মাথার ত্বকে যখন নতুন কোষ তৈরি হয় এবং পুরনো কোষগুলো ঝরে যায়। এটা একটা স্বাভাবিক পরিক্রমা। কিন্তু পুরনো কোষগুলো যখন ঠিকঠাক মতো ঝরে যেতে পারে না তখন সেগুলো জমে যায় এবং ফাঙ্গাস সংক্রমিত হয়। ফলে খুশকি হয়। মাথা থেকে সাদা গুঁড়ার মতো খুশকি পড়ে এবং মাথা চুলকায়। আর খুশকি সমস্যায় কখনোই ভোগেননি, এমন মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না।
চুলের অস্বস্তিকর একটি সমস্যা হলো খুশকি। সেবোরিক ডার্মাটাইটিসকে বাংলায় আমরা খুশকি বলে থাকি। খুশকি মাথার চুলের পাশাপাশি নাকের চার পাশে, চোখের পাপড়িতে, আইব্রোতে, কানে ও বুকেও হতে পারে। স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতে আমাদের ত্বকের মৃতকোষগুলো ঝরে। মাথার ত্বকের এ মৃত কোষগুলোই খুশকি।
এছাড়া শীত মৌসুমে বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকার ফলে খুশকি বেশি হয়। কখনো কখনো খুশকির পাশাপাশি মাথার ত্বকে ছোট ছোট দানার মতো গোটা হয়ে থাকে এবং মাথার ত্বকে চুলকানি হয়। তবে একটু সচেতন হলেই খুশকির এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।
খুশকির কারণ যাই হোক না কেন, খুশকি থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজন বিশেষ ধরনের শ্যাম্পু। সপ্তাহে ২-৩ দিন কিটোকোনাজল অথবা জিংক পাইরিথিওন নামক উপাদান সমৃদ্ধ শ্যাম্পু দিয়ে মাথা পরিষ্কার করতে হবে। চুলকানি থাকলে অ্যান্টি হিসটামিন ট্যাবলেট খেতে হবে। পাশাপাশি মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখতে একদিন পর পর নরমাল শ্যাম্পু দিয়ে মাথা পরিষ্কার করতে হবে।
এছাড়াও প্রতিদিন পুষ্টিকর খাবার ও প্রচুর শাক সবজি ও ফল খেতে হবে। দিনে ২-৩ লিটার পানি পান করতে হবে। থাকতে হবে দুঃশ্চিন্তামুক্ত। সব সময় পরিষ্কার চিরুনি ব্যবহার করতে হবে। চুলে বা মাথার ত্বকে ময়লা জমতে দেয়া যাবে না। এরপরও যদি চুলে খুশকি হয়, তাহলে একজন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এছাড়া কিছু প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে ঘরে বসেই খুশকির প্রতিকারের কিছু উপায় তুলে ধরা হলো।
জলপাই তেল
খুশকির সমস্যা দূর করতে জলপাই তেল বা অলিভ অয়েলের ব্যবহার নানা দেশে খুবই জনপ্রিয়। নিয়মিত জলপাই তেল ব্যবহারে খুশকি কমে। কারণ জলপাই তেল প্রাকৃতিকভাবেই ভালো ময়েশ্চারাইজার এবং ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে বা ত্বকের আর্দ্রতা ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করে।
কর্পূর ও নারকেল তেল
নারকেল তেল ও কর্পূরের তেল নানা ভেষজ গুণে সমৃদ্ধ। আধা কাপ নারকেল তেলের মধ্যে এক চা-চামচ কর্পূরের তেল নিয়ে একটা বোতল বা পাত্রে রাখুন। খেয়াল রাখতে হবে যাতে বোতলের মুখ ভালো করে লাগানো থাকে বা পাত্রটির ঢাকনা ঠিকঠাক আটকানো থাকে, যাতে ভেতরে বাতাস না ঢোকে। শুষ্ক স্থানে এভাবে রাখা পাত্র থেকে কিছুটা তেল নিয়ে প্রতিরাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মাথায় দিন। মিনিট দশেক ধরে ঘষে ঘষে চুলের গোড়ায় মাখুন। সকালে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে টানা দুই সপ্তাহ ব্যবহার করে উপকার পেলে ধীরে ধীরে এটা একদিন পর পর মাখুন বা আরও কমিয়ে দিন।
বেকিং সোডা
হালকা পানিতে মাথা ভিজিয়ে নিয়ে খানিকটা বেকিং সোডা পুরো মাথায় মেখে নিন। ভালো করে ঘষে ঘষে শ্যাম্পু না করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটা মাথার খুলিতে থাকা ছত্রাক দমন করে প্রথমদিকে ত্বককে অতিরিক্ত শুষ্ক করে ফেলতে পারে। কিন্তু অল্পদিনেই ত্বকে স্বাভাবিক তৈলাক্ত অবস্থা ফিরে আসবে। কিন্তু এ সময়ে আপনি খুশকি থেকে মুক্তি পাবেন।
লেবুর রস
দুই টেবিল-চামচ লেবুর রস নিয়ে পুরো মাথায় চুলের গোড়ায় ঘষে ঘষে মাখুন। পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এবার এক টেবিল-চামচ লেবুর রস নিয়ে এক কাপ পানিতে মেশান। লেবুর রস মেশানো পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। খুশকি না কমা পর্যন্ত প্রতিদিন এভাবে লেবু চিকিৎসা চালিয়ে দেখতে পারেন।
ঘৃতকুমারী
খুশকি ভরা মাথায় ঘৃতকুমারীর রস মেখে নিলে দারুণ আরাম পাবেন। খুশকির জ্বালায় দিনরাত চুলকানো থেকে খানিকটা ছুটিও দেবে ঘৃতকুমারীর রসের শীতল আরাম। এই উদ্ভিদ রসের সমৃদ্ধ উপাদানগুলো আপনার ত্বকের অনেক সমস্যাই দূর করবে।
মেথি-তেল
সাধারণ নারকেল তেলের সঙ্গে মেথি মিশিয়ে কয়েকদিন বোতলে রেখে দিন। নিয়মিত এই মেথি মেশানো তেল মাখুন মাথায়। রাতে মেখে সকালে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহারে মাথার চুল ও ত্বক দুইই ভালো থাকবে। খুশকি থেকেও রেহাই পাবেন।
লবণ
প্রতিদিনই কাজে লাগা লবণের অনেক ব্যবহারই হয়তো আমরা জানি না। মাথায় হালকা করে লবণ ব্যবহার করে দেখুন। প্রাকৃতিক পরিষ্কারক হিসেবে লবণ খুশকি দূর করতে দারুণ কাজ করবে। হালকা করে লবণ ব্যবহার করে তারপর শ্যাম্পু করলে শ্যাম্পুর পুরো সুবিধা আপনি কাজে লাগাতে পারবেন। এ ছাড়া চুলকাতে থাকা খুশকি ভরা মাথায় লবণ-চিকিৎসা দারুণ প্রশান্তিও দেবে আপনাকে।
বিবার্তা/শারমিন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]