আজ ৪ ডিসেম্বর
‘জয় বাংলা’ স্লোগানে প্রতিধ্বনিত চারদিক
প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:৫৭
‘জয় বাংলা’ স্লোগানে প্রতিধ্বনিত চারদিক
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

আজ ৪ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে যুদ্ধের ৯ মাস চলছে। তখন ভারত মিত্রবাহিনী হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করছে। মুক্তিযোদ্ধারা ততদিনে দ্বিগুণ উৎসাহে এগিয়ে চলেছেন জয়ের লক্ষ্য নিয়ে। একের পর এক এলাকা মুক্ত হচ্ছে। চারদিকে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে ‘জয় বাংলা’।


অপরদিকে, মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডাকতে ৪ ডিসেম্বরেই উদ্যোগ নেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রসহ আটটি দেশ জরুরি বৈঠক ডাকার জন্য অনুরোধ জানিয়ে পরিষদের সভাপতি সিয়েরা লিয়নের রাষ্ট্রদূত ইসমাইল টেলর কামারাকে চিঠি দেয়।


এদিকে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের যুদ্ধ ঘোষণার পর বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে বেশ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ সেদিন ছিলেন মুক্তাঞ্চলে।


আনুষ্ঠানিক যুদ্ধের প্রথম দিনেই মুক্তিবাহিনীর সহায়তায় ভারতীয় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। চারদিক থেকে যৌথ বাহিনী এগিয়ে যেতে থাকে। তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল রাজধানী ঢাকা দখল এবং পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করা। প্রথম দিনের যুদ্ধেই বিভিন্ন সেক্টরে পাকিস্তানি বাহিনী বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। পাকিস্তান বিমানবাহিনীর অর্ধেকের বেশি বিমান এদিন বিধ্বস্ত হয়।


একদিকে বিশ্ব মোড়লদের জড়িয়ে পড়া, আরেকদিকে জাতিসংঘ থেকে শুরু করে পরাশক্তিগুলো যার যার অবস্থান স্পষ্ট করতে শুরু করে। জাতিসংঘে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের প্রধান বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী পরিষদের সভাপতির কাছে বৈঠকের শুরুতেই বাংলাদেশের প্রতিনিধিকে বক্তব্য পেশ করতে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা কলকাতায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বাংলাদেশে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর আত্মসমর্পণই তাদের লক্ষ্য। ভারত সরকার বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার স্থাপনে সহায়তা করতে চায়।’


যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব পাস করানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র তখন বৈঠকের পর বৈঠক করছে। সবাই যখন চরম উদ্বেগ আর চিন্তার মধ্যে ছিলেন, তখন এলো খুশির সংবাদ। সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটোর কারণে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদে ভেস্তে যায়। পোল্যান্ডও এ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়।


ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম রাজ্যসভা ও লোকসভায় বিশেষ অধিবেশনে জানান, ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে একযোগে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মোকাবিলা করছে। তারা বাংলাদেশের সাতটি অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। শত্রুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় বড় ফাটল ধরিয়েছে। কয়েকটি শহরের পতন হয়েছে।


দিনে দিনে মুক্তাঞ্চল বাড়ছে


৩ ডিসেম্বরের পর থেকে মুক্ত হতে থাকে একের পর এক এলাকা। ৩ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর সমন্বয়ে গড়া যৌথ বাহিনী ফুলবাড়ীর বেতদিঘী, কাজিয়াল, এলুয়াড়ী, জলপাইতলী, পানিকাটা, রুদ্রানী, আমড়া ও রানীনগর এলাকার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শুরু করে। পাকিস্তানি বাহিনী ফুলবাড়ী শহরে যৌথ বাহিনীর আগমন রোধ করতে শহরের পশ্চিম পাশে ছোট যমুনা নদীর ওপর লোহার সেতুর পূর্ব অংশ ডিনামাইট ব্যবহার করে উড়িয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।


২ নম্বর সেক্টরে কুমিল্লার দেবীদ্বার মুক্ত হয়। আগের দিন যৌথ বাহিনী দেবীদ্বারসহ কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানিদের আক্রমণ করেছিল। ভারতের ২৩ মাউন্টেন ডিভিশনের মেজর জেনারেল আর ডি বিহারের নেতৃত্বে বৃহত্তর কুমিল্লায় অভিযান চলে। মিত্রবাহিনীর একটি ট্যাংকবহর বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া হয়ে দেবীদ্বারে আসে। সে খবর পেয়ে পাকিস্তানিরা রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসে পালিয়ে যায়।


৪ ডিসেম্বর দর্শনা শহর মুক্ত হয়। ৮ নম্বর সেক্টরের মুক্তিবাহিনী ভারতীয় সেনাবাহিনীর সহায়তায় লড়াই করে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার দর্শনার ঘাঁটিতে অবস্থানরত পাকিস্তানি বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে ফেলে। ব্যাপক ক্ষতির মুখে তারা পিছু হটে গেলে মুক্তিবাহিনী এই সেক্টরে ভারতীয় সীমান্তবর্তী চুয়াডাঙ্গার জীবননগরও মুক্ত করে।


জামালপুরের বকশীগঞ্জের ধানুয়া কামালপুর ৪ ডিসেম্বর মুক্ত হয়। কামালপুর সীমান্তঘাঁটির প্রতিরক্ষা অবস্থানে নিয়োজিত পাকিস্তানি সেনারা এদিন যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।


মুক্তিযোদ্ধা ড. আনোয়ার হোসেন সেই যুদ্ধ দিনগুলোর কথা তুলে ধরে বলেন, ‘মিত্রবাহিনী যুক্ত হওয়ার পর থেকে যুদ্ধ নিয়ে আম্তর্জাতিক বোঝাপড়া ভিন্ন রূপ নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের নানা প্রচেষ্টা কেবল যুদ্ধের মাঠেই নয়, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জোটে আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। ডিসেম্বরে আমরা বুঝতে শুরু করি যে, পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে। একে একে নানা এলাকা থেকে মুক্ত হওয়ার খবর আসতে শুরু করে। আর আমরা মুক্তিযোদ্ধারা আরও সাহসী হয়ে উঠি।’


বিবার্তা/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com