
তুমি মানেই বারো মাসে ৩৬৫ পার্বণ—
হিরে-জহরত আমার নেই
আছে হৃদয় নিঙড়ানো ভালোবাসা।
মার্বেল গ্রানাইট শোভিত বাগানবাড়ি—
বেলোয়ারি ঝাড়বাতি, ইরানি কার্পেট নেই।
আছে হৃদয় প্রসন্ন ভালোবাসা।
আরো আছে ঝুমকো জবা, হলুদ গাদার মালা।
অঞ্জলি ভরা শিউলি, সুবাসিত বকুল আর
শ্বেতশুভ্র কামিনীর ঝাড়।
বিশেষ দিনের জন্য—
চন্দ্রমল্লিকা-দোলনচাঁপার অর্ঘ্য।
আমার তুমি মানেই বারো মাসে ৩৬৫ পার্বণ— বেলি-চামেলী-কাঠগোলাপ।
বেলনের মতো হাতে রেশমি চুড়ি—
খোপায় জড়াবো বর্ণিল হিজলের ঘ্রাণ।
আমার হিরে-জহরাত নেই
নেই শ্বেত মর্মর খচিত প্রসাদ।
ভাবছি চাঁদকে তোমার সাথী করে—
শুকতারায় গড়ে দিবো নাকফুল।
আমার মিঠাই বন্ধু
আমার মিঠাই বন্ধুরে—
আমারে ছাড়িয়া বন্ধু কৈ গেলা রে!
তোমার ডাগর চক্ষু যহন আমার ভীরু চক্ষে
চক্ষু রাইখা কথা কইত— আমি ঠাহর পাইতাম এইডা পিরিতি। তোমার টলমলে বাড়ন্ত শরীর যহন নিকটে আইসা কথা কইতে কইতে— হাত ধরতো, আমি বুঝতাম বন্ধু আমারে সারা জনমের লাইগ্গা ভাল পাও।
যহন গাঙের পাড়ে খাড়াইয়া কইতা— গাঙ তো কোনদিন হুগাইবো না, আমাগো সংসর্গেও এই জনমে চর পরব না। তুমি বড় গৃহস্থ ঘরের মাইয়া— আমি গৃহস্থ বাড়ির লজিং মাস্টার। অভাবে ঘর ছাড়ছি— খালি হুনছি, ডরে মুখ খুলি নাই কোনোদিন। হেই সময় বুঝি নাই গাঙও হুগাইয়া যায়। আইজ গাঙের হুগাইয়া ধুধু বালুচর।
আমার মিঠাই বন্ধু হারাইয়া গেছে বহুদূর ।
বন্ধু তর মনে আছে গাছি দেখলে কইতি— আমি হমু গাছির বউ। নাও দেখলে কইতি, আমি হমু মাঝির বউ।আসলে তুই আবার বউ হইতে চাইতি, বন্ধু তরে কোনদিন কই নাই— তোর দুই কান্ধের দুই লাল,হলুদ বেনী, আমার চক্ষে হিজল ফুল।
আমার মিঠাই বন্ধু—
আমি জায়গীর মাস্টার, বড় হইছি— আমি অহনো তরে ভালো পাই। বন্ধু আমি ঘর বান্ধি নাই, পন্থের পানে চাইয়া রইছি— তরে এহন কোথা পাই!
অনুযোগ
জীবনের মধ্য গগনে এসে গোধূলি দেখি,
দেখি অস্তগামী সূর্যের রক্তিম আভা।
কিন্তু আমি তো-,
জীবন সায়াহ্নে সুপ্রভাত দেখতে চেয়েছি,
চেয়েছি প্রভাতের কুসুম রাঙা সূর্য।
এ জীবনে যাদের সাথে হৃদয় দিয়ে কথা
বলেছি, অধিকাংশই মস্তিষ্ক দিয়ে উত্তর দিয়েছে।
আমি চেয়েছি হৃদয়ের সঙ্গে হৃদয়ের বন্ধন,
হয়েছে হৃদয়ের সঙ্গে মস্তিষ্কের লুকোচুরি!
চাওয়া পাওয়ার অসামঞ্জস্যতা
সামঞ্জস্যতা হয়ে ফিরে আসুক।
দেখবো প্রভাতের কুসুম রাঙা সূর্য।
হবে হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের মেলবন্ধন।
আকাশ ছেয়ে গিয়েছিল আবাবিলে
এখনও জানালা দিয়ে আকাশ দেখি
আকাশে পৃথিবী খুঁজি, আকাশ দেখে বাঁচি
মেঘের ভেলায় ভেসে কল্পনায় শহর প্রদক্ষিণ করি।
মন খারাপের চাওয়া-পাওয়ায় আকাশ পানে দেখি
স্রষ্টাকে খুঁজি— অনেক কথা বলি,
ক্ষোভ-আক্ষেপ, পাওয়া না পাওয়া
সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য, কষ্ট-বেদনা।
সাদা মেঘের সারি দেখে
দেখে মন ভালো করি।
সন্ধ্যা তারায়,জোৎস্নায় সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজে ফিরি।
বৃষ্টির ছ্টায় মুখ ভিজিয়ে অপার শান্তি খুঁজে পাই
বৃষ্টিজলে হাত ভিজিয়ে প্রার্থনায় মগ্ন হই।
‘রহমানুর রহিম’ এর রহমতের বৃষ্টিতে,
সূর্যরশ্মিতে, ধরণীতে প্রাণের সঞ্চার হয়।
আর আমি আকাশে তাকিয়ে সুখ স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজে ফিরি।
মাঝে মাঝে আকাশ রূপ বদলায়
সব সময় গোধূলি বর্ণিল হয় না
সবদিন সুবেহ্ সাদিক কুসুম রাঙা হয় না
আকাশও মাঝে মাঝে মেঘে ভারি হয়,
বিদ্যুৎ চমকায়, অগ্নিগোলা নিক্ষিপ্ত হয়।
আমার আকাশে—
শুধু বুনো হাঁস টিয়া শালিক চড়াই থাকে না,
চিল-শকুন, বাজপাখিও থাকে।
সত্য-অসত্য, ধর্ম-অধর্মের যুদ্ধে,
আকাশ ছেয়ে গিয়েছিল আবাবিলে।
কবি যুদ্ধ চায় না
যুদ্ধ মানুষকে অমানুষ করে—
যুদ্ধে মনুষ্যত্ব হারিয়ে মানুষ অমানবিক হয়ে ওঠে। নিজের অজান্তে হিংস্র হায়েনা জায়গা করে মনে।
মানুষ বয়ে বেড়ায় মানবিক খোলস।
যুদ্ধের মাঠে—
কতিপয় দলবদ্ধ মেতে ওঠে হায়েনার হিংস্রতায়।
যুদ্ধ শেষে কিছু মানুষ—
ধ্বংসস্তূপের নিচে খুঁজে ফেরে হারানো স্বজন।
যুদ্ধের ডামাডোলে—
চিরতরে হারিয়ে যায় কিছু আপন—
সততা,শত সহস্র বছরের ঐতিহ্য-পরম্পরা।
কবি যুদ্ধ চায় না—
শুধু প্রেম চায়, ভরপুর প্রেম
তাই এক আকাশ হৃদয় নিয়ে বসে থাকে শান্তির।
বারুদ, লোবান আর লাশের উৎকট গন্ধ নয়—
চায় সুবাসিত ফুলের সৌরভ।
আর অপেক্ষায় থাকে—
একটা নির্মল ভোরের স্নিগ্ধতায় পাখিদের কলতানের।
বিবার্তা/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]