মুরাদনগর ও বাঙ্গরা যুবলীগের তিন মাসের কমিটিতে ১৯ বছর পার
প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৩, ১৮:০৪
মুরাদনগর ও বাঙ্গরা যুবলীগের তিন মাসের কমিটিতে ১৯ বছর পার
মোহাম্মদ শরিফুল আলম চৌধুরী, কুমিল্লা
প্রিন্ট অ-অ+

গত ১৯ বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি মুরাদনগর উপজেলা যুবলীগের। কুমিল্লার বৃহত্তম এ উপজেলায় সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়েছিল মাসুক-নাসিরের সময়। গত ১৯ বছরে দুইবার কমিটি হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি গুরুত্বপূর্ণ এ ইউনিটের।


পাঁচ বছর এক মাস আগে দ্বিতীয় দফা গঠন করা হয় মুরাদনগর উপজেলা ও বাঙ্গরা বাজার থানা যুবলীগের পৃথক ২১ সদস্যের আহবায়ক কমিটি। ওই কমিটির মেয়াদও ছিল তিন মাস। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন সম্মেলন হয়নি। হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটিও।


২০০৪ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই ১৯ বছরেও কোন পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি সংগঠনটি। এ কারণে ঝিমিয়ে পড়েছে যুবলীগের সকল কর্মকাণ্ড। সহযোগী সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের কোনো কর্মসূচীতেও দেখা মেলে না তাদের।


মুরাদনগর উপজেলা যুবলীগের বর্তমান ২১ সদস্যের কমিটির ৫ জন অন্য সংগঠনে ও আহবায়কসহ ২ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। অপর দিকে বাঙ্গরা বাজার থানা শাখা যুবলীগেরও আরো অন্তত ৫ জন নেতা অন্য সংগঠনে এবং একজন হত্যা মামলার আসামী হওয়ায় দীর্ঘদিন যাবত এলাকা ছাড়া।


সর্বশেষ গত ২০০০ সালে মাসুকুল ইসলাম মাসুককে সভাপতি ও নাসির উদ্দীন সরকারকে সাধারণ সম্পাদক করে মুরাদনগর উপজেলা যুবলীগের সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এরপর ১৯ বছরে দুইবার কমিটি হলেও আর কোন পূর্ণাঙ্গকমিটি হয়নি।


বর্তমান আহবায়ক কমিটিও সেই ২০১৮ সালের ১৯ মার্চের কথা। তখনকার বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের আলোচিত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশীদের স্বাক্ষরে তিন মাস মেয়াদি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয় মুরাদনগর উপজেলা ও বাঙ্গরা বাজার থানা শাখা যুবলীগের। ২১ সদস্যের কমিটিতে মুরাদনগর উপজেলা শাখায় খায়রুল আলম সাধনকে আহবায়ক এবং রুহুল আমীন ও জহিরুল ইসলাম স্বপনকে যুগ্ম-আহবায়ক, বাঙ্গরা বাজার থানা শাখায় মো. নাইম খানকে আহবায়ক ও হাজী মো. আবদুল্লাহ নজরুল ও হাজী মো. আনোয়ারুল ইসলাম রিপনকে যুগ্ম আহবায়ক করা হয়। কথা ছিল সম্মেলন করে তিন মাসের মধ্যে পুর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের। অথচ দীর্ঘ পাঁচ বছরের বেশি সময় পার হলেও কোনো সম্মেলন হয়নি, কমিটিও হয়নি।


খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, যুবলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের হস্তক্ষেপের কারণে এতদিন সম্মেলন হয়নি, ফলে কমিটিও করা যায়নি। যুবলীগের কোন নেতা আওয়ামী লীগের কোন নেতার অনুসারী- এসব নিয়ে দ্বন্দ্বে কমিটি হয়নি বলে জানান অনেক যুবলীগ নেতা। এসব কারণে মুরাদনগর ও বাঙ্গরা যুবলীগে নতুন নেতৃত্ব তৈরি হয়নি। মুরাদনগর উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির আহবায়ক খায়রুল আলম সাধন ও সদস্য দেলোয়ার হোসেন খোকন মারা গেছেন অনেক আগে। এর মধ্যে মাহফুজুর রহমান বাকির উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক, কাজি আলাউদ্দিন উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক, আরিফুল ইসলাম শাহেদ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সৈয়দ রাজিব আহাম্মদ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, খাইরুল ইসলাম মিনহাজ জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক পদে রয়েছেন।



অপরদিকে বাঙ্গরা বাজার থানা যুবলীগের সদস্য শেখ মনির এখন বাঙ্গরা বাজার থানা জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি, রহিম পারভেজ ৫নং পূর্ব ধৈইর পশ্চিম ইউপি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান ও বাঙ্গরা বাজার থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক, নিয়াজ মোহাম্মদ রিপন ও দিদার হোসেন খান যুগ্ম আহবায়ক, তৈমুর রহমান তুহিন ২২নং টনকী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপির আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ইউপি চেয়ারম্যান এবং শাহিন ভূঁইয়া হত্যা মামলার চার্জশীটভূক্ত আসামী হওয়ায় দীর্ঘ দিন এলাকা ছাড়া।


এসব কারণে যুবলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম একেবারেই ঝিমিয়ে পড়েছে।


মিছিল-মিটিং, আন্দোলন-সংগ্রামেও তাদের দেখা যায় না। ২০১৮ সালে যখন উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটি দেওয়া হয়, তখন স্থানীয় সংসদ সদস্য ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকারের সঙ্গে প্রবল মতবিরোধ ছিল। সময়ের ব্যবধানে এ দুইনেতার সম্পর্ক এখন সাপে-নেউলে। বর্তমানে মুরাদনগর উপজেলা যুবলীগের দুই যুগ্ম আহবায়ক দুই নেতার অনুসারী। এর মধ্যে যুগ্ম আহবায়ক রুহুল আমীন সংসদ সদস্যের অনুসারী। আরেক যুগ্ম আহবায়ক জহিরুল ইসলাম স্বপনসহ অন্যরা জাহাঙ্গীর আলম সরকারের অনুসারী। আহবায়ক কমিটির অনেক সদস্য আবার কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ম. রুহুল আমীনের অনুসারী। এ রকম গ্রুপিংয়ের কারণে সম্মেলন হয়নি।


মুরাদনগর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক রুহুল আমীন ইতিমধ্যে উপজেলার প্রায় ১২ ইউনিয়নেই কোন সম্মেলন না করে প্রেস রিলিজ দিয়ে কমিটি দিয়েছে বলে ফেসবুকসহ বিভিন্ন স্যোশালমিডিয়ায় প্রচার করছেন। ওই কমিটিতে যারা জামাত-বিএনপি সমর্থক, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উপর হামলা মামলা করা আসামীদেরকেও রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।


১২ ইউনিয়নে প্রেস রিলিজে কমিটি দেয়া যুগ্ম আহবায়ক রুহুল আমীন বিবার্তাকে বলেন, ‘মুরাদনগর উপজেলা কমিটির আহবায়ক মারা যাওয়ায় আমি যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে ইউনিয়ন কমিটি দিতেই পারি। বিভিন্ন মামলার চার্জশীট ভুক্ত আসামীরা কিভাবে কমিটিতে স্থান পেলো- এর জবাবে তিনি বলেন মামলার বিষয়টি তার জানা ছিল না।’


ইউনিয়নে ইউনিয়নে প্রেস রিলিজের কমিটি দেয়া হয়েছে বাঙ্গরা বাজার থানা শাখায়ও। ২৬ এপ্রিল বুধবার সকালে ১৭নং জাহাপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হোসেন ক্ষোভের সাথে বিবার্তাকে বলেন, ‘আমার কমিটির অনুমোদন দিয়েছে স্বয়ং আহবায়ক। আর এখন শুনি যুগ্ম-আহবায়ক আর সদস্য মিলে আরেকটি নতুন কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। এমন অসাংগঠনিক কাজ আর দেখি নাই।’


কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার বিবার্তাকে বলেন, ‘দ্রুত ঝিমিয়ে পড়া কমিটি বাদ দিয়ে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করা প্রয়োজন।’


জানতে চাইলে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ম. রুহুল আমীন বিবার্তাকে বলেন, আহবায়ক কমিটি তো অনেক আগে হয়েছে, এরপর মাঝখানে তো করোনা ছিল। যার কারণে দুই বছর বাদ গেছে। জেলা যুবলীগের কমিটিও তো এখন নাই। সবাই চাচ্ছে বিলুপ্ত করে নতুন করে কমিটি করার।


গ্রুপিংয়ের কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে বিলম্ব হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে গ্রুপিংয়ের কোনো বিষয় নেই। যুবলীগের কমিটি গঠনের সাথে তো আওয়ামী লীগের ওইভাবে সম্পর্ক নাই।


বিবার্তা/রোমেল

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com