এবারের ঈদে নারীদের পোশাকে ফ্যাশনের ট্রেন্ড
প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৪, ১৯:৩৪
এবারের ঈদে নারীদের পোশাকে ফ্যাশনের ট্রেন্ড
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

চলছে রমজান, তবে এরই মাঝে সবার মধ্যে শুরু হয়ে গেছে ঈদের আমেজ।রোজার ফাঁকেই চলছে কেনাকাটা, উপহার এসবের আয়োজন।


ঈদ উপলক্ষে বাহারি রং ও ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের পোশাকের পসরা সাজিয়েছে ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোও।



পোশাকের মোটিফ হিসেবে থাকছে জিওমেট্রিক, ট্র্যাডিশনাল, ফ্লোরাল স্ক্রিন প্রিন্ট, কারচুপি, ডিজিটাল প্রিন্ট ও এমব্রয়ডারির কাজ। এ ছাড়া আছে আনইস্টিচ লন, ফ্যাশন টপস, কাফতান, শাড়ি, আনারকলি, সিঙ্গেল পিস কামিজ, লন থ্রি-পিস, এথনিক কুর্তি।। ডেনিম টুইল ফেব্রিকস, ডবি কটন, জ্যাকার্ড কটন, কটন, জর্জেট ও সিল্ক, শার্টিন, ভিসকস, নেট দিয়ে পোশাকগুলো বানানো হয়েছে।



অনেকেই হয়তো এরই মধ্যে ঈদের পোশাক কিনে ফেলেছেন, আবার অনেকে কেনার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তবে ঈদের পোশাক কেনার আগে জেনে নেওয়া দরকার, এবারের ঈদ ফ্যাশন ট্রেন্ডে কোন পোশাকগুলো প্রাধান্য পেয়েছে। চলুন তাহলে একনজরে দেখে নিই এবারের ঈদে কোন কোন পোশাকের ট্রেন্ড চলছে।


বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের বিভিন্ন তলায় পোশাকের শোরুমে ঢুঁ দিয়ে দেখা গেল—ঈদের জন্য ভারত, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আনা হয়েছে পোশাক, বিশেষ করে মেয়েদের ঝকমকে কারুকাজের পোশাক বেশি বিক্রি হচ্ছে। পা পর্যন্ত লম্বা গাউনের সঙ্গে বুকের কাছে শাড়ির আঁচলের মতো করে ঝালর লাগানো একটি পোশাক দেখিয়ে বিক্রয়কর্মী আকাশ শিকদার জানালেন, এ পোশাকের নাম নায়রা। এবার ঈদে এটাই বেশি চলছে। এ পোশাকের জন্য ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা।


ফ্যাশন ডিজাইনাররা বলছেন, আবহাওয়া বুঝে ঈদের সকাল, বিকেল ও সন্ধ্যার পোশাক নির্বাচন করা উচিত। সে ক্ষেত্রে সকালের দিকে সুতি কিংবা লিনেন স্বস্তি দেবে। আর বিকেল বা সন্ধ্যায় বের হলে পরতে পারেন এক্সক্লুসিভ বা পার্টি উপযোগী সালোয়ার-কামিজ কিংবা কুর্তি।


এবারের ঈদ ট্রেন্ড নিয়ে ফ্যাশন হাউস কে ক্র্যাফটের কর্ণধার ও ডিজাইনার খালিদ মাহমুদ খান জানান, এবারের ঈদে সালোয়ার-কামিজে কাট, প্যাটার্ন ও নকশার সমন্বয়ের পাশাপাশি পোশাকের জন্য ফেব্রিক নির্বাচন করা হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ ও স্বস্তিতে থাকাকে প্রাধান্য দিয়ে। কামিজের ক্ষেত্রে লং, সেমি লং এবং স্ট্রেইট প্যাটার্নকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অনুষ্ঠান উপযোগী পার্টি পোশাকে আনারকলি, আঙ্গারাখাসহ কিছু বিশেষ প্যাটার্ন দেখা যাবে এবারের ঈদ পোশাকে। তাদের পোশাক তৈরির ক্ষেত্রে কটন, জ্যাকার্ড কটন, জর্জেট, লিনেন, সিল্ক, হাফ সিল্ক, দুবাই সিল্ক, অরগাঞ্জা, ধুপিয়ান সিল্ক, মমো সিল্ক, সুইস কটন, ভিসকস, নিব কটন, এলেক্স, টু-টোন, সাটিন ফেব্রিক কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে।


রাজধানী ঢাকার গুলশান-লিংক রোডে অবস্থিত আলোকি কনভেনশন সেন্টারের গ্র্যান্ড বলরুমে আয়োজন করা হয় লা রিভের অফিশিয়াল ঈদ ফ্যাশন শো ২০২৪।


যেখানে উপস্থাপন করা হয় লা রিভের ফ্যামিলি কালেকশন, নারী, পুরুষ, টিন ও শিশুদের পোশাকের সংগ্রহ। লা রিভের ব্র্যান্ড এক্সক্লুসিভ লেবেল নার্গিসাসের উপস্থাপনাও মুগ্ধতা ছড়িয়েছে সবার মধ্যে।


লা রিভের প্রধান নির্বাহী পরিচালক মন্নুজান নার্গিস বলেন, ‘লা রিভ ঈদ কালেকশন ২০২৪–এ সিল্ক ও মসলিনের যুগলবন্দি ঘটেছে এবার। ফুটি কার্পাস তুলা থেকে তৈরি মসলিন এবং রেশমগুটি থেকে তৈরি সিল্ক আধুনিক বুননকৌশলের মাধ্যমে নানা রূপ পেয়েছে। লা রিভ সব সময় তার কাস্টমারকে উৎসব, অনুষ্ঠান, আবহাওয়া এবং কোয়ালিটিতে সবচেয়ে সেরা পোশাকটি উপহার দেওয়ার চেষ্টা করে।


এবারের ঈদে গ্রীষ্মের দাবদাহ থাকবে। তাই উৎসবের আমেজ ধরে রাখতে সিল্কের লাক্সারি ও গ্রীষ্মের প্রখর তেজ কমাতে ভিসকসের কমফোর্ট ব্লেন্ড করে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের একটি কাপড় তৈরি করেছি আমরা। কাপড়টি হলো সিল্ক-ভিসকস ব্লেন্ড। এ ঈদে শুধু লা রিভেই এ নতুন ঘরানার কাপড়টি পাওয়া যাবে।’ ভবিষ্যতে কাপড় নিয়ে এমন আরও অনেক নিরীক্ষামূলক কাজ করার আশা ব্যক্ত করেন তিনি।


ফ্যাশন হাউস রঙ বাংলাদেশের এবারের ঈদ কালেকশনে রাখা হয়েছে আরামদায়ক সব কাপড়। সালোয়ার-কামিজের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের কটন, স্লাব কটন, জ্যাকার্ড কটন, লিনেন, হাফসিল্ক, জর্জেট, ভিসকস, বারফি কাপড়। মূল রং হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে মেরুন, নীল, ফিরোজা, আকাশি, ব্রাউন, লাল, লাইট অরেঞ্জ, কফি, ডিপ সবুজ।


ঈদকে কেন্দ্র করে পোশাকের নকশাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নানা ভ্যালু অ্যাডেড মিডিয়ার ব্যবহারে। নানা আধুনিক ও ঐতিহ্যগত প্যাটার্নের কাট অ্যান্ড সুইং ছাড়াও রয়েছে স্ক্রিন প্রিন্ট, ব্লক প্রিন্ট, হাতের কাজ, এমব্রয়ডারি ও কারচুপি কাজের ব্যবহার করা হয়েছে পোশাকে।


ফ্যাশন হাউস অঞ্জনসের সালোয়ার-কামিজে সমসাময়িক ট্রেন্ড ও প্যাটার্ন বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। মিডিয়াম, লং– সব ধরনের কামিজই করা হয়েছে ঈদকে কেন্দ্র করে। কাপড়ের ক্ষেত্রে সুতি ছাড়াও প্রাধান্য পেয়েছে লিনেন কটন, জ্যাকার্ড কটন, রেয়ন কটন, সফট সিল্ক ও ধুপিয়ান। ঈদে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি অঞ্জনসে পাওয়া যাচ্ছে স্ক্রিন প্রিন্ট, এম্ব্রয়ডারি ও ডিজিটাল প্রিন্টের আনস্টিচ সালোয়ার-কামিজ।


এসব ছাড়া বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস ও মার্কেটে আগের মতোই মিলছে ফ্রক ছাঁটের কামিজ। ছাঁটের কারণে পোশাকটি বেশ আরামদায়কও। কামিজের ঘেরে আনারকলি ছাঁট, সামনের অংশে শেরওয়ানি কাটের জমকালো পোশাকও পাবেন ঈদ বাজারে। কিছুটা ভিন্নতা চাইলে গাউন ছাঁটের কামিজও কিনতে পারেন।



সালোয়ার-কামিজ


শাড়ির পরেই নারীদের পছন্দের তালিকায় থাকে সালোয়ার-কামিজ। যেহেতু এখন গরম তাই ন্যুড ও মভ কালারের মতো উজ্জ্বল রং বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানেয়েছেন নিউমার্কেটের বিক্রেতা সুমন পাটোয়ারী। তবে এবার পার্টি সালোয়ার-কামিজগুলোই বেশি দেখা যাচ্ছে। টিস্যু, নেট, অরগ্যাঞ্জা, শিফন ও জর্জেটের থ্রি-পিসের কদর বেড়েছে ঈদ ফ্যাশনে। কাপড় ও ডিজাইনভেদে ১০০০-১০,০০০ টাকার মধ্যে ভালো মানের থ্রি-পিস পাবেন।


আনারকলি


আনারকলি অতীতের ফ্যাশন হলেও এর চাহিদা ২০২৪ সালে এসেও কমেনি। এবারের ঈদের ট্রেন্ডি পোশাকগুলোর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে আনারকলি। প্রিন্টেড জর্জেট কাপড়, সিল্ক, কাতান কিংবা টাই ডাই আনারকলি এখন বিভিন্ন মার্কেটে ও অনলাইনেও পেয়ে যাবেন। কাপড় ও ডিজাইনভেদে একেকটি আনারকলির দাম পড়বে ১,৫০০-১৭,০০০ টাকা পর্যন্ত।


কর্ড সেট


একই প্রিন্টের কামিজ ও সালোয়ার কিংবা একরঙা টপ বা প্যান্ট এখন ট্রেন্ডি পোশাকগুলোর মধ্যে অন্যতম। বিভিন্ন অনলাইন বা মার্কেটে পেয়ে যাবেন সুতি, সিল্ক কিংবা জর্জেটের কর্ড ড্রেসগুলো। দাম পড়বে ১,৫০০-৫,০০০ টাকা পর্যন্ত।


লক্ষ্ণৌ ড্রেস


বর্তমানে ফ্যাশনপ্রেমীদের কাছে লক্ষ্ণৌ ড্রেসের কদর বেড়েছে। পাতলা জর্জেটের ওপর সুতার হাতের কাজ ও মিরর স্টোন বসানো এ ড্রেসগুলো কোয়ালিটির ওপর নির্ভর করে দাম ৪,০০০-১০,০০০ টাকা পর্যন্ত গড়াতে পারে। সাধারণত কামিজ, সারারা ও ওড়নাসহ একটি লক্ষ্ণৌ সেট পূর্ণতা পায়। চাইলে ওয়ান পিস বা শুধু কামিজ বা হালকা ঘেরের গাউনও পরতে পারেন। এ ড্রেসগুলোর রং সাধারণত একটু হালকা হয়, এজন্য দেখতেও সুন্দর দেখায়।


আগানূর


অরগ্যাঞ্জা কাপড়ের ওপর সুতা, এমব্রয়ডারি, সিকুইন, কারচুপি কাজ করা থাকে আগানূরের কামিজে। সাধারণত টু-পিস অর্থাৎ কামিজ ও ওড়না মিলে এক সেট আগানূরের ড্রেস বিক্রি হচ্ছে মার্কেটে ও অনলাইনে। কাপড়ের কোয়ালিটি ও নকশার ওপর নির্ভর করে একেকটি আগানূরের সেটের দাম পড়তে পারে ৫,০০০ থেকে ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত। এ ড্রেসগুলোর কামিজ হালকারঙা ও এর কাজের সঙ্গে মিলিয়ে ওড়না থাকে। খুবই সুন্দর এ ড্রেসগুলো বিভিন্ন উৎসব, অনুষ্ঠানে দারুণ মানিয়ে যায়।


সারারা


হাল ফ্যাশনে জায়গা করে নিয়েছে সারারা ড্রেসগুলো। বাজারে এখন বিভিন্ন ডিজাইন ও ফেব্রিকের সারারা সেট পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে ফ্রিল্ড ডিজাইনার, ক্রপ টপ শাড়ি স্টাইল, লেয়ার ডিজাইনার, এমব্রয়ডারি ও ক্রিম ডিজাইনার সারারা স্যুট অন্যতম। কাপড় ও ডিজাইনভেদে সারারা সেটের দাম ২,০০০-৫০,০০০ টাকা পর্যন্তও।


গাউন


লং গাউনের প্রতি চাহিদা বেড়েছে তরুণীদের। জর্জেট থেকে শুরু করে সিল্ক, সাটিনসহ অরগ্যাঞ্জা দিয়ে তৈরি গাউনে মজেছেন নারীরা। আবার কারচুপি কাজের আবায়া, বোরকা, গাউন মডেস্ট ফ্যাশনে আগ্রহীরা বেছে নিচ্ছেন এবারের ঈদে। এর সঙ্গে বাহারি পার্টি হিজাবের কদরও বেড়েছে। অনেকেই এসব হিজাব স্কার্ফ স্টাইলেও ব্যবহার করছেন পোশাকের সঙ্গে। ১,৫০০-১০,০০০ টাকার মধ্যে আপনি পছন্দের গাউন পেয়ে যাবেন।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com