
সশ্রদ্ধ চিত্তে, গান-কবিতা-আলোচনা ও স্মৃতিচারণে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য, সাবেক সভাপতি, শিল্পী-সংগ্রামী গোলাম মোহাম্মদ ইদুকে স্মরণ করেছে উদীচী।
শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) বিকেল ৪টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে স্মরণ সভা আয়োজন করে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
সভায় উপস্থিত ছিলেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদসহ ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন শাখা সংসদের শিল্পী-কর্মীরা।
এতে আরও উপস্থিত ছিলেন উদীচী ছাড়াও জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে যেসব সংগঠনের সঙ্গে গোলাম মোহাম্মদ ইদু সম্পৃক্ত ছিলেন সেসব সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
শোকসঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় স্মরণসভার কার্যক্রম। এরপর উদীচীর শিল্পীরা সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশন করেন ‘তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে’ ও ‘সংগ্রাম থেমে গেছে বলে কে, বলে কে’ গান দুটি। এরপর গোলাম মোহাম্মদ ইদুর প্রতিকৃতিতে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তির পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানানো হয়। পরে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমানের সভাপতিত্বে শুরু হয় আলোচনা পর্ব।
এ পর্বের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন গোলাম মোহাম্মদ ইদুর সভাপতিত্বের সময় উদীচীর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকারী ও বর্তমান সহ-সভাপতি হাবিবুল আলম। এরপর গোলাম মোহাম্মদ ইদুর জীবনের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন তার সন্তান আনিসুল কবির অসীম, সিপিবির সভাপতি শাহ আলম, সিপিবির সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান খান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ম হামিদ, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আব্দুল মালেক, বিশিষ্ট শিশু সাহিত্যিক, ছড়াকার আখতার হুসেন, ছায়ানটের নির্বাহী সদস্য মফিদুল হক, মহিলা পরিষদের সভাপতি ফৌজিয়া মোসলেম ও উদীচীর সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম।
আলোচনা পর্বে বক্তারা বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে উদীচী প্রতিষ্ঠিত হওয়ারও প্রায় এক দশক আগে শিল্পী-সংগ্রামী-কৃষক নেতা সত্যেন সেন একটি গানের দল গঠন করেন। সেই গানের দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন গোলাম মোহাম্মদ ইদু। পরে ১৯৬৮ সালের ২৯ অক্টোবর উদীচী আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি প্রথম আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য নির্বাচিত হন। এ ছাড়া ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন গোলাম মোহাম্মদ ইদু। শেষ বয়সে শারীরিক নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও উদীচীর ছোট-বড় যেকোনো কর্মসূচিতে ছুটে আসতেন গোলাম মোহাম্মদ ইদু। উদীচীর সব বয়সী শিল্পী-কর্মীর জন্যই তিনি প্রকৃত অভিভাবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।
বক্তারা আরও বলেন, নিভৃতচারী সাংস্কৃতিক সংগঠক গোলাম মোহাম্মদ ইদু ছিলেন উদীচীর সব স্তরের শিল্পী-কর্মীদের প্রকৃত অভিভাবক। অসাম্প্রদায়িক, সাম্যবাদী সমাজ বিনির্মাণের যে আদর্শকে ধারণ করে তিনি আজীবন লড়াই করে গেছেন, সেই আদর্শ প্রতিষ্ঠায় উদীচী অবিচল থাকবে। তার মতো আজীবন বিপ্লবী মানুষকে হারানো দেশের সংস্কৃতি জগতের জন্য বড় ক্ষতি। শারীরিকভাবে না থাকলেও মানসিক শক্তি হয়ে উদীচীর সব লড়াই-সংগ্রামে থাকবেন গোলাম মোহাম্মদ ইদু। তার আদর্শ ও চেতনাকে ধারণ করেই উদীচী পথ চলবে।
আলোচনা শেষে সন্ধ্যায় গোলাম মোহাম্মদ ইদুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মোমবাতি প্রজ্জালন করা হয়। স্মরণ সভা সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে।
আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে গোলাম মোহাম্মদ ইদুর পছন্দের সম্মেলক ও একক গান এবং আবৃত্তি পরিবেশন করেন উদীচীর এবং আমন্ত্রিত শিল্পীরা। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন মায়েশা সুলতানা ঊর্বি ও জয়া সেন গুপ্তা। এ ছাড়া দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় আবৃত্তি বিভাগের বাচিক শিল্পীরা।
১৯৩৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেওয়া গোলাম মোহাম্মদ ইদু দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের জটিল রোগের সঙ্গে লড়াই করছিলেন। রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২২ ডিসেম্বর বিকেলে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার মৃত্যুতে একজন অভিভাবককে হারিয়েছে দেশ-বিদেশে উদীচীর লাখো শিল্পী-কর্মী।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]