সম্পর্কে জড়ানো কিশোরীদের এক চতুর্থাংশই সঙ্গীর সহিংসতার শিকার: ডব্লিউএইচও
প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০২৪, ১৮:৫১
সম্পর্কে জড়ানো কিশোরীদের এক চতুর্থাংশই সঙ্গীর সহিংসতার শিকার: ডব্লিউএইচও
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

বয়ঃসন্ধিকালে প্রেমের সম্পর্কে জড়িত কিশোরীদের প্রায় এক-চতুর্থাংশ শারীরিক ও যৌন সহিংসতার শিকার হন। বিশ্বব্যাপী এই সংখ্যাটি প্রায় ১ কোটি ৯০ লাখ। ২০ বছর বয়সের মধ্যে তারা এ ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে।


সোমবার (২৯ জুলাই) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) প্রকাশিত আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সাময়িকী দ্য ল্যানসেটে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।


ডব্লিউএইচও- এর সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রায় ৬ জনের মধ্যে একজন (১৬%) গত বছর এ ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছে।


১৫৪টি দেশ ও অঞ্চলের ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী কয়েক হাজার কিশোরীর ওপর সমীক্ষাটি চালানো হয়। এ ধরনের সহিংসতা রোধে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ারও আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।


সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর কাছ থেকে অন্তত একবারের জন্য হলেও সহিংসতার শিকার হয়েছে ২৪ শতাংশ কিশোরী। ২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চালানো হয় এ সমীক্ষা।


সমীক্ষা প্রতিবেদনের প্রধান রচয়িতা লিনমারি সারডিনহা বলেন, সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কে ফাটলের কারণে কিশোরীরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে ও এমন পরিস্থিতিতে তারা কোনো সহায়তা পায় না। এ উদ্বেগই মূলত সমীক্ষা পরিচালনার পেছনে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।


সহিংসতা ও নারী অধিকারের মধ্যে একটি পারস্পরিক সম্পর্ক আছে বলে সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, যেসব দেশে তরুণী ও নারীরা শিক্ষার সুযোগ কম পান এবং উত্তরাধিকার আইনে বৈষম্যের শিকার হন, সেসব দেশে সহিংসতার মাত্রা বেশি।


লিনমারি সারডিনহা রয়টার্সকে বলেন, আমি অনেক বেশি অবাক হয়েছি, এটি দেখে যে বিপুলসংখ্যক কিশোরী এরই মধ্যে সহিংসতার শিকার হয়েছে, এমনকি তা তাদের ২০তম জন্মদিনের আগেই।


সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, সহিংস আচরণগুলোর মধ্যে রয়েছে লাথি, আঘাত, ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টাসহ নানা ধরনের যৌন নিপীড়ন।


ডব্লিউএইচওর যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং গবেষণা বিভাগের পরিচালক প্যাসকেল অ্যালোটে বলেন, শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বয়সে এ ধরনের সহিংসতা তীব্র ও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিষয়টিকে অনেক বেশি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। সহিংসতা প্রতিরোধে ও ভুক্তভোগীদের সহায়তায় মনোযোগ দেয়া জরুরি।


প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সঙ্গীর হাতে সহিংসতার শিকার হওয়া কিশোরীদের স্বাস্থ্য, শিক্ষাগত অর্জন, ভবিষ্যৎ সম্পর্ক এবং আজীবন সম্ভাবনার ওপর বিধ্বংসী প্রভাব ফেলতে পারে। স্বাস্থ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি ট্রমা, বিষণ্নতা, উদ্বেগজনিত ব্যাধি, অপরিকল্পিত গর্ভধারণ, যৌন রোগ এবং অন্যান্য অনেক শারীরিক ও মানসিক সমস্যার শঙ্কাকে বাড়িয়ে তোলে।


এই সমীক্ষাটিতে প্রথমবারের মতো ১৫–১৯ বছর বয়সী মেয়েদের যারা ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মধ্যে রয়েছে, তাদের শারীরিক এবং/অথবা যৌন সহিংসতার শিকার হওয়ার ব্যাপকতার একটি বিশদ বিশ্লেষণ উঠে এসেছে। বলা হয়েছে, এটি বৃহত্তর সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক সেই কারণগুলোকে চিহ্নিত করে, যেগুলো তাদের ঝুঁকি বাড়ায়।


কিশোরীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা কমবেশি পৃথিবীর সবখানেই ঘটে। তবে ব্যাপকতার দিক থেকে অঞ্চলভেদে পার্থক্য তুলে ধরেছেন গবেষকেরা।


ডব্লিউএইচওর বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সহিংসতার হার সবচেয়ে বেশি ওশেনিয়া অঞ্চলে। এরপরই আফ্রিকা মহাদেশের অবস্থান। পাপুয়া নিউগিনির ৪৯ শতাংশ কিশোরী ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর কাছ থেকে সহিংসতার শিকার হন। গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের ৪২ শতাংশ কিশোরী এমন সহিংসতার শিকার। সহিংস ঘটনার সর্বনিম্ন হার দেখা গেছে ইউরোপ (১০%) এবং মধ্য এশিয়ায় (১১%)। দেশ ভেদে পরিসরটি ৬ শতাংশ থেকে ৪৯ শতাংশের মধ্যে বিস্তৃত।


নতুন এই সমীক্ষায় দেখা গেছে, সঙ্গীর হাতে সহিংসতার শিকার কিশোরীদের সংখ্যা নিম্ন–আয়ের দেশ ও অঞ্চলে সবচেয়ে সাধারণ ঘটনা। এসব দেশে মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত পড়াশোনা করা মেয়ের সংখ্যা বেশ কম। সেই সঙ্গে পুরুষদের তুলনায় সম্পত্তির মালিকানা এবং উত্তরাধিকারের আইনি কাঠামো দুর্বল এমন দেশেও কিশোরীদের এমন পরিণতি ঘটার হার বেশি।


এছাড়া বাল্যবিবাহ (১৮ বছর বয়সের আগে) উল্লেখযোগ্যভাবে এ ধরনের সহিংসতার ঝুঁকি বাড়ায়। যেহেতু এ ধরনের বিয়েতে সাধারণত স্বামী–স্ত্রীর বয়সের পার্থক্য ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা, অর্থনৈতিক নির্ভরতা এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা তৈরি করে- এ কারণে এ ক্ষেত্রে সহিংসতার আশঙ্কা বেশি থাকে।


এ ধরনের সহিংসতা নিরসনে বাল্যবিবাহ নিরোধ, লিঙ্গ নির্বিশেষে সম্পত্তির সমঅধিকার সুরক্ষিত করা, সমাজের সব ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করা, সর্বোপরি সমতাভিত্তিক সমাজ গঠনের ওপর জোর দিয়েছেন গবেষকেরা।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com