সচেতনতার বার্তা নিয়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব হার্ট দিবস
প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:১৬
সচেতনতার বার্তা নিয়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব হার্ট দিবস
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

আজ (২৯ সেপ্টেম্বর) ‘বিশ্ব হার্ট দিবস’। এ বছরের প্রতিপাদ্য হলো ‘ইউজ হার্ট, নো হার্ট’। বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে। বিশ্বে প্রতি বছর ১ কোটি ৭৯ লাখ মানুষ মারা যায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। আর বাংলাদেশে এ সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ। এ হিসাবে, দেশে প্রতি দুই মিনিটে হৃদরোগে মারা যান একজন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, হৃদরোগের কারণে প্রতি বছরে ১ কোটি ৭৯ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। যার মধ্যে ১৯ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহারজনিত কারণে হৃদ্‌রোগে মৃত্যুবরণ করে। আর বাংলাদেশে তামাকজনিত কারণে প্রতি বছর ২ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ হৃদ্‌রোগে মারা যান। অর্থাৎ প্রতি দুই মিনিটে একজন মানুষ মারা যাচ্ছেন হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, দেশে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব ধীরে ধীরে কমলেও বাড়ছে অসংক্রামক ব্যাধি। বিশ্বব্যাপী ৭৮ শতাংশ মানুষের অসুস্থতার কারণ অসংক্রামক ও দীর্ঘমেয়াদি রোগ। এর মধ্যে রয়েছে ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, ক্যানসার, ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) বা শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা ও শ্বাসতন্ত্রজনিত অন্যান্য রোগ। প্রতি বছর দেশে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া রোগীদের মধ্যে অসংক্রামক রোগাক্রান্ত ৬৭ শতাংশ। সংখ্যায় তা পৌনে ছয় লাখ। তাদের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক অর্থাৎ ৩০ শতাংশই হৃদরোগী।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জরিপ বলছে, বাংলাদেশে প্রবীণ মানুষেরা যে সব রোগে ভুগে মারা যান, তার সর্বোচ্চ ২৪ শতাংশই মারা যান হৃদরোগ এবং এ সংক্রান্ত অন্যান্য রোগে।


হৃদরোগ আসলে কী?
আমাদের হৃদ্‌পিণ্ডে যে রক্ত প্রবাহিত হয়, তা হৃদ্‌যন্ত্রে আসে ধমনি দিয়ে। সেটি যখন সরু হয়ে গেলে নালীর ভেতরে রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে। তখন নালীর ভেতর দিয়ে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে হৃদযন্ত্রের পেশীগুলো দুর্বল হয়ে যায়, তখন আর সে অক্সিজেন প্রবাহিত করতে পারে না।
হৃদপিণ্ডের ভেতর দিয়ে অক্সিজেন প্রবাহিত না হতে পারলেই হার্ট অ্যাটাক হয়। হৃদ্‌রোগের প্রাথমিক উপসর্গ খেয়াল না করলে তার ফলে কেবল মৃত্যু নয়, বেঁচে থাকলেও অনেক জটিলতা নিয়ে বাঁচতে হয়।
ফলে বুকে চাপ চাপ ব্যথা, শরীরের অন্য অংশে ব্যথা, মাথা ঘোরা বা ঝিমঝিম করা, ঘাম হওয়া, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসা, বমি বমি ভাব হওয়া এবং বুক ধড়ফড় করা বা বিনা কারণে অস্থির লাগার মতো উপসর্গ দেখলে সতর্ক হোন।
কী বলছেন চিকিৎসকরা?
হৃদ্‌রোগের চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম এবং এক্ষেত্রে শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন ঢাকার জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক নূরুল আলম।


তিনি বলেন, হার্ট সুস্থ রাখতে শারীরিক শ্রম, খাবার দাবার ও ঘুম খুব গুরুত্বপূর্ণ- এটি একজন মানুষকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে হবে এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। সপ্তাহে অন্তত পাঁচদিন ৩০ মিনিট করে হাঁটা দরকার, এতে হার্ট সুস্থ থাকে। তবে হাঁটতে হবে একটু দ্রুতগতিতে, যাতে হার্টের রেট বাড়তে সহায়তা করে। আবার হাঁটা ছাড়াও সাঁতার ও সাইক্লিংয়ের মতো ব্যায়াম হার্টকে সুস্থ রাখে।
কারও যদি হাঁটার সময় বা সুযোগ না থাকে তাহলে বাসায় বা কর্মক্ষেত্রে হেটে সিঁড়ি দিয়ে ওঠা, অফিস বা বাসাতেই হাঁটা কিংবা অফিসে আসার সময় বা বাসায় যাওয়ার সময় গাড়ি একটু দুরে রেখে হেঁটে যাওয়ার পরামর্শ দেন এ চিকিৎসক।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলছে, মোটামুটি মাত্রার শারীরিক পরিশ্রমের জন্য একজন মানুষের হার্ট রেট থাকা উচিত তার সর্বোচ্চ হার্ট রেটের ৬৪ থেকে ৭৬ শতাংশের মধ্যে। আবার উচ্চমাত্রার শারীরিক পরিশ্রমের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ হার্ট রেট থাকা উচিত ৭৭ থেকে ৯৩ শতাংশ।
তবে শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় উচ্চমাত্রার পরিশ্রম সবার জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে। এ বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে হৃদ্‌রোগের সঙ্গে ডায়াবেটিস ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই হৃদ্‌রোগ থেকে বাঁচতে হলে প্রতিরোধ করতে হবে ডায়াবেটিস। প্রি-ডায়াবেটিসের সচেতনতা থেকে হৃদ্‌রোগ প্রতিহত করা সম্ভব—এমনটাই বলেন ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অধ্যাপক এম এ রশিদ।
তিনি বলেন, হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায় হলো সুশৃঙ্খল জীবনযাপন এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভাস। যেটা ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। হৃদ্‌রোগের ঝুঁকিগুলোর মধ্যে ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ অন্যতম। এ রোগগুলো নিজেও একটা রোগ আবার বিভিন্ন রোগকে প্রভাবিতও করে। ডায়াবেটিস রোগীদের চারগুণ বেশি হৃদরোগের ঝুঁকি রয়েছে। অতিরিক্ত ওজন, ধূমপান, স্থূলতাও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
বায়ু দূষণও হৃদরোগের অন্যতম কারণ
উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং ধূমপান আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু এগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বায়ু দূষণ।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এতোদিন ধরে হৃদ্‌রোগ ‘লাইফ স্টাইল ডিজিজ’ নামে পরিচিত ছিল। অর্থাৎ স্বাস্থ্যসম্মত নয় এমন জীবনযাপন পদ্ধতি হৃদ্‌রোগে ভূমিকা রাখে বলা হয়েছিল। এখন বিজ্ঞানীরা বলছেন, শুধু জীবনযাপন পদ্ধতি নয়, বায়ুদূষণও হৃদ্‌রোগের প্রকোপ বাড়াচ্ছে।
ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশনের তথ্য বলছে, হৃদ্‌রোগের মৃত্যুর ২৫ শতাংশের পেছনে আছে বায়ুদূষণ। বায়ুদূষণজনিত হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে বছরে সারা বিশ্বে ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।


প্রতিকার কোন পথে?
হৃদ্‌রোগ থেকে বাঁচতে হলে এর প্রতিকার সম্পর্কে জানা জরুরি। হৃদ্‌রোগের প্রধান শত্রু হচ্ছে ধূমপান। তাই ধূমপান থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে। ধূমপানের মতো মাদকও হৃদ্‌রোগের আরেকটি কারণ, তাই মাদককে না বলুন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ হলো, কিশোর বয়সে বিশেষ করে ৫-১৭ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিদিন প্রায় এক ঘণ্টা ভালোভাবে শারীরিক পরিশ্রম করা দরকার। ওই বয়সে পেশী ও হাড়কে শক্তিশালী করে এমন কোন ব্যায়াম বা শরীরচর্চা সপ্তাহে অন্তত তিন বার করা উচিত। এক্ষেত্রে খেলাধুলা ভালো ভূমিকা পালন করে।
আর আঠার বছরের বেশি বয়সীদের আরও উচ্চমাত্রার শারীরিক পরিশ্রম করা দরকার। তাদের মাঝারি ও উচ্চমাত্রার ব্যায়াম বা শরীর চর্চার মতো কাজে বেশি সময় দিতে হবে।
একই সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, হাড় শক্তিশালী করে এমন ব্যায়াম সপ্তাহে কমপক্ষে দুবার করা দরকার। তবে বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে হাটাঁহাটিই সবচেয়ে নিরাপদ।


বিবার্তা / রাসেল/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com