
‘আমাদের এখানে অনেকবার রাষ্ট্রের বদল হয়েছে, কিন্তু সমাজের পরিবর্তন হয়নি। ফ্যাসিবাদের সৃষ্টি হয়েছে। এ থেকে মুক্তির জন্য প্রয়োজন সাংস্কৃতিক জাগরণ। সেখানে বই একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। এ জন্য বইকে কেন্দ্রে রেখে সারা দেশে সাংস্কৃতিক চর্চাকেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে।’ এ মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট লেখক ও সমাজচিন্তক ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমিতে প্রথমা প্রকাশন আয়োজিত বিজয় বইমেলার অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
এইচএসবিসি ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় বইমেলা শুরু হয়েছে গত বৃহস্পতিবার, চলবে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। বিকেলে মেলার মঞ্চে থাকবে আলোচনা, সংগীত এবং আবৃত্তি নিয়ে মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘বই আমাদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বই মনুষ্যত্বকে রক্ষা করে। বইয়ের মতো বন্ধু আর নেই। বই কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করে না।’ তিনি বলেন, পৃথিবীতে পুঁজিবাদের বিকাশ এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। একক মালিকানার প্রভাবে সমাজে একটি প্রবল বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের মানবিকতা, মনুষ্যত্ববোধ বিপন্ন হয়েছে। ফলে বইও এখন ভালো অবস্থায় নেই। বিশ্বজুড়েই পাঠকের সংখ্যা কমে গেছে।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্মৃতিচারণা করে বলেন, তাঁদের শৈশবে–তারুণ্যে দেখেছেন ঢাকার প্রতিটি মহল্লায় পাঠাগার ছিল। সেখানে বিভিন্ন ধরনের ভালো ভালো বই পাওয়া যেত। সামাজিক পরিবর্তনের জন্য আবার পাঠাগার বিস্তারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, পাঠাগারে যাওয়ার জন্য পাঠকদের আগ্রহী করতে হবে। সে জন্য পাঠাগারকে কেন্দ্র করে সংগীত, আবৃত্তি, আলোচনা, চিত্রকলা, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, নাটক—সব মিলিয়ে একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে।
বিজয়ের মাসে প্রথমা প্রকাশনের বইমেলার আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান। পাঠকদের তিনি মেলায় আসতে আমন্ত্রণ জানান।
জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক ও কথাসাহিত্যিক আফসানা বেগম বলেন, ‘প্রথমা প্রকাশন মানুষের মনে প্রভাব বিস্তার করেছে। তাদের বইয়ের প্রতি পাঠকদের বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। জনসাধারণের পাঠাভ্যাস বাড়ানো যতটা প্রয়োজন, বোধকরি ততটা বৃদ্ধি হচ্ছে না। তবে আমরা হাল ছাড়ছি না। আমরা সারা দেশে বইমেলা আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছি। প্রথমা প্রকাশন সেসব মেলায় অংশ নেয়। এর পাশাপাশি তারা নিজেরাও রাজধানীতে বিজয় বইমেলাসহ বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানে, নানা দিবস বা উপলক্ষকে কেন্দ্র করে যে বইমেলার আয়োজন করে, তা পাঠাভ্যাস বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।’
প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক কবি সাজ্জাদ শরিফ প্রথমা প্রকাশনের কার্যক্রম সম্পর্কে আলোকপাত করে বলেন, ২০০৯ সালে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই একাত্তরের চিঠি প্রকাশের মধ্য দিয়ে প্রথমার যাত্রা শুরু। এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ লেখকের ৮৯০টি বই প্রকাশিত হয়েছে প্রথমা থেকে। এতে মুক্তিযুদ্ধসহ ইতিহাস, রাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, ধর্ম, মননশীল গবেষণা প্রবন্ধসহ সৃজনশীল সাহিত্যের বিপুল বৈচিত্র্য রয়েছে।
সূচনা বক্তব্য দেন প্রথমা প্রকাশনের প্রধান সমন্বয়ক ও লেখক মশিউল আলম। অনুষ্ঠানের শুরুতেই দর্শক-শ্রোতাদের ‘ভেবো না গো মা তোমার ছেলেরা’, ‘নাহি ভয় বল নাহি ভয়’ এবং ‘ও আমার দেশের মাটি’ গান তিনটি গেয়ে শুনিয়েছেন শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল।
বইমেলায় প্রথমার বই ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ, অন্যান্য প্রকাশনার বই ২৫ শতাংশ এবং বিদেশি বই ৫ শতাংশ মূল্যছাড়ে পাওয়া যাচ্ছে।
আজকের অনুষ্ঠান
আজ শনিবার অনুষ্ঠান শুরু হবে বিকেল চারটায়। আলোচনা করবেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও অধ্যাপক সামিনা লুৎফা। গান শোনাবেন শিল্পী লাইসা আহমদ লিসা।
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]