লাদাখ ভ্রমণে ঘুরবেন যেসব জনপ্রিয় স্থান
প্রকাশ : ১১ মে ২০২৩, ১২:১১
লাদাখ ভ্রমণে ঘুরবেন যেসব জনপ্রিয় স্থান
পর্যটন ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

যারা ইতিহাস, অ্যাডভেঞ্চার ও প্রকৃতি ভালোবাসেন ও এসবের অন্বেষণ করেন তাদের জন্য লাদাখ এক সেরা গন্তব্য। যারা প্রথমবার লাদাখ ভ্রমণে ঘুরবেন যেসব জনপ্রিয় স্থান-


প্যাংগং হ্রদ


ভারত-চীন সীমান্তে ৪ হাজার ৩৫০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত প্যাংগং হ্রদ লাদাখের অন্যতম জনপ্রিয় আকর্ষণ। এটি হোলো লেক বা প্যাংগং তসো নামেও পরিচিত।


এশিয়ার বৃহত্তম লবণাক্ত জলের হ্রদগুলোর মধ্যে এটি একটি। হ্রদটি প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। এই হ্রদের দুই-তৃতীয়াংশ তিব্বতে (চীনা অঞ্চল), যখন এর এক-তৃতীয়াংশ পূর্ব লাদাখে।


লেহ শহর থেকে মাত্র ১৬০ কিলোমিটার দূরে, এটি শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশে ভরা। শীতে এই হ্রদ সম্পূর্ণরূপে জমে যায়।


ম্যাগনেটিক হিল


লেহ থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে লেহ-কারগিল-বাল্টিক জাতীয় মহাসড়কে অবস্থিত। ম্যাগনেটিক হিল মূলত একটি মাধ্যাকর্ষণ পাহাড়, যা তার চৌম্বকীয় বৈশিষ্ট্যের জন্য বিখ্যাত।


এর চুম্বকত্ব এতটাই শক্তিশালী যে এখানে মহাকর্ষ বলের কারণে যানবাহন স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাহাড়ের দিকে চলে যায়। এই পাহাড়ের শক্তি অনুমান করতে পারে এর উপর দিয়ে যাওয়া প্লেনগুলো।


অভিকর্ষের প্রভাব এড়াতে এই পাহাড়ের উপর দিয়ে বিমান চলাচল বেশ কঠিন।


পাহাড়টি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৪ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। যদিও বলা হয়, এটি একটি অপটিক্যাল ইলিউশন, তবে এটি নতুন কিছু অনুভব করার সেরা জায়গা।


লেহ প্রাসাদ


সেমো পাহাড়ের চূড়ায় ১৫৫৩ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত লেহ প্রাসাদটি লেহের প্রাক্তন রাজপরিবারের বাসভবন। প্রাসাদটি লাসার পোতালা প্রাসাদের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।


এটি আকারে কিছুটা ছোট, যা পাথর, বালি, কাঠ ও মাটি দিয়ে তৈরি। লেহ প্যালেস লাচেন পালকার নামেও পরিচিত। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত আপনি এই প্রাসাদ ঘুরতে যেতে পারবেন।


৯ তলাবিশিষ্ট এই প্রাসাদে এখন রাজকীয় জিনিসপত্রের পাশাপাশি একটি জাদুঘরও আছে। প্রাসাদটি এখন কিছুটা ধ্বংসস্তূপে, তবে বাইরে থেকে দৃশ্যটি আশ্চর্যজনক।


এই কাঠামো এখন আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (এএসআই) দ্বারা পরিচালিত হয়। প্রাসাদটি ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ডোগরা বাহিনীর দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়। পরে রাজ পরিবার দুর্গ ছেড়ে স্টোক প্যালেসে চলে আসে।


চাদর ট্রেক


এটি লাদাখ অঞ্চলের অন্যতম বিখ্যাত পর্যটন আকর্ষণ। বিশেষ করে শীতে এই স্থানে পর্যটকের সংখ্যা বেড়ে যায়। এর কারণ জান্সকার নদী। শীতে বরফে পরিণত হয় এই নদী। ফলে পর্যটকরা হিমায়িত নদীর উপর দিয়ে হেঁটে যেতে পারেন সহজেই।


একটি বিখ্যাত শীতকালীন ট্র্যাক, যা শুরু হয় চিলিং থেকে। সেখান থেকেই মূলত নদী জমতে শুরু করে। আপনি ট্রেকিং করার সময় জান্সকার নদীতে হাঁটার রোমাঞ্চ অনুভব করতে পারেন।


পর্যটকরা ট্র্যাকিং করার পাশাপাশি বিশ্রামের জন্য নদীপাড়ের কোনো স্থানে ক্যাম্প করেন। যেখান থেকে তারা উপত্যকার মন্ত্রমুগ্ধ ও অস্পৃশ্য সৌন্দর্য উপভোগ করেন। এছাড়া সেখান থেকে আপনি বরফে ঢাকা পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখেও মুগ্ধ হবেন।


ফুগতাল মঠ


ফুগতাল মঠ হলো লাদাখের জান্সকার অঞ্চলের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে অবস্থিত একটি বৌদ্ধ বিহার। একটি পাহাড়ের মুখে অবস্থিত প্রাকৃতিকভাবে গঠিত এই মঠ। সেখানকার সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন মঠগুলোর মধ্যে একটি হলো ফুগতাল মঠ। যা প্রায় ২৫০০ বছর আগে নির্মিত হয়েছিল।


ফুগতাল মঠ দূর থেকে মৌচাকের মতো দেখায়। ফুগ মানে ‘গুহা"’ ও জান্সকরি উপভাষায় তাল মানে ‘অবসর’। এই মঠে পৌঁছাতে একজনকে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়।


এই মঠের পাশেই ফুগতাল ম্যাথ স্কুল অবস্থিত, যেখানে শিশুদের বিনামূল্যে শিক্ষা দেওয়া হয়। ফুগতাল মঠের বিশেষ বিষয় হলো গুহা থেকে প্রবাহিত প্রবাহের পরিমাণ ও প্রবাহের পরিমাণ ঠিক একই থাকে।


এই মঠে ৪টি প্রার্থনা কক্ষ, লাইব্রেরি, রান্নাঘর, গেস্ট রুম ও প্রায় ৭০০ জন সন্ন্যাসীর থাকার জায়গা আছে।


শান্তি স্তুপ


লেহ থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হলো শান্তি স্তূপ। এটি একটি সাদা-গম্বুজ বিশিষ্ট স্তূপ। যেটি চানাস্পাতে একটি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। ধারণা করা হয় স্তুপটি ১৯৮৩-১৯৯১ সালের মধ্যে নির্মিত হয়েছিল এই শান্তি স্তুপ।


এটি লেহের সেরা আকর্ষণগুলোর মধ্যে একটি। বৌদ্ধ ধর্মের ২৫০০ বছর পূর্তি উদযাপন করতে ও বিশ্ব শান্তির প্রচারের জন্য এই স্তূপ জাপানি ভিক্ষুরা তৈরি করেছিলেন।


এর দেওয়ালে গিল্ট প্যানেল আছে, যা ভগবান বুদ্ধের জীবনকে চিত্রিত করে। এখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য খুবই সুন্দর। এই দ্বিতল কাঠামোর প্রথম অংশে একটি পাদদেশে বসা বুদ্ধের মূর্তি আছে।


খারদুং লা পাস


খারদুং লা ‘নুব্রা ও শ্যাওক উপত্যকার প্রবেশদ্বার’ নামেও পরিচিত। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫ হাজার ৩৫৯ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত বিশ্বের সর্বোচ্চ মোটরযানযোগ্য রাস্তাগুলোর মধ্যে একটি।


লাদাখে দেখার মতো ১২টি সেরা জায়গাগুলোর মধ্যে একটি হলো এই খারদুং লা পাস। এটি লেহ থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।


‘লোয়ার ক্যাসেল পাস’ নামেও পরিচিত এটি। ১৯৮৮ সালে যানবাহনের জন্য উন্মুক্ত করা হয় স্থানটি। মোটরবাইক চালকদের জন্য সেরা এক রাস্তা এটি।


এখানে আপনি আর্মি ক্যান্টিনে চা-পানিও উপভোগ করতে পারবেন। জায়গাটি সিয়াচেনে সেনাবাহিনীর সরবরাহ পাঠানোর জন্যও পরিচিত।


স্টোক প্যালেস


লেহ থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, স্টোক প্যালেস হলো লাদাখের রাজপরিবার ও রাজা সেঙ্গে নামগ্যালের বংশধরদের গ্রীষ্মকালীন আবাস। এটি ১৮২০ সালে রাজা টিস্যাপাল নামগায়েল কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।


১৯৮০ সালে দালাই লামা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করেছিলেন। বর্তমানে স্টোক প্যালেস একটি ঐতিহ্যবাহী হোটেলে রূপান্তরিত হয়েছে।


স্টোক প্যালেসে জাদুঘর ও মন্দির আছে। সেখানে গেলে আপনি দেখবেন রাজকীয় সব আসবাবপত্র। স্টোক প্যালেসের হোটেলটি ৬ ইউনিটে বিভক্ত ও চুল্লি বাগ ভিলায় আরও তিনটি বিভাগে বিভক্ত।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com