
রাজধানীর সবজি বাজারে যদিও আগুন লাগেনি, কিন্তু দামের উত্তাপে পুড়ছে সাধারণ ক্রেতাদের পকেট। ৮০ থেকে ১০০ টাকার নিচে কোনো সবজি কেনা এখন যেন দুঃসাধ্য এক কাজ। কাঁচাবাজারের এই আগুন দামে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নগরীর নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ।
রবিবার (২৪ আগস্ট) রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়, শসা ৮০ টাকায়, ঢেঁড়স ৮০ থেকে ৯০ টাকা, টমেটো ১৮০ টাকা, পটল ৮০ থেকে ৯০ টাকা, বরবটি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া ধুন্দুল প্রতি কেজি ৮০ টাকা, কাকরোল ৮০ থেকে ৯০ টাকা, বেগুন (গোল) ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা, বেগুন (লম্বা) ৮০ থেকে ১০০ টাকা, কচু ৮০ টাকা, কুমড়া (জালি) প্রতি পিস ৬০ টাকা এবং লাউ প্রতি পিস ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কিন্তু গত বছরের ঠিক এই সময় বাজারে সবজির দামের তুলনায় বর্তমানে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বাজারের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছর এই সময় প্রতি কেজি পটল বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়, বরবটি ৫০ থেকে ৮০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ থেকে ৬০ টাকা, শসা ৩০ থেকে ৬৫ টাকা, করলা ৫৫ থেকে ৮০ টাকা এবং ঝিঙা ৫০ থেকে ৮০ টাকায়।
এদিকে পাইকারি বাজার, খুচরা বাজার, আড়তদার, ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে দাম বাড়ার বেশ কয়েকটি কারণ জানা গেছে।
কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রতি বছর জুলাই ও আগস্টে বৃষ্টি ও বন্যায় সবজির খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দামও বেড়ে যায়। এর প্রভাব পড়েছে সবজির বাজারে। বৃষ্টিতে সবজির খেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াকেই বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
তাদের মতে, এসব কারণে সরবরাহ কমেছে, দাম বেড়েছে।
এছাড়া গত বছরের তুলনায় এই সময়ে মূল্যবৃদ্ধির আরেকটি কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। তখন বেশ কিছুদিন চাঁদাবাজি, পরিবহন ও বাজারকেন্দ্রিক সিন্ডিকেট ছিল না। এতে সবজির দাম কমে গিয়েছিল। পরে আবার এগুলো শুরু হওয়ায় এখন দাম বেড়েছে।
পাশাপাশি বর্ষার কারণে বেশ কিছু মহাসড়কের পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে, যানচলাচলে সময় বেশি লাগছে। এ কারণে সবজি সরবরাহে ট্রাক ভাড়াও কিছুটা বেশি আদায় করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় আনতে। এছাড়া মালবোঝাই ট্রাক থেকে সড়কেরও কিছু জায়গায় বিভিন্ন ফি-র নামে টাকা আদায় করা হচ্ছে। ফলে ঢাকায় পরিবহনের খরচ বেড়েছে। সব মিলিয়ে বাজারে সবজির দাম বেড়েছে।
রাজধানীর রামপুরা বাজারে ক্রেতা সজিবুল ইসলাম বলেন, সবজির যে দাম তাতে আধা কেজি, ২৫০ গ্রাম করে কিনলাম। কিছু সবজির দাম এত বেশি যে কেনার সাহসও পাচ্ছি না। গত বছর এই সময় দাম কম ছিল, অথচ এখন সবজির দাম আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে।
মালিবাগ বাজারের আরেক ক্রেতা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মাছ, মাংস, মুরগির দাম বেশি থাকলে আমরা সবজি খাই। কিন্তু এখন সবজির দাম এত বেশি যে এটাও বিলাসিতা হয়ে গেছে। বাজারে ৮০-১০০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। শুধু পেঁপে ৩০ টাকা আর মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকা কেজি- এসব ছাড়া আর কিছু কেনা যাচ্ছে না। এগুলো খেয়ে কতদিন চলা যায়?
বাড্ডার বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা রমজান আলী বলেন, আগে যে বেগুন ৫০ টাকায় বিক্রি করেছি, এখন পাইকারি বাজারেই সেটা ১০০ টাকা কেজি কিনতে হচ্ছে। তাহলে বিক্রি করব কত টাকায়? গত বছর সবজির দাম কম ছিল ঠিকই, কিন্তু এখন কারওয়ান বাজার থেকে মাল কিনতে অনেক বেশি খরচ হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্নভাবে এখানে-ওখানে টাকা দিতে হচ্ছে। রাস্তা খরচ নামের খরচ আছে। পরিবহনে করে মাল আনার ভাড়া, কর্মচারী বেতন, দোকান খরচ সব মিলিয়ে দাম বাড়ছে সবজির।
মহাখালীর বিক্রেতা খোরশেদ আলম বলেন, বৃষ্টির কারণে কৃষকের খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সরবরাহ কমেছে। এছাড়া নতুন সবজি বাজারে আসতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। এখন বেশিরভাগ সবজির মৌসুম শেষ, যে কারণে বাজারে সবজির সরবরাহ কম। সব মিলিয়ে এই সময়ে এসে বাজারে সব ধরনের সবজির দামই বাড়তি যাচ্ছে।
রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজারের সবজি ব্যবসায়ী নাছির উদ্দিন বলেন, সবজি নিয়ে আসার পর ট্রাকে থাকা অবস্থাতেই বিক্রি হয়। আরেকজন কিনে নেন। এভাবে হাতবদলে দাম বাড়ে। কারওয়ান বাজারে রাতে পাইকারিভাবে যে দামে সবজি বিক্রি হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি দরে বিক্রি হয় খুচরা পর্যায়ে। হাত বদলায় আর দাম বাড়ে। এছাড়া এই সময় আবহাওয়ার কারণে জমিতে সবজি চাষ কম হয়, ফলে সরবরাহও কমে যায়। এ কারণে বর্তমানে বাজারে সবজির দাম বেশি।
বিবার্তা/এমবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]