
ফিলিস্তিনের গাজায় গত ২১ মাস ধরে চলা যুদ্ধে বিপর্যস্ত জনজীবন। বাসস্থান পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। ফুরিয়ে গেছে খাদ্য। গাজাজুড়ে এখন মানুষ ক্ষুধায় কাতর। অনেক মা নিজে না খেয়ে সন্তানদের জন্য খাবার তুলে রাখছেন। পরিবারগুলো খাবার বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে খাচ্ছে। কেউ কেউ পুরো দিন না খেয়ে কাটাচ্ছেন। এর মধ্যেই গত কয়েক সপ্তাহে ত্রাণ আনতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর নির্মম হত্যার শিকার হয়েছেন ৭৪০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি।
শনিবার (৫ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর সহায়তা কেন্দ্রে খাবারের জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে অন্তত ৭৪৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও ৪ হাজার ৮৯১ জন আহত হয়েছেন।
আল জাজিরার গাজা সিটি প্রতিনিধি হানি মাহমুদ বলেন, “এটা একেবারে সংক্ষিপ্ত একটি হিসাব। বাস্তবে নিহত ও আহতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। ক্ষুধার্ত পরিবারগুলো যখন বেঁচে থাকার শেষ আশায় খাদ্য নিতে আসছে, তখনই এই হামলা।”
গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) প্রকল্প চালু হয়েছে গত মে মাসের শেষ দিকে। কিন্তু বিভিন্ন সূত্রে দাবি উঠেছে, এই প্রকল্পের নিরাপত্তা কর্মীরা ও ইসরায়েলি সেনারা খাদ্য নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি ছুঁড়ছে।
বার্তাসংস্থা এপি বলছে, গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনে (জিএইচএফ) নিয়োজিত কয়েকজন মার্কিন ঠিকাদার বলেন, তারা নিজেরাই দেখেছেন যে “নিরাপত্তাকর্মীরা অস্ত্র নিয়ে যেমন খুশি তেমন আচরণ করছে।”
জিএইচএফ এই অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করে বলেছে, “এই তথ্য ভিত্তিহীন। আমরা আমাদের সাইটগুলোর নিরাপত্তাকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখি।”
তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন জিএইচএফ-এর প্রতি সমর্থন বজায় রেখেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, “জিএইচএফ-ই একমাত্র সংস্থা যা গাজায় খাদ্য পৌঁছে দিতে পেরেছে।”
জুন মাসের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্র এই প্রকল্পে সরাসরি ৩০ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেয়। তবে জিএইচএফ-এর মাধ্যমে পরিচালিত সহায়তা বিতরণ কেন্দ্রে সহিংসতার মাত্রা আরও বাড়ে যখন শনিবার দক্ষিণ গাজার খান ইউনুসে জিএইচএফ-এর একটি সাইটে গ্রেনেড হামলায় দুই মার্কিন কর্মী আহত হন। তাদের অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানানো হয়েছে।
যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গাজায় চলমান জিএইচএফ প্রকল্পকে “অমানবিক ও প্রাণঘাতী সামরিকীকৃত প্রকল্প” বলে বর্ণনা করেছে।
মাজিদ আবু লাবান নামে এক ফিলিস্তিনি বলেন, “আমার বাচ্চারা টানা তিন দিন কিছু খায়নি। তাই বাধ্য হয়ে আমি সহায়তা কেন্দ্রে গিয়েছিলাম। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাতের বেলা নেটসারিম করিডোরের দিকে রওনা দিই।”
তিনি বলেন, “মানুষের ভিড় বাড়তেই ইসরায়েলি সেনারা আমাদের ওপর গোলাবর্ষণ শুরু করে। সবাই প্রাণে বাঁচতে পালাতে থাকে।”
বিবার্তা/এমবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]