মাটির নিচে শহর 'কুবার পেডি'
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৩, ১১:০৪
মাটির নিচে শহর 'কুবার পেডি'
পর্যটন ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

মাটির নিচে পুরো একটি শহর লুকিয়ে রয়েছে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায়। কুবার পেডি নামের এ শহরের প্রায় ৮০% লোক মাটির নিচে বসবাস করেন। শহরটিকে খনি শিল্পের শহর বলা হয়। কুবার পেডি মূলত বর্ণালি পাথরের খনি। ১৯১৫ সালে খনিগুলো আবিষ্কারের পর এই শহরে খনি শ্রমিকদের কদর বেড়ে যায়। এখানে অনেক সুড়ঙ্গ ও চোরাইপথ রয়েছে। মাটির নিচের এ শহরে রয়েছে চার্চ, শপিং সেন্টার, আর্ট গ্যালারি, হোটেল ও অফিস। আশ্চর্যের বিষয় হলো এই শহরে কোনো ঘাস নেই।


এটি অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড থেকে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দূরে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মরুভূমিতে অবস্থিত। এক সময় এখানে কোনো মানুষের বসবাস ছিল না। দূর থেকে কাজের প্রয়োজনে আসতে হতো লোকজনকে। এরপর তারা এখানেই থাকতে শুরু করেন।


গ্রীষ্মকালে এখানকার তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে। শীতকালে আবার শূন্য ডিগ্রিরও নিচে নামে।


আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে উদ্ভিদ জন্মায় কম। নানা প্রতিকূলতা থাকার পরও কুবার পেডিতে গড়ে উঠেছে অত্যাধুনিক শহর। রয়েছে রেস্তোরাঁ, বইয়ের দোকান, গির্জা, বিনোদন কেন্দ্র, ক্লাব, ব্যাংক।


কেন এই শহরটি মাটির নিচে? কুবার পেডির পাথুরে জমির সঙ্গে মিশে ছিল ওপাল নামের বিশেষ এক রত্ন। এ জায়গাটার বিশেষত্ব প্রথম আবিষ্কার করে উইল হাচিসন নামের ১৪ বছরের এক কিশোর ১৯১১ সালে। এ মজার আবিষ্কারের আগে এখানকার বাসিন্দা বলতে ছিল মরুভূমির সাপ, বিষাক্ত পোকামাকড়, টিকটিকি আর এমু পাখি। কিন্তু ওপালের অস্তিত্ব আবিষ্কার বদলে দিতে শুরু করলো কুবার পেডিকে।


রত্নসন্ধানীরা আসতে শুরু করেন এখানে। রত্নের খোঁজে শুরু হলো খোঁড়াখুঁড়ি। খোঁড়াখুঁড়ি যত বাড়তে থাকল এলাকার গভীরে নামতে শুরু করল মানুষ। মাটির নিচে বড় বড় গুহার সৃষ্টি হলো। সেখানে রোদের তাপ থেকে বাঁচতে মানুষ বসবাসও শুরু করে দিল। এভাবেই সময়েরক্রমে গড়ে উঠলো এই শহর। রয়েছে ভূগর্ভস্থ সুইমিং পুল, গেমস রুম, বড় বাথরুম, লিভিং রুমসহ বিস্তৃত এবং বিলাসবহুল বাসস্থান।


জানা যায়, কুবার পেডিতে খনির কাজ শুরু হয়েছিল ১৯১৫ সালে। মরুভূমি হওয়ায় গ্রীষ্মকালে সেখানকার তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায় ও শীতকালে অনেকটাই কমে যায়।


এই আবহাওয়ার ধরনের সঙ্গে বসবাস করা মানুষের পক্ষে খুব কঠিন। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে, মানুষ খালি পড়ে থাকা খনিগুলোতে বসতি স্থাপন শুরু করে।


বর্তমানে এই এলাকায় প্রায় ১৫০০টি বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। বাইরে থেকে বাড়িগুলো দেখতে অনেকটা স্বাভাবিক হলেও এই বাড়ির ভেতরে সব ধরনের আরাম ও সুযোগ-সুবিধা আছে।


মাটির নীচে তৈরি এসব বাড়ির আবহাওয়া প্রচণ্ড গরম বা ঠান্ডা নয়। গরমে এখানকার মানুষের এসি বা কুলারেরও প্রয়োজন হয় না ও তবে শীতকালে তাদের হিটার ব্যবহার করতে হয়।


কুবার পেডির মানুষের জীবনধারা বেশ অন্যরকম। আর এই জীবনধারাই সারা বিশ্বের পর্যটকদের আকর্ষণ করে। সেখানে হলিউডের ছবির শুটিং হয়েছে। ২০০০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পিচ ব্ল্যাক’ ছবির শুটিং এখানে হয়েছিল।


শুটিং শেষে চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত স্পেস শিপটি এখানে ফেলে রেখে যায় প্রয়োজক সংস্থাটি। সেই স্পেস শিপও এখন পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।


মাটির নিচের এই শহরের বিদ্যুতের চাহিদার ৭০ শতাংশ মেটানো হয় এখানে নির্মিত হাইব্রিড এনার্জি পাওয়ার প্লান্টের মাধ্যমে। কুবার পেডিতে আসা পর্যটকদের জন্য একটি আন্ডারগ্রাউন্ড হোটেল আছে।


এখানে এক রাত থাকার জন্য পর্যটকদের ১২ হাজারেরও বেশি টাকা গুনতে হতে পারে। হোটেলে আছে একটি দুর্দান্ত ক্লাব, পুল গেমের জন্য টেবিল, ডাবল ও সিঙ্গল বেড’সহ কক্ষ। আছে সোফা ও রান্নাঘরের সুবিধাও।


সূত্র: সি নেট/ টাইমস অব ইন্ডিয়া


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com