বঙ্গবাজারে ১০ তলা ভবন নির্মাণ: ব্যবসায়ীদের ভাবনা
প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৪২
বঙ্গবাজারে ১০ তলা ভবন নির্মাণ: ব্যবসায়ীদের ভাবনা
সোহেল আহমদ
প্রিন্ট অ-অ+

২০১৯ সালে বঙ্গবাজারে ঝুঁকিপূর্ণ টিনের ভবনগুলো ভেঙে স্টিলের অবকাঠামো দিয়ে ১০ তলা ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। সেই সময়ে নকশা প্রণয়নের পাশাপাশি স্টিলের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ২০২০ সালের ৬ জানুয়ারি দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরপর ঠিকাদারকে কার্যাদেশও দেয়া হয়। কিন্তু বঙ্গবাজার দোকান মালিক সমিতির নেতারা উচ্চ আদালতে রিট করার কারণে সেই নির্মাণকাজ আর শুরু করা যায়নি।


গত ৪ এপ্রিল সকাল ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজারে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিট, সেনা, বিমান ও নৌ-বাহিনীর যৌথ তৎপরতায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু এর আগেই আগুনে পুড়ে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় পুরো বঙ্গবাজার। আগুনে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের বঙ্গবাজার মার্কেট, মহানগর মার্কেট, আদর্শ মার্কেট ও গুলিস্তান মার্কেটের সব দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পাশের এনেক্সকো টাওয়ার, বঙ্গ ইসলামিয়া এবং বঙ্গ হোমিও মার্কেটও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।



এ ঘটনার পরদিন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এক আয়োজনে অংশ নিয়ে বঙ্গবাজারে সুপরিকল্পিত মার্কেট তৈরিতে বাধা দেয়ার বিষয়ে সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বঙ্গবাজার মার্কেটে একবার ১৯৯৫ সালে আগুন লাগে। এরপর আবার ২০১৮ সালে আগুন লাগে। তারপর আমরা এখানে সুপরিকল্পিত মার্কেট করার প্রকল্প গ্রহণ করি। তখন বেশ কিছু লোক বাধা দেয়। শুধু বাধা নয়, একটা রিটও করে। পরে হাইকোর্ট এটাকে স্থগিত করে দেয়।



এরপর ৬ এপ্রিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস সাংবাদিকদের জানান, আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজধানীর বঙ্গবাজারে নতুন পাইকারি মার্কেট নির্মাণ করা হবে। তিনি বলেন, বঙ্গবাজারে বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা আগেই ছিল। মামলার কারণে সেটা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা এখন বিপর্যয়ের মধ্যে আছেন, তাদের কিছুদিন সময় দিতে হবে। তারা যাতে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারেন সেজন্য অনুদান দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করব।



প্রধানমন্ত্রীকেও ভবনের নকশা দেখাবেন উল্লেখ করে শেখ তাপস বলেন, পাইকারি বাজার হিসেবেই এটি থাকবে এবং প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের নতুন ভবনে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।



সূত্রে জানা গেছে, এমন অবস্থায় বঙ্গবাজরে দশ তলা মার্কেট নির্মাণের ব্যাপারে ব্যবসায়ী নেতারা সম্মত হয়েছেন। ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, ব্যবসায়ীদের স্বার্থে রিট করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীও চান বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণ হোক। তাই রিট তুলে নেয়ার উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে। এদিকে বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভবন নির্মাণ হলে তাদেরকে যেন অস্থায়ীভাবে কোথাও বসার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়।


ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বঙ্গবাজারে ১০ তলা মার্কেট নির্মাণের বিষয়ে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের দোকান মালিক এবং ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। বৈঠক নতুন করে মার্কেট নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এছাড়া ভবন নির্মাণকালীন সময়ে ব্যবসায়ীরা কোথায় বসবেন সে সব বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।


এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকন মালিক সমিতির সভাপতি মো. নাজমুল হুদাকে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।


বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীও চান এখানে বহুতল ভবন নির্মাণ হোক। অগ্নিকাণ্ডের পর থেকেই এ বিষয়ে মেয়রও কথা বলছেন। ব্যবসায়ীদের স্বার্থে আমরা রিট করেছিলাম। আলোচনা সাপেক্ষে ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে।


দশতলা ভবন নির্মাণের বিষয়ে কবে নাগাদ বৈঠকটি হতে পারে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের বিবার্তাকে বলেন, মেয়রের সঙ্গে ব্যবসায়ী নেতারা কবে বৈঠক বসবেন এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তারিখ হলে আমরা জানিয়ে দিব।


তিনি বলেন, আগের নকশা এবং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আলোচনা হচ্ছে। ভবন নির্মাণকালীন সময়ে ব্যবসায়ীরা অস্থায়ীভাবে কোথায় বসবেন এসব বিষয়েও বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।


গত ১২ এপ্রিল থেকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা ছোট ছোট চৌকি বসিয়ে ব্যবসা করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে সরেজমিন বঙ্গবাজার ঘুরে দেখা যায়, খোলা আকাশের নিচে শত শত চৌকি থাকলেও মাত্র ৭ জন ব্যবসায়ী কাপড় নিয়ে বসেছেন। তীব্র রোদের কারণে কেউ কেউ মাটিতে ছাতা পুঁতে নিয়েছেন।


বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের জায়গা ১০ তলা ভবন নির্মাণের বিষয়ে জানেন কিনা? জানতে চাইলে বঙ্গবাজার ইউনিটের তিশা গার্মেন্টসের স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন বিবার্তাকে বলেন, সিটি করপোরেশন-ব্যবসায়ী কম্প্রোমাইজ হলে ভবন হবে, এর আগে হবে না। কতদিনের মধ্যে করে দিবে এইটা সুস্পষ্টভাবে বলতে না পারায় রিট হয়েছে। এখনো কতদিনের মধ্যে (ভবন করে) দিবে কাগজে বললে, ভবন হবে।


এখন পর্যন্ত কোনো সহযোগিতা পাননি এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, আগুনে পুড়ে তো সব শেষ হয়ে গেছে। সরকার অনুদান দিব বললো। কিন্তু এখনো তো এক টাকাও পাই নাই।


আরমান ফ্যাশনের মো. খলীল বিবার্তাকে বলেন, এর আগেও মার্কেট করার কথা হইছে। কিন্তু হয় নাই। যারা ক্ষমতায় আহে মার্কেট তো তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। সাদেক হোসেন খোকা থাকার সময়ে সয়েল টেস্ট, নকশা হইছে। কথা ছিল এক ফ্রেম, দুই ফ্রেম করে ভাঙবে একটা করে তুলবে। এভাবে প্ল্যান হইছিল। সাঈদ খোকন আসার পর এভাবেই কথা হইছে। প্রথমে রাজি হইছে। হঠাৎ করে আবার বলে আমরা সিটির আন্ডারে করব। পরে আর হইল না। পুড়ার পর থাইকা আবার নতুন মার্কেটের কথা চলছে। এখন হবে কিনা দোকান মালিক সমিতি আছে, তারা দেখব।


তিনি বলেন, হুনি এই ফান্ডে টাকা আছে, ওই ফান্ডে টাকা আছে। দোকানে আমার ৭৫ লাখ টাকার মাল পুড়েছে। এখনো এক টাকাও পাই নাই। সরকার যদি কোনো সহযোগিতা করে লস কাটাই উঠব।


বঙ্গবাজার ইউনিটে ইমন ও তালহা গার্মেন্টস নামে দু'টি দোকান ছিল মো. ইমনের। চৌকিতে কাপড় নিয়ে তপ্ত রোদে বসেছিলেন তিনি। তিনি বিবার্তাকে বলেন, ভবন করতেও তো সময় লাগে। ভবন নির্মাণ হলে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের বসার যেন ব্যবস্থা করে দেয়া হয়।


এমনিতে বেচাকেনা নাই। জীবন বাঁচানোর তাগিদেও তো বসতে হবে। আর কিছু করার নাই। বসতে না পারলে তো আমরা আর উঠেই দাঁড়াতে পারব না।


বিবার্তা/সোহেল/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com