কাবুল ২০৩০ সালের মধ্যে পানিশূন্য হবে?
প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২৫, ১৭:৪২
কাবুল ২০৩০ সালের মধ্যে পানিশূন্য হবে?
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল। ৬০ লাখ অধিবাসীর এই শহরটির পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, নিষেধাজ্ঞা এবং কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতায় শিগগিরই শহরটি পানিশূন্য হয়ে পড়তে পারে।


নতুন এক প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে যে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আধুনিক কোনো শহর (কাবুল) পানিশূন্য হয়ে পড়তে পারে।


অলাভজনক প্রতিষ্ঠান মার্সি কর্পস প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, অতিরিক্ত পানি উত্তোলন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে।


সঙ্কটের গভীরতা


গত এপ্রিলে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত দশকে কাবুলের পানির স্তর ২৫-৩০ মিটার (৮২-৯৮ ফুট) নিচে নেমে গেছে। যদি এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে, তবে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে কাবুলের পানির স্তর শুকিয়ে যাবে। যা কাবুলের জীবনযাত্রার জন্য হুমকি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউনিসেফের পূর্বাভাস দিয়েছে যে, কাবুলের বাসিন্দাদের প্রাথমিক পানির উৎস কূপগুলোর প্রায় অর্ধেক ইতোমধ্যে শুকিয়ে গেছে। প্রতিবেদনে পানির ব্যাপক দূষণের বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ভূগর্ভস্থ পানির প্রায় ৮০ শতাংশ অনিরাপদ, ব্যাপক নোংরা, আর্সেনিক ও লবণাক্ত।


সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন ও সরকারের ব্যর্থতা


কাবুলের পানির এই সঙ্কটের পেছনে কারণ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন, সরকারের ব্যর্থতা এবং সম্পদ ব্যবহারের ওপর অব্যাহত চাপ। কারণ ২০০১ সালে কাবুল শহরের জনসংখ্যা ছিল ১০ লাখেরও কম, সেখানে বর্তমানে বসবাস করছে ৬০ লাখের বেশি মানুষ। আফগানিস্তানে দুই দশক ধরে মার্কিন সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপও এই সঙ্কটের পেছনে দায়ী বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। কারণ দেশটির বাকি অংশে অস্থিরতার কারণে অনেক মানুষ কাবুলে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।


কাবুল পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটির প্রভাষক এবং পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ আসেম মায়ার বলেন, “ ভূগর্ভস্থ পানির মজুত এবং বার্ষিক পানি উত্তোলনের ওপর ভিত্তি করে এই অনুমান করা হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই প্রবণতা প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। ফলে পূর্বাভাস বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে।


তিনি আরও বলেন, “যদি কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।”


আফগানিস্তান ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট প্রফেশনালস নেটওয়ার্কের জ্যেষ্ঠ গবেষক নাজিবুল্লাহ সাদিদ বলেন, রাজধানী কাবুলের পানির মজুত কবে শেষ হবে, তার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া অসম্ভব। তবে তিনি স্বীকার করেন যে, কাবুলের পানি সমস্যা ভয়ানক।


তিনি বলেন, “কেউ দাবি করতে পারে না যে, সর্বশেষ কূপটি কবে শুকিয়ে যাবে। কিন্তু আমরা যেটা জানি, সেটা হলো ভূগর্ভস্থ পানির স্তর যদি আরও নেমে যায়, তাহলে পানি পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।”


তিনি বলেন, “আমরা জানি সমাপ্তি কাছে।”


জাতীয় পরিসংখ্যান ডিরেক্টরেটের ২০২৪ সালের আগস্টের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফগানিস্তানে প্রায় তিন লাখ ১০ হাজার খনন করা কূপ রয়েছে। আর মার্সি কর্পসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজধানী কাবুলে প্রায় এক লাখ ১০ হাজার অনিয়ন্ত্রিত কূপ রয়েছে। জাতিসংঘের ২০২৩ সালের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কাবুলের ৪৯ শতাংশ কূপ শুকিয়ে গেছে। আর বাকিগুলো ৬০ শতাংশ সক্ষমতায় কার্যকর।


পানির সঙ্কট প্রসঙ্গে মায়ার বলেন, শহরের ধনী এবং গরীবের মধ্যে বৈষম্য তুলে ধরে। তিনি বলেন, “ধনী বাসিন্দারা গভীর নলকূপ বসাতে পারেন, আর গরীবদের জন্য সুযোগ খুব কম।”


তিনি বলেন, “সঙ্কট প্রথম আঘাত করে গরীবদের।”-আলজাজিরা অবলম্বনে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com