আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নেওয়ার প্রস্তুতি বিএনপির
প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৩, ১৩:৩৮
আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নেওয়ার প্রস্তুতি বিএনপির
কিরণ শেখ
প্রিন্ট অ-অ+

সারাদেশে সব ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। আর এ আন্দোলনের লক্ষ্যে নির্ধারণের জন্য সারাদেশে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) দলীয় সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানদের সঙ্গে মতবিনিময় করছে দলটি। মতবিনিময় থেকে আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে এবং আন্দোলনের জন্য তাদেরকে সার্বিক প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে বলে জানা গেছে।


গত ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম ধাপে মতবিনিময় শুরু হয়। এদিন রংপুর বিভাগের সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানদের সঙ্গে মতবিনিময় করে বিএনপি। এরপর ২৭ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে খুলনা বিভাগ, ২৮ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় ধাপে খুলনা বিভাগের একাংশ ও সিলেট বিভাগ, ১ মার্চ চতুর্থ ধাপে বরিশাল বিভাগ এবং পঞ্চম ধাপে ২ মার্চ ঢাকা বিভাগের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে দলটি। আর ৫ মার্চ কুমিল্লা ও ফরিদপুর বিভাগের স্থানীয় সরকার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানদের সঙ্গে সভা করার কথা রয়েছে বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। এতে সভাপতিত্ব করবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।


জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে ১০টি মতবিনিময় সভা করবে বিএনপি। এতে ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত নির্বাচিত বিএনপি সমর্থিত প্রায় ৪ হাজার সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আর দলীয় প্রতীক ধানের শীষে নির্বাচিতদের পাশাপাশি আগে দলের সমর্থনে নির্বাচিত স্থানীয় সরকারের বর্তমান ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে এসব বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।


সরকারবিরোধী বৃহত্তর আন্দোলন গড়ার লক্ষ্য নিয়ে মাঠপর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করছে দলটি। এজন্য সভায় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) দলীয় সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানদের পরামর্শ ও মতামত নেওয়া হচ্ছে। একই সাথে সরকারবিরোধী আন্দোলন নিয়ে বিএনপির লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং পরিকল্পনা তাদেরকে জানানো হচ্ছে। এজন্য ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) দলীয় সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানদের প্রস্তুতি নেওয়ার আহবান জানিয়েছে দলটি।




এবিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি আন্দোলন শুরু করেছে। এই আন্দোলন এখন ইউনিয়ন পর্যায়ে চলছে। আর এসব আন্দোলন বিএনপি কিভাবে করছে, কিভাবে সাধারণ জনগণকে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করিয়ে এই সরকারকে সরাতে পারি এবং দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে পারি, সেই লক্ষ্যেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সারাদেশে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) দলীয় সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করছেন। কারণ সারাদেশে ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) বিএনপির সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানরা জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর এখনো নির্বাচিত আছেন। তাই সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানদের একটা দায়িত্ব রয়েছে যে, এই আন্দোলনে জনগণকে আরও বেশি করে সম্পৃক্ত করার।



এরই অংশ হিসেবে গত ৪ মার্চ সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে দেশব্যাপী ইউনিয়ন এবং সব মহানগরগুলোর থানায় থানায় পদযাত্রা করেছে বিএনপি। ওইদিন রাজধানীতে ৬২টি অধিক থানায় পদযাত্রাও করেছে। আর আগামী ১১ মার্চ বিদ্যুতের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, চাল-ডাল-তেল-কৃষি-শিক্ষা উপকরণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে এবং বর্তমান সংসদ বিলুপ্ত করে নিদর্লীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তিসহ ১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে সারাদেশে মহানগর ও জেলা পর্যায়ে মানববন্ধন করবে দলটি।


এবিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাসুজ্জামান দুদু বিবার্তাকে বলেন, আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতেই সারাদেশে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) দলীয় সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করা হচ্ছে। এসব সভায় সমস্যা এবং সমাধানের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। কারণ আমরা প্রান্তিক অবস্থানে থেকে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।


ঢাকা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ বিবার্তাকে বলেন, তৃণমূল থেকে আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতেই সারাদেশে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) দলীয় সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করা হচ্ছে। আর তাদের কাছ থেকে রাষ্ট্রের অবস্থা সম্পর্কে জানা হচ্ছে এবং কোন পথে হাঁটলে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আসবে- সেই বিষয়েও তাদের মতামত নেওয়া হচ্ছে।


আবদুস সালাম আজাদ বিবার্তাকে জানান, সরকারবিরোধী আন্দোলন বিএনপি তৃণমূল থেকে শুরু করে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে চাচ্ছে। বিএনপির এই সিদ্ধান্তের সাথে সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানরা একমত পোষণ করেছেন। তারা বলছেন, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে নৌকায় ৯০ শতাংশ ভোটাররা ভোট দেবেন না।



প্রসঙ্গত, গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর কমলাপুরে গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ থেকে সরকার পদত্যাগের দাবিতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে যুগপতভাবে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেয় বিএনপি। এরপর ২৩ ডিসেম্বর গণমিছিলের মধ্য দিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি শুরু করে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। গত আড়াই মাসে তারা যুগপতভাবেই সারাদেশে অবস্থান কর্মসূচি, বিক্ষোভ সমাবেশ ও বিভাগীয় সমাবেশ করেছে। আর গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে তারা ইউনিয়ন পর্যায় থেকে পদযাত্রার কর্মসূচি শুরু করে, বিভাগ ও জেলা পর্যায়ের পদযাত্রা শেষ করেছে।


বিবার্তা/কিরণ/রোমেল/কেআর

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com