সংসদে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনে বিল
প্রকাশ : ০৮ জুন ২০২৩, ২০:৫৩
সংসদে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনে বিল
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

ব্যাংকের পরিচালক বা নির্বাহী কর্মকর্তাদের অনিয়মে আর্থিক ক্ষতি পূরণে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবে ব্যাংক। এ ধরণের বিধান রেখে ব্যাংক কোম্পানী (সংশোধন) বিল ২০২৩ বিল সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে।


৮ জুন, বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিলটি সংসদে উপস্থাপন করেন। পরে তা সাতদিনের মধ্যে বিলটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।


এর আগে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বিলটি উত্থাপনে আপত্তি জানালে তা কণ্ঠ ভোটে নাকচ হয়ে যায়।


আপত্তি তোলার সময় ফখরুল ইমাম অভিযোগ করেন, আইএমএফের শর্ত মেনে সংশোধনী বিলটি আনা হয়েছে। সংসদে কোনো কিছু গোপন করা উচিত না।


তবে অর্থমন্ত্রী বলেন, কারো পরামর্শে এই সংশোধনী আনা হচ্ছে না। আধুনিক ও সময়োপযোগী ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কিছু সংশোধন আনা হচ্ছে। পরে কণ্ঠভোটে ফখরুল ইমামের আপত্তি নাকচ হলে বিলটি সংসদে তোলেন অর্থমন্ত্রী।


বিলে বলা হয়, কোনো ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একটি একক পরিবারের সদস্যের বাইরে তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বা নিয়ন্ত্রণাধীন সর্বোচ্চ দুটি প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির পক্ষে প্রতিনিধি পরিচালক থাকতে পারবে। তবে কোনো ব্যাংকের পর্ষদে কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির পক্ষে একজনের অধিক ব্যক্তি প্রতিনিধি পরিচালক নিযুক্ত হতে পারবে না।


আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংকের পর্ষদে প্রাকৃতিক ব্যক্তিসত্তা বিশিষ্ট ব্যক্তি শেয়ারহোল্ডারের পক্ষে অপর কোনো ব্যক্তি প্রতিনিধি পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হতে পারবে না। অর্থাৎ, কোনো ব্যক্তি ব্যাংকের শেয়ারের মালিক হলে তার প্রতিনিধি হিসেবে অন্য কোনো ব্যক্তিকে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া যাবে না।


বিদ্যমান আইনে কোনো ব্যাংক পরিচালক একই সময়ে অন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক থাকতে পারবেন না। তবে এই আইন কার্যকর হবার পর সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে বীমা কোম্পানির পরিচালক হওয়ার সুযোগ রয়েছে। যদিও ২০১০ সালে প্রণীত বীমা আইন অনুযায়ী কোনো বীমা কোম্পানির পরিচালক ব্যাংক কোম্পানির পরিচালক হতে পারেন না। সংশোধনী খসড়ায় কোনো ব্যাংক পরিচালকের একই সঙ্গে বীমা কোম্পানির পরিচালক পদে থাকার সুযোগ বাতিল করা হয়েছে।


এছাড়া, কোনো পরিচালক ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোম্পানির পরিচালক হতে পারবেন কিনা, সে বিষয়ে বিদ্যমান আইনে কিছু বলা নেই। কিন্তু একজন পরিচালক আরও কোন কোন কোম্পানিতে পরিচালক থাকতে পারবেন না বলে বিলে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি ব্যাংকের পরিচালক হলে একই সময়ে অন্য কোনো ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা কোম্পানি বা এসব কোম্পানির কোন সাবসিডিয়ারি কোম্পানির পরিচালক থাকতে পারবেন না তিনি।


এছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিবেচনায় এমন কোন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান যা ওই ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা বীমা কোম্পানির ওপর নিয়ন্ত্রণ বা যৌথ নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাব বিস্তার করে এমন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক থাকবে না বলেও বিলে উল্লেখ করা হয়েছে।


বিদ্যমান আইনে বিকল্প পরিচালক নিয়োগের সুযোগ থাকলেও তার মেয়াদকাল ও বিকল্প পরিচালকদের যোগ্যতা সম্পর্কে কিছু বলা নেই। নতুন আইনে এসব বিষয় সুনির্দিষ্ট করা হচ্ছে। খসড়া আইনে বলা হয়েছে, কোনো পরিচালক কমপক্ষে নিরবচ্ছিন্নভাবে তিন মাস বিদেশে অবস্থান করলে তার অনুপস্থিতির কারণে পর্ষদ চাইলে মূল পরিচালকের বিপরীতে বছরে সর্বোচ্চ একবার একজন বিকল্প পরিচালক নিযুক্ত করতে পারবে। পরিচালক নিয়োগের যেসব শর্ত রয়েছে, সেগুলো বিকল্প পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।


খসড়া আইনে বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংক-কোম্পানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার স্বার্থে তার পর্ষদ এবং পর্ষদ কমিটিগুলোর কর্মপরিধি বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সব সময় নির্দেশনা জারি করতে পারবে।


নতুন আইনে ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোর ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা পাবে। এতে নতুন ধারা যোগ করে বলা হয়েছে, যে উদ্দেশ্যেই ব্যাংক কোনো সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠন করুক না কেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত হার বা পরিমাণের বেশি সাবসিডিয়ারি কোম্পানির মূলধন হিসেবে বিনিয়োগ করতে পারবে না।


নতুন আইনের আওতায় সাবসিডিয়ারি কোম্পানির পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার যোগ্যতা ও উপযুক্ততার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার জারি করবে।


ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিদেশ যাওয়া, বাড়িগাড়ি ও কোম্পানি নিবন্ধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ তাদের রাজনৈতিক দলের কমিটিতে না রাখার বিধান রেখে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ অধিকতর সংশোধন করতে একটি বিল সংশোধন আনা হয়েছে। এই বিলে এক পরিবার থেকে তিনজনের বেশি ব্যাংক পরিচালক হওয়া যাবে না এরকম বিধান রয়েছে এতে।


২০১৯ সালে বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এই আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়ে পরের বছরের মধ্যে খসড়া তৈরি করা হলেও, তা চূড়ান্ত করতে খুবই ধীরগতিতে কাজ চলছিল। গত ফেব্রুয়ারিতে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরের সময় আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে খসড়া আইনটিকে পার্লামেন্টে বিল আকারে উত্থাপনে আইএমএফ শর্ত দেয়ার পর গত ২৮ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা খসড়াটির চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে।


আইনি অস্পষ্টতার জায়গাগুলো দূর করতে এবং মন্দ ঋণের লাগাম টেনে ধরার জন্য অতি-জরুরি এই সংশোধনীগুলো বছরের পর বছর ধরে প্রক্রিয়াধীন ছিল। অংশীজনের মতামত নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২০ সালেই খসড়া তৈরি করে। এতে ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১’ এর বেশ কয়েকটি বিধানের পরিবর্তন ও কিছু নতুন বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অবশ্য বিদ্যমান আইনেও ঋণখেলাপিদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিধিনিষেধ আছে।


সংসদে উপস্থাপিত বিলে বলা হয়েছে, ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা শনাক্ত করা ও চূড়ান্ত করার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুটি পৃথক কমিটি গঠন করবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সময়ে সময়ে ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপির তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাবে।


তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান চাইলে ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে আপিল করতে পারবে ও এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। এছাড়া, ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞাসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com