যুগপৎ আন্দোলন: বিএনপির সাথে মতবিরোধ!
প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৩, ০৮:২৩
যুগপৎ আন্দোলন: বিএনপির সাথে মতবিরোধ!
কিরণ শেখ
প্রিন্ট অ-অ+

যুগপৎ আন্দোলন করছে বিএনপি ও সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। এই লক্ষ্যে বিএনপি ইতিমধ্যে ১০ দফাসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক জোটগুলো বিভিন্ন দফা ঘোষণা করেছে। এসব দফা নিয়ে যুপপৎ আন্দোলনের জোটগুলোর সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছে বিএনপি। বৈঠকগুলোতে মূলত একদফা দাবি নির্ধারণ করে দলটি সরকার পতনে রাজপথে নামতে চাচ্ছে। কিন্তু এখানেও দেখা দিয়েছে মতবিরোধী। যুগপৎ আন্দোলনের জোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের কেউ কেউ বলছেন, বিএনপির ১০ দফাসহ জোটগুলো ঘোষিত দফাগুলো নিয়ে 'মোট ২৭ দফা'। এই ২৭ দফার মধ্যে কাটছাঁট করে '৯ থেকে ১০ দফা' রাখতে। আর এই ৯ কিংবা ১০ দফা নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করার করার কথা বলা হচ্ছে।


তবে ৯ কিংবা ১০ দফা নিয়ে রাজপথে আন্দোলনের বিষয়ে নাকচ করে দিয়েছে ১২ দলীয় জোট ও ‘জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট। তারা বলছে, তিন দফা দাবিতে সরকার পতনের আন্দোলন হবে। এরমধ্যে প্রথমত- নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, দ্বিতীয়ত- বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ এবং তৃতীয়ত- বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি।



এই নিয়ে বিএনপি, গণমন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট এবং জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট নেতৃবৃন্দের মধ্যে মতবিরোধ ও দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। তবে এবিষয়ে জোট দলগুলোর কেউ প্রকাশ্য কোন কথা বলতে চাচ্ছেন না। তারা বলছেন, যুপপৎ আন্দোলনের মূল দল বিএনপি এবিষয়ে বাইরে কথা বলতে জোটদলগুলোর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে নিষেধ করেছেন।



১২ দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের শরিক দলগুলো এরআগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সাথে ছিল। গত ৯ ডিসেম্বর ২০ দলীয় জোটের অনানুষ্ঠানিক সভায় শরিকদের ডেকে জোট ভেঙে দিয়েছে বিএনপি। দলটি বলছে, কেউ আর ২০ দলীয় জোটের নাম ব্যবহার করবে না। কারণ দলটি যুগপৎ আন্দোলনের গতি আরো বাড়াতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।


পরে ২০ দলীয় জোটের ১২টি দল মিলে ‘১২–দলীয় জোট’ গঠিত হয়েছে। আরও ছয়টি দল মিলে ‘জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট’ গঠন করা হয়েছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) এককভাবে কর্মসূচি পালন করছে।


জানতে চাইলে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বিবার্তাকে বলেন, সরকার পতনে যুগপৎ আন্দোলনের একদফা হবে- বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন।


দফা নিয়ে মতবিরোধের বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বিবার্তাকে বলেন, দফা নির্ধারণে মতবিরোধের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।


এনপিপির চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বিবার্তাকে বলেন, বিএনপির সাথে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলন ও সংগ্রামের বিষয়ে কথা হয়েছে। কিন্তু দফা নিয়ে মতবিরোধের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।


বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বিবার্তাকে বলেন, শেষ পর্যায়ে হবে তিন দফা কিংবা দুই দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন হবে। এরমধ্যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি। আর এই আন্দোলন পর্যায়ক্রমে আরো বেগবান করা হবে।


এদিকে ৯ কিংবা ১০ দফা নিয়ে রাজপথে আন্দোলনের বিষয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের কোন দ্বিমত নেই। তারা বলছে, ২৭ থেকে ৯ কিংবা ১০ দফা নির্ধারণের জন্য আমরা মতামত দিয়েছি। এবিষয়ে আমাদের কোন সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে, বিএনপির সাথে ২০ দলীয় জোটে যারা ছিলেন। আর দফা নির্ধারণে খুব শিগগিরই বিএনপির সাথে গণতন্ত্র মঞ্চের বৈঠক হবে বলে জানা গেছে।


জানতে চাইলে ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক ও গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বিবার্তাকে বলেন, বিএনপির ১০ দফাসহ যুগপৎ আন্দোলনের সব শরিক জোটের ২৭ দফা। এই ২৭ দফা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এসব দফা কাটছাঁট করে ৯ কিংবা ১০ দফা নির্ধারণ করা হবে। এনিয়ে বিএনপির সাথে গণতন্ত্র মঞ্চের খুব শিগগিরই বৈঠক হবে।


দফা নির্ধারণে মতবিরোধের বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বিবার্তাকে বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চের সাথে কোন মতবিরোধ দেখা দেয়নি। তবে ২০ দলীয় জোটে যারা ছিলেন তাদের সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।


প্রসঙ্গত, গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা বিভাগীয় বিএনপির গণসমাবেশে ব্যর্থ, অযোগ্য, দুর্নীতিবাজ সরকারের পদত্যাগ, অনির্বাচিত সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা বাস্তবায়ন এবং দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে ২৪ ডিসেম্বর দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরে গণমিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি।


এরই অংশ হিসেবে যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি ৩০ ডিসেম্বর ঢাকা ও রংপুর বিভাগে এবং ২৪ ডিসেম্বর সারাদেশে গণমিছিল করে বিএনপি। পরে দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচি হিসেবে ১১ জানুয়ারি সারাদেশের ১০টি সাংগঠনিক বিভাগীয় সদরে গণঅবস্থান কর্মসূচি, ১৬ জানুয়ারি তৃতীয় ধাপে, ২৫ জানুয়ারি চতুর্থ ধাপে, ৪ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম ধাপে, ষষ্ঠ ধাপে ১১ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা, সপ্তম ধাপে ১৮ ফেব্রুয়ারি সব মহানগরে পদযাত্রা, অষ্টম ধাপে ২৫ ফেব্রুয়ারি জেলায় জেলায় পদযাত্রা এবং নবম ধাপে আগামী ৪ মার্চ সব মহানগরের থানা পর্যায়ে পদযাত্রা করবে বিএনপি ও সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো।


বিবার্তা/কিরণ/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com