পিনাকীসহ ২ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট
প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:১৩
পিনাকীসহ ২ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

মিথ্যা তথ্য ও গুজব ছড়ানোর অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য ও ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মফিজুর রহমান আশিককে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বিভাগ।


একই সঙ্গে সুনির্দিষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ না পাওয়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার উপপ্রেস সচিব মুশফিকুল ফজল আনসারীকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করে সম্প্রতি এ প্রতিবেদন দাখিল করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিটিটিসির উপপরিদর্শক মোহাম্মদ রাহাত হোসেন।


২৮ এপ্রিল, রবিবার আদালতে রমনা থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।


রাজধানীর রমনা মডেল থানার এ মামলায় প্রতিবেদনে পিনাকী ভট্টাচার্য পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছেন।


জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে বদলি করা হয়েছে।


এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিটিটিসি উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ রাহাত হোসেন বলেন, মামলার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে সত্য হওয়ায় দুজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছি। তবে সুনির্দিষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ না পাওয়ায় একজনকে অব্যাহতির সুপারিশ করেছি। সাক্ষীরা প্রকাশ্য আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে ঘটনা প্রমাণ করবেন।


আদালত সূত্রে জানা যায়, গেলো ৭ মার্চ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিটিটিসি উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ রাহাত হোসেন আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে ১৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। গেলো বৃহস্পতিবার মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে বদলি করা হয়েছে। এ মামলায় আসামি মফিজুর জামিনে রয়েছেন।


মামলার চার্জশিটে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর পরিচিত এবং তারা দেশের সার্বভৌমত্বকে আঘাত করার প্রয়াসে বিভিন্ন সময়ে উসকানিমূলক তথ্য প্রচারে সর্বদা লিপ্ত থাকে। বর্তমান সময়ে আসামি পিনাকী ভট্টাচার্য তার ফেসবুক পেজ ও আইডিতে বিভিন্ন সময়ে উসকানিমূলক মিথ্যা-ভিত্তিহীন তথ্য গুজব আকারে প্রচার করছে। তিনি সামাজিক মাধ্যমে বর্তমান সময়েও দেশ ও দেশের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রয়াসে গুজব ও মিথ্যা তথ্য সম্প্রচার করছে। যা উসকানিমূলক ও এজাহারের বিষয় বস্তুর সদৃশ্য কর্মকাণ্ডকে প্রতিনিধিত্ব করে।


চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামি মো. মফিজুর রহমান আশিক ইচ্ছাকৃতভাবে নিজ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে ডিজিটাল উপায়ে ফেক আইডি দিয়ে তার প্রেরিত ও প্রকাশিত ছবিগুলো মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ও সুনাম ক্ষুন্ন হয় এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলেন। যা পরবর্তীতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার উপক্রম হয়। এই ছবি মোবাইলে ধারণ, প্রেরণ ও প্রচার করে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রেরণ করে বিভ্রন্তিকর ও প্রোপাগান্ডামূলক মিথ্যা পোস্ট করা ও প্রচার প্রচারণায় যুক্ত থাকায় ও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৪/২৫/৩১/৩৫ ধারার অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়।


আসামি মো. মফিজুর রহমান আশিক ছবিসমূহ প্রচার প্রচারণার অংশ হিসেবে তার সহযোগী পিনাকী ভট্টাচার্যকে ফেসবুকে প্রেরণ করেন। উক্ত বিষয় সম্পর্কে উভয়ের মধ্যে ফেসবুক আইডিতে চ্যাটিংয়ের তথ্য পাওয়ায় সহযোগী হিসেবে পিনাকীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫/৩১/৩৫ ধারার অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়। অপর আসামি মুশফিকুল ফজল আনসারীর বিরুদ্ধে মামলা প্রমাণে সহায়ক কোনও সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি।


জানা যায়, ২০২২ সালের ১৫ অক্টোবর রাজধানীর রমনা থানায় পিনাকী ভট্টাচার্যসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বিভাগের উপ-পরিদর্শক এম আব্দুল্লাহিল মারুফ বাদী হয়ে মামলা করেন। এ মামলায় মফিজুর রহমান ও মুশফিকুল ফজল আনসারী নামের অপর দুজনকে আসামি করা হয়।


মামলায় বলা হয়, ২০২২ সালের ১৪ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেয়া একটি পোস্ট কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের নজরে আসে। ওই পোস্টে পুলিশ সদস্যদের সম্পর্কে বিকৃত তথ্য প্রচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। ওই ফেসবুক পোস্টের সূত্র ধরে ১৫ অক্টোবর পল্লবীর বাসা থেকে মফিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে পুলিশ মফিজুরের দুটি মুঠোফোন জব্দ করে।


মামলা বলা হয়, আসামি মফিজুর রহমান ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এই তালিকায় আছেন পিনাকী ভট্টাচার্য ও মুশফিকুল ফজল আনসারী। মিরপুরে পুলিশ বাহিনীর একটি অভিযানের ঘটনাকে বিকৃতভাবে প্রচার করা হয়। সেই তথ্য ও ছবি পাঠানো হয় পিনাকী ভট্টাচার্যের ফেসবুক মেসেঞ্জারে। আলামত হিসেবে নাগরিক টিভি ও আমার দেশ পত্রিকার অনলাইনের একটি করে প্রতিবেদন এবং মুশফিকুল ফজল আনসারীর ফেসবুক মেসেঞ্জারে পিনাকী ভট্টাচার্যের কাছে পাঠানো কয়েকটি ছবি ও কথোপকথন তুলে ধরা হয়েছে। সেখানকার আলাপচারিতায় মুশফিকুলকে পিনাকীর কাছে বইয়ের তালিকা চাইতে দেখা গেছে।


মামলায় বলা হয়, মফিজুর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া তথ্য প্রচার করেছেন। পরে সেই তথ্য তিনি বিদেশে অবস্থানরত পিনাকী ভট্টাচার্য, মুশফিকুল ফজল আনসারীসহ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে পাঠিয়েছেন। পরে সেগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে। মফিজুর রহমানসহ অন্যরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। এর মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশঙ্কা হয়।


মামলার কাগজপত্রের তথ্য বলছে, মফিজুর রহমানের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালীর খুদুখখালী গ্রামে। চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনা করা পিনাকী ভট্টাচার্য একটি ওষুধ কোম্পানি পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কয়েক বছর ধরে তিনি বিদেশে অবস্থান করছেন। পিনাকী ভট্টাচার্য নানা বিষয়ে সরকারের সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে থাকেন। সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ফ্রান্সের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে পিনাকী ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দিয়েছিলেন। তাতে তিনি বলেছিলেন, পিনাকী ভট্টাচার্য বিদেশে অবস্থান করে সরকার, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বঙ্গবন্ধু পরিবারকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করছেন।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com