এটাই আমাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য। এখানে আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। তরুণদের অনেকেই আমাদের পরামর্শ দিচ্ছেন। তাদেরকে প্রতিবাদী হওয়ার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।


তিনি বলেন, ৩ কোটি ৭০ লক্ষ নতুন ভোটার যে ভোট প্রয়োগ করতে পারছে না, রাষ্ট্র ক্ষমতায় ভোটারদের অংশগ্রহণে মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা থাকে এটি চিরন্তন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে তারুণ্যের যে উচ্ছ্বাস, তারা যে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে শরিক হবেন- এটি দেশপ্রেমের অংশ। দেশ পরিচালনায় তাদের একটি অংশীদারিত্ব থাকবে- সেই জায়গায় তারা বঞ্চিত। যে চেতনার উপর বাংলাদেশের স্বাধীনতা সেটি হচ্ছে ভোটাধিকার। সেই অধিকার আজকে নেই। স্বাধীনতার যে চেতনা সেটার পরিপন্থী কাজ করছে সরকার। সে জায়গাগুলোতে আমরা তরুণদের সাথে কথা বলছি, তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। তারা আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে। ইতিবাচক রাজনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং তাদের মেধা, প্রজ্ঞাকে রাজনীতিতে কাজে লাগিয়ে আধুনিক স্বনির্ভর দেশ গড়ার যে প্রচেষ্টাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য।


যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বিবার্তাকে বলেন, দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে ভোটার হওয়ার সত্ত্বেও প্রায় ৪ কোটি তরুণ-যুবা ভোট প্রয়োগ করতে পারেনি। আমাদের লক্ষ্য সেই ভোটারদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। একটি দেশের যুবসমাজ হচ্ছে মূল শক্তি। সরকার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে যুব সমাজের ক্ষমতা রয়েছে, অধিকার রয়েছে। দেশ যে সরকার পরিচালনা করবে এটা নির্ধারণের মালিক হচ্ছে জনগণ। এই অংশীদারিত্ব থেকে তারা যে বঞ্চিত হচ্ছে আমরা সেটা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে আমাদের দাবির সাথে রাজপথের এই সংগ্রামে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে চাই।


টুকু বলেন, এ সরকার ২০০৮ সালের পূর্বে বলেছিলেন ঘরে ঘরে চাকরি দেবে। চাকরির কথা বলে এখন ঘরে ঘরে বেকারত্ব বাড়িয়েছে। দলীয় বিবেচনার চাকরি দেয়া হচ্ছে। দলের বাইরে কাউকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। পূর্বে চাকরির ক্ষেত্রে মেধা যাচাই-বাছাই করা হলেও এখন দল বিবেচনা করা হয়। এভাবে একটা রাষ্ট্র চলতে পারে না। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং গণতন্ত্রের পূর্ব শর্ত হচ্ছে ভোটারদের অধিকার থাকতে হবে, আইনের শাসন থাকতে হবে, ন্যায়বিচার থাকতে হবে। এসব বিষয়গুলো বর্তমানে বাংলাদেশে অনুপস্থিত। জনগণের ভোটাধিকার যুব সমাজকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করতে চাই।


বিবার্তা/এমই/রোমেল/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com