কখনো কখনো শিশুর চঞ্চল আচরণ আপনাকে অস্থির করে তোলে, চিন্তায় ফেলে দেয়। আপনার মনে নানা প্রশ্ন আসে শিশুর সঠিক বুদ্ধির বিকাশ হচ্ছে তো? ছোট শিশু একটু দুষ্টুমি করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে তার বেড়ে ওঠার পাশাপাশি বুদ্ধির বিকাশও জরুরি।
সব মা-বাবাই চান তাদের শিশু সন্তান বড় হয়ে মস্তবড় ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবে। কেউ বা আবার স্বপ্ন দেখেন তাদের সন্তান বড় হয়ে দেশের বড় বৈজ্ঞানিক হবে। বড় হয়ে অনেক অর্থ-বিত্তের অধিকারী হবে- এমনটাও অনেক মা-বাবা ভাবেন। শিশুর বড় হয়ে জ্ঞানী-গুণীজন হওয়া অসম্ভব কোন চাওয়া নয়। শিশুরাইতো দেশের ভবিষ্যৎ নেতা, জ্ঞানী, গুণী, বিশেষজ্ঞজন হবে। তাদের মেধা বিকাশ যথাযথভাবে ঘটলেই এমন চাওয়া-পাওয়া অকল্পনীয় কিছু নয়।
বাচ্চাদের নতুন কিছু শেখার প্রক্রিয়াটি হতে পারে দারুণ মজার ও আনন্দদায়ক, যদি শেখানোর প্রক্রিয়াটি হয় তাদের মতো করে। তাই কোনো কিছু জানা ও শেখার ব্যাপারটি হওয়া চাই সহজ ও মজার। বাচ্চারা নতুন কিছু শেখার ব্যাপারে অনেক বেশি আগ্রহী হয়ে উঠবে যদি তারা তাতে একবার মজা পেয়ে যায়। এরকম কিছু কৌশলই তুলে ধরা হলো এবারের লেখায়।
বাচ্চাকে কল্পনাপ্রবণ করে তুলুন
কোনো কিছু শেখার সহজতম উপায় হচ্ছে, যা কিছু শিখছে তা নিয়ে কল্পনা করতে পারা। তাই আপনার বাচ্চাকে বলুন, যেটা পড়লো সেটা যেন সে মস্তিষ্কে কল্পনা করে এবং বিস্তারিত আপনাকে বলে। দেখবেন সে খুব আগ্রহ নিয়ে দারুণ একটা পটভূমি তুলে ধরছে আপনার সামনে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে ভিস্যুয়াল গেম, প্লে কার্ড বা অন্যান্য উপাদান ব্যবহার করতে পারেন।
আপনিও শিখুন সন্তানের কাছ থেকে
বাচ্চাদের পড়াশোনার ব্যাপারে বাবা-মায়েদের ‘কড়া শিক্ষক’ না হওয়াই ভালো। বরং শেখানোর প্রক্রিয়ায় ওর সাথে স্বাচ্ছন্দ্য হোন। তাকে বলুন, সে নতুন যেটা শিখলো তা যেন আপনাকে শেখায়। এই ধরুন, কীভাবে যোগ-বিয়োগ করতে হয় বা বিজ্ঞানের কোনো একটা বিষয়। এটা তাকে তথ্য মনে রাখার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।
মজার গল্প তৈরি করুন
শুরু করতে পারেন সাধারণ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে করে। যেমন- সে যে আইসক্রিম খেয়েছিল তার রংটা ঠিক কী ছিল বা স্কুলে তার বন্ধুদের নাম মনে করা বা তার গত জন্মদিনে সে কী কী করেছিল তার বর্ণনা ইত্যাদি। এভাবে সে যখন প্রক্রিয়াটির সাথে মানিয়ে উঠবে তখন প্রশ্নগুলোকে পড়ালেখার সাথে সম্পর্কিত করুন।
পড়াশোনায় রঙের ব্যবহার ভালো
বাচ্চাদের রঙের প্রতি থাকে দারুণ কৌতূহল। তাই পড়ার সময় গুরুত্বপূর্ণ শব্দগুলো লাল-নীল-হলুদ বা অন্যান্য দৃষ্টি আকর্ষণ করে এমন রঙ দিয়ে দাগিয়ে পড়ানো যেতে পারে। তাকে বলতে পারেন যে, গুরুত্ব বুঝে সে নিজেই যেন নানারঙ করে পড়া মার্ক করে রাখে।
পাঠগুলো ছোট ছোট ভাগ করে পড়া
বড় আর ছোটদের শেখার মাত্রা এক নয়। আপনার কাছে যেটা খুব সহজ আর দ্রুত শিক্ষণীয় মনে হচ্ছে বাচ্চাদের কাছে তা মনে নাও হতে পারে। তাই ধৈর্য ধরুন, সময় নিন। কোনো তথ্য বা পড়া শেখানোর সময় ছোট ছোট করে ভেঙে পড়ান। এটা অনেকটা খাবার ছোট ছোট লোকমায় খাওয়ার মতো। যত ছোট কামড়ে খাবে তত দ্রুত হজম হবে। এভাবে বাচ্চার পাঠ্য কবিতা, গল্প বা কোনো হোমওয়ার্ককে ছোট ছোট খন্ডে বিভক্ত করে পড়ায় উৎসাহিত করতে পারেন। এভাবে ছোট ছোট খন্ড-গুলোকে জোড়া লাগিয়ে বড় কোনো বিষয়কে সে সহজেই শিখতে ও মনে রাখতে পারবে।
বাস্তুবিক জিনিস শেখান
আমাদের মস্তিষ্ক নতুন তথ্য সাধারণত স্বল্পস্থায়ী স্মৃতিতে রেখে দেয় এবং তা খুব কম সময়ের জন্যই তা আমাদের মনে থাকে। কিন্তু নতুন কিছুকে যদি আগে থেকে জানা বা শেখা বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত করতে পারি তাহলে তা মনে থাকে বহুদিন। তাই বাচ্চাদের শেখানোর ক্ষেত্রে তার আগে থেকে অভিজ্ঞতা আছে এমন বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত করুন। এভাবে বাচ্চারা নতুন কোনো তথ্য সহজে মনে রাখতে পারে।
আজকের সুস্থ, সবল ও বুদ্ধিদীপ্ত শিশু আগামীদিনের ভবিষ্যৎ। তাই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের কর্ণধার এই শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বুদ্ধির বিকাশে পিতামাতা, পরিবার, সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। শিশুকে ঘিরে প্রতিটি মা-বাবার আশা-আকাঙ্খার শেষ নেই।
বিবার্তা/শারমিন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]