মাটি ভরাট
চলছে হাতিরঝিল ধ্বংসের কর্মযজ্ঞ!
প্রকাশ : ১২ মে ২০২৩, ১৪:০৪
চলছে হাতিরঝিল ধ্বংসের কর্মযজ্ঞ!
সোহেল আহমদ
প্রিন্ট অ-অ+

রাজধানী ঢাকার দৃষ্টিনন্দন জলাধারগুলোর অন্যতম হাতিরঝিল। শহরের শ্রীবৃদ্ধি, জলাবদ্ধতা ও বন্যা প্রতিরোধ, ময়লা পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ছিলো হাতিরঝিল প্রকল্পের অন্যতম মূল লক্ষ্য। প্রকল্পটি চালুর পর পানি প্রবাহে বাধা হয়ে ঝিলের মধ্যে দাঁড়িয়েছিল অবৈধভাবে নির্মিত বিজিএমইএ'র ১৬ তলা ভবনটি। যদিও তা পরে ভেঙে ফেলা হয়েছে। তবে এবার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিয়ার বা খুঁটি বসানো হবে এই সূত্রে লেকটির একটি অংশের বালু ফেলে ভরাটের কাজ চলছে।



জলাধারের ওপর উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ পরিহার করতে হবে মর্মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুশাসন রয়েছে। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, জলাধার ভরাট করে এসব উন্নয়ন প্রকল্প সরকারের উন্নয়ন মহাপরিকল্পনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এছাড়া লেকের এই অংশটি ভরাট হলে জলাধারটির স্বাভাবিক সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পানিপ্রবাহ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।


তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিয়ারের কারণে হাতিরঝিলের পানিপ্রবাহে কোনো সমস্যা হবে না। আর পিয়ার বসানো শেষে ভরাট করা মাটিও সরিয়ে ফেলা হবে। তবে কাজ শেষে আদৌ তার বাস্তবায়ন হবে কিনা এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন নগরবাসী।


ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বাংলাদেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প। শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর থেকে শুরু হয়ে কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ি হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী এলাকায় গিয়ে শেষ হবে এই প্রকল্প। রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনের জন্য এটিই হচ্ছে সরকার কর্তৃক গৃহীত সবচেয়ে বড় প্রকল্প।


বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি নেয়া হয়। প্রকল্পটি সম্পন্ন করার পরিকল্পনার সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর তারিখে। একাধিক সংশোধনের পর, প্রকল্পটি সম্পন্নের সময়সীমা ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সংযোগ সড়কসহ এটির দৈর্ঘ্য ৪৬.৭৩ কিলোমিটার। যার মধ্যে প্রধান অংশ ১৯.৭৩ কিলোমিটার এবং ৩১টি র‌্যাম্পের ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রবেশ ও প্রস্থান পথ রয়েছে। এক্সপ্রেসওয়েটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা।


প্রায় ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ এক্সপ্রেসওয়ে থেকে চাইলে বের হয়ে ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টেও যাওয়া যাবে। এজন্য ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তৈরি করা হচ্ছে ৩১টি র‌্যাম্প বা সংযোগ সড়ক। এর মধ্যে একটি র‌্যাম্প হবে এফডিসি মোড় থেকে পলাশী পর্যন্ত। এক্সপ্রেসওয়ে থেকে এ র‌্যাম্পে ওঠা ও নামার পথের জন্য হাতিরঝিলে অন্তত ৪০ টি পিয়ার বসানো হবে।


নকশা অনুযায়ী, হাতিরঝিল-পলাশী র‌্যাম্পের একটি অংশ এফডিসি মোড় থেকে হাতিরঝিল লেক হয়ে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের পেছন দিক দিয়ে পলাশীর দিকে যাবে।



সরেজমিন দেখা যায়, হাতিরঝিল লেকের নিউ ইস্কাটন এলাকার একটি অংশে বসবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের অন্তত ৪১টি পিয়ার। আর তাই কাওরানবাজারে রেল ক্রসিং লাগোয়া কালভার্ট থেকে শুরু করে নিউ ইস্কাটনের বিয়াম ফাউন্ডেশন পর্যন্ত লেকের পাশ ঘেঁষে জায়গাভেদে অন্তত ৪০-৫০ ফুট বালু ফেলে ভরাটের কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা।


এদিকে ঢাকা মহানগরীতে চলমান সড়ক, রেল ও নৌ পরিবহন অবকাঠামো সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের জন্য গঠিত কমিটির প্রথম সভা গত সোমবার অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম
চলমান প্রকল্প সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রাজউক, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রতিনিধিদের সাথে সভা করেন। সভায় অংশ নিয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) জানায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী হাতিরঝিলের পিয়ার বসিয়ে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হলে তা ঝিলের সৌন্দর্য নষ্ট হবে।


জানতে চাইলে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী (প্রজেক্ট অ্যান্ড ডিজাইন) এএসএম রায়হানুল ফেরদৌস বিবার্তাকে বলেন, 'এটা (হাতিরঝিলে স্থাপনা নির্মাণ) আসলে কোর্টে বিচারাধীন আছে। এজন্য আমরা সরাসরি অনুমতি দিতে পারব না। আবার যেহেতু এটা একটা ন্যাশনাল প্রজেক্ট এজন্য কাজ বন্ধ রাখতেও পারব না।


তিনি বলেন, বিষয়টা আসলে মাটি ভরাট না ওয়ার্কিং প্লাটফর্ম করতে গেলে এটাক করতে হয়। ওয়ার্কিং প্লাটফর্ম শেষ হয়ে গেলে মাটি সরিয়ে ফেলা হবে।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বিবার্তাকে বলেন, আমাদের যে জলাধার আইন আছে- জলাধার আইন অনুযায়ী জলাধার ভরাট করা যাবে না। জলাধারের মধ্যে যদি বসাতে হয় নদী-নালা, খাল-বিল, সাগর-মহাসাগরে পিয়ার বসানো হয়- সেগুলো ভরাট করে বসানো হয় না। পিয়ার বসানোর জন্য জলাধার ভরাট করতে হয় আমরা কখনো দেখি নাই। এখানে অন্য যদি কোনো কারণ থাকে...। পিয়ার বসাতে জলাধার ভরাট করতে হয় এটা অযৌক্তিক কথা। পদ্মা নদীতেও পিয়ার বসেছে। এটা কোনো যুক্তি না।


ওয়ার্কিং প্লাটফর্ম করার পর ভরাট করা মাটি সরিয়ে ফেলা হবে- রাজউকের এমন মন্তব্যের ব্যাপারে তিনি বলেন, এটা হচ্ছে আরো দুইশ' বছর আগের কথা। কেউ যদি বলে পিয়ার বসাতে হলে এভাবে ভরাট করতে হয় এই শব্দ কোনোভাবেই টিকে না।


তিনি বলেন, হাতিরঝিলের ওপর দিয়ে পলাশী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এ লাইন গেলে লেক ধ্বংসের পাশাপাশি আশপাশের রাস্তা, পরিবেশও নষ্ট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।


বিবার্তা/সোহেল/রোমেল/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com