গোপন নথি ফাঁস:
ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে কলকাঠি নেড়েছে যুক্তরাষ্ট্র
প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৩, ১৬:২৪
ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে কলকাঠি নেড়েছে যুক্তরাষ্ট্র
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে কলকাঠি নেড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বছরের এপ্রিলে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হন পাকিস্তানের ইমরান খান এবং তাঁর সরকার। এরপর থেকেই তিনি অভিযোগ করে আসছিলেন, তাঁর ক্ষমতাচ্যুতির পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত রয়েছে।


সম্প্রতি মার্কিন স্বাধীন সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্টারসেপ্ট ইমরান খানের সেই অভিযোগ করা ‘সাইফার বা সাংকেতিক বার্তা’ প্রকাশ্যে এনেছে। সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বাধে তখন নিরপেক্ষ অবস্থান নেন ইমরান খান। এতে ক্ষুব্ধ হয় যুক্তরাষ্ট্র।


মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্টারসেপ্ট জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর একটি অংশ পরিচয় গোপন রাখার শর্তে তাদের এ নথিটি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত মাজিদ খান এবং যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।


সেই সাংকেতিক বার্তায় ওয়াশিংটনে ডোনাল্ড লুর সঙ্গে আসাদ মজিদ খানের কথোপকথন তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পরপরই ইমরান খান মস্কো সফরে যাওয়ার বিষয়ে লু তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। যদিও লু ইমরান খানের রাশিয়া সফরকে একান্তই তাঁর নিজের সিদ্ধান্ত বলে অভিহিত করেন।


সেখান থেকে দেখা গেছে, ডোনাল্ড লু সেসময় ওয়াশিংটনে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আসাদ মজিদ খানকে বলেছিলেন, যদি অনাস্থা ভোট (ইমরান খানের বিরুদ্ধে) কার্যকর হয় তবে ওয়াশিংটন সব মাফ করে দেবে।


সেই সাংকেতিক বার্তা অনুসারে, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পাকিস্তানের অবস্থানকে ইঙ্গিত করে ডোনাল্ড লু আসাদ মজিদকে বলেন, (ইউক্রেন সংকট নিয়ে) পাকিস্তান কেন এমন মরিয়া অবস্থান নিচ্ছে সে বিষয়ে আমরা এবং ইউরোপীয়রা অবগত আছি। এমন অবস্থান গ্রহণ কি আদৌ সম্ভব! এটি কোনোভাবেই আমাদের কাছে নিরপেক্ষ অবস্থান বলে মনে হচ্ছে না।


এসময় ডোনাল্ড জানান, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কাছে তুলে ধরেছেন যে- এটি মনে হচ্ছে যে, এই সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর (ইমরান খান) একারই নেওয়া। জবাবে আসাদ মজিদ বলেন, এটি পাকিস্তানের অবস্থান বিষয়ে (যুক্তরাষ্ট্রের) সঠিক পাঠ নয়। আন্তসংস্থা আলোচনার মাধ্যমেই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।


বৈঠকে আসাদ মজিদ ডোনাল্ড লুর কাছে জানতে চান, পাকিস্তান ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিল- এ কারণেই কী যুক্তরাষ্ট্রের এমন প্রতিক্রিয়া? এতে ডোনাল্ড লু নেতিবাচক জবাব দেন। তিনি বলেন, এটি মূলত ইমরান খানের মস্কো সফরের কারণেই হয়েছে।


এর পরপরই ডোনাল্ড লু বলেন, প্রধানমন্ত্রীর (ইমরান খান) রাশিয়া সফরকে তাঁর একক সিদ্ধান্ত বলেই বিবেচনা করা হচ্ছে। তাই আমি মনে করি, যদি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব সফল হয়, তাহলে ওয়াশিংটন সব মাফ করে দেবে। অন্যথায়, সামনে এগিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।


বিশ্লেষকেরা বলছেন, ডোনাল্ড লুর এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ক্ষমতাচ্যুতির পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত রয়েছে বলে যে অভিযোগ রয়েছে সেটি অমূলক নয়।


ডোনাল্ড লুর এমন হুমকির জবাবে আসাদ মজিদ খান জানতে চান, ইউক্রেন ইস্যুতে পাকিস্তানের অবস্থান যদি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে, তবে কেন ওয়াশিংটন ইমরান খানের রাশিয়া সফরের আগেই বিষয়টি নিয়ে ইসলামাবাদের সঙ্গে আলোচনা করেনি। জবাবে ডোনাল্ড লু পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কারণ হিসেবে সামনে আনেন।


তিনি বলেন, ওয়াশিংটন চিন্তা করেছে যে, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আগেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেনি এবং আমরা পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করাকেই উপযুক্ত বলে মনে করেছি।


সাংকেতিক বার্তা অনুসারে, রাষ্ট্রদূত আসাদ মজিদ খান এই কথোপকথনে নিজের মূল্যায়ন সংযুক্ত করে ইসলামাবাদে পাঠিয়েছিলেন। সেখানে তিনি নিজের মূল্যায়নে লিখেছিলেন, ডোনাল্ড লু নিশ্চয়ই হোয়াইট হাউসের অনুমোদন ছাড়া এমন কঠোর বার্তা দেননি।


এই ফাঁস হওয়া বার্তার বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মুমতাজ জাহরা বালুচ পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডনকে বলেছেন, এই ফাঁস হওয়া নথি সম্পর্কে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। তথ্যমন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব এবং পরিকল্পনামন্ত্রী আহসান ইকবালও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।


তবে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ফাঁস হওয়া নথির ব্যাপারে বলেছে, এসব বিষয়বস্তু নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে না যে- পাকিস্তানের নেতা কে হবে সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোনো অবস্থান নিচ্ছে।


ইমরান খান অবশ্য গত বছরের মার্চ মাসেই ‘বিদেশি ষড়যন্ত্রের’ বিষয়ে নিজ সমর্থকদের অবহিত করেছিলেন। ওই সময় তার মিত্ররাও তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছিল। তখন তিনি বলেছিলেন, বিদেশিরা হুমকি দিয়েছে ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে না হয় পাকিস্তান এর পরিণতি ভোগ করবে। এমনকি ২৭ মার্চ একটি জনসভায় এ সংক্রান্ত একটি চিঠিও সবাইকে দেখিয়েছিলেন তিনি।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com