শিরোনাম
শিশুর বদভ্যাস নিয়ে কি করবেন?
প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৭:২৮
শিশুর বদভ্যাস নিয়ে কি করবেন?
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

চকলেট, মায়ের বকুনি আর ফিডার খাওয়ার চেয়ে সাধারনত অনেক বাচ্ছাদেরই বেশি পছন্দ আঙুল চোষা। ঘুম, খেলা, কার্টুন দেখাসহ সব কাজের সময়ই মুখের ভেতর বুড়ো আঙুলটা পুরে দেওয়া চাই। মা-বাবা বহু চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারেন না এই বদ অভ্যাস।বদ অভ্যাস বলতে শুধু আঙুল চোষাই নয়, নাক খোঁটা, চুল টানা, কলম কামড়ানো, দাঁত দিয়ে নখ কাটা, মাটি খাওয়া এগুলোও অনেক শিশুর ক্ষেত্রে দেখা যায়।


অভিভাবকরা সচরাচর যেসব শিশুর প্রতি অবহেলা করে থাকেন, সে ধরনের শিশুদেরই এসব সমস্যা বেশি দেখা যায়। এরকম কোনো আচরণ করে থাকলে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।


বাচ্চাদের চাহিদাগুলো ঠিকমতো পূরণ না হলে অর্থাত্ কিছুটা অপ্রাপ্তি থেকে শিশুর এই খারাপ অভ্যাসগুলো হতে পারে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে শিশুদের মনোযোগ আকর্ষণ করার বিষয়টি। শিশু আসলে মা-বাবার মনোযোগ চায়। যখন সে দেখে তার বদভ্যাসগুলো ছাড়ানোর জন্য মা-বাবা তার প্রতি বাড়তি মনোযোগ দিচ্ছে, তখন সে ইচ্ছা করেই বিষয়টি বারবার করে।’


আবার অনেক পরিবারেই দেখা যায়, মা-বাবা শিশুকে ঠিকমতো সময় দিতে পারছেন না তখন শিশু যাদের কাছে থাকে তাদের নখ কামড়ানো বা নাক খোঁটা— এ ধরনের কোনো আচরণ দেখে সেটি অনুকরণ করে এবং যা তার অভ্যাসে পরিণত হয়।


তা ছাড়া পরিবারে মা-বাবার মধ্যে কলহ চললে শিশু নিরাপত্তাহীনতায় আঙুল চোষে ও মাথার চুল টানে। তা একসময় তার অভ্যাসে পরিণত হয়।


শিশুদের বিভিন্ন আচরণজনিত সমস্যার জন্য নির্দিষ্ট একটি কারণকে দায়ী করা সম্ভব নয়। অনেক কিছুরই সম্মিলিত প্রভাবের ফলে শিশুর মধ্যে কিছু সমস্যা দেখা দেয়। দাঁত দিয়ে নখ কাটা বা আঙুল চোষার ক্ষেত্রেও অনেক বিষয়ের প্রভাব রয়েছে।


কারণ


* দুই থেকে তিন বছরের শিশুর আঙুল চোষাটা স্বাভাবিক। ব্রেস্টফিড বা ফিডারে দুধ পান করা শিশুরা অনেক সময় অভ্যাসবশত আঙুল চোষে, যা ধীরে ধীরে চলে যায়।


* বাড়ির পরিবেশ আনন্দময় না হলে শিশুর মধ্যে এ ধরনের প্রবণতা দেখা যেতে পারে। যেখানে শিশু বেশির ভাগ সময় অবহেলিত থাকে, মা-বাবা শিশুর প্রতি উদাসীন থাকেন, সেখানে শিশু বিকল্প হিসেবে দাঁত দিয়ে নখ কেটে বা আঙুল চুষে আনন্দ পায়।


* দুই থেকে পাঁচ বছরের শিশুর মধ্যে দাঁত দিয়ে নখ কাটার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। স্নায়বিক উত্তেজনার কারণেই শিশুরা এটা বেশি করে থাকে।


* শিশু যখন নিঃসঙ্গ বা একঘেয়ে বোধ করে অথবা উত্কণ্ঠায় ভোগে, মানসিক চাপে থাকে, তখনো দাঁত দিয়ে নখ কাটে বা আঙুল চোষে। ভয় বা নিরাপত্তাহীনতার বোধ থেকেও শিশু এমনটি করে থাকে।


প্রতিকার


শিশুর নখ কামড়ানো ও আঙুল চোষা নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তার কারণ নেই। এটা ধীরে ধীরে চলে যায়। তবে চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে শিশু এই অভ্যাসগুলো ত্যাগ না করলে ভাবার অবকাশ আছে। এ সময় অভিভাবকদের এমন কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যাতে সে এই অভ্যাসগুলো থেকে ধীরে ধীরে মুক্ত হতে পারে।


শিশুর নখ কামড়ানো ও আঙুল চোষায় করণীয় :


* সবচেয়ে বড় প্রতিকার হলো শিশুর প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ প্রকাশ করা। বাড়ির পরিবেশ এমন হতে হবে, যেখানে শিশু নিরাপদ বোধ করবে ও আনন্দে থাকবে।


* শিশুর এসব অভ্যাসের জন্য বড়দের কোনোভাবেই উত্তেজিত হওয়া চলবে না। এই অভ্যাসগুলো দূর করার জন্য বকা দেওয়া যাবে না। সরাসরি নিষেধ বা অতিরিক্ত মনোযোগ না দেওয়াই ভালো। এতে শিশু আরো ভীত হয়ে উঠবে বা হীনম্মন্যতায় ভুগবে।


* শিশুকে উত্তেজনামুক্ত রাখতে হবে। এই অভ্যাসগুলোর কুফল সম্পর্কে শিশুর বোধগম্য হয়, এমনভাবে কিছু ধারণা দিতে হবে। যেমন খেলার ছলে কিংবা গল্প বলে এসব অভ্যাস সম্পর্কে অবহিত করা।


* শিশুর প্রাত্যহিক জীবনে আনন্দময় খেলাধুলা ও গঠনমূলক কাজে ব্যস্ত রাখতে পারলে এসব অভ্যাস সহজেই দূর হয়ে যাবে।


* শিশুর এই অভ্যাসগুলোর জন্য তাকে কখনোই লজ্জা দেওয়া যাবে না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ লজ্জা দিলে তার আত্মবিশ্বাস টলে যায়। স্নেহ-মমতাপূর্ণ আচরণে শিশু এই অভ্যাস থেকে সহজেই নিজেকে মুক্ত করতে পারবে।


শিশুরা অনেক সময় কোনো কাজ নেই বলে এ বদভ্যাসগুলো আয়ত্ত করে। তাই শিশুকে ছবি আঁকা, খেলাধুলা এগুলোর মধ্যে ব্যস্ত রাখুন। মাঝেমধ্যে ছুটির দিনে বেড়িয়ে আসুন ঐতিহাসিক কোনো স্থান থেকে। শিশুর বদভ্যাসগুলো দূর করতে না পারলে এটি একসময় রোগ হয়ে যেতে পারে। তাই নিজের চেষ্টায় কাজ না হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। ১০-১২ বছরের মধ্যেও যদি এ বদভ্যাসগুলো না ছাড়ানো যায় সে ক্ষেত্রে মনোরোগবিজ্ঞানীর পরামর্শ নিয়ে শিশুদের প্রথমে কাউন্সেলিং ও পরে কগনিটিভ বিহেভিরিয়ার থেরাপি দিতে পারেন।


বিবার্তা/শারমিন


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com