পৃথিবীর যে গ্রামে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়
প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২৩, ১৯:১২
পৃথিবীর যে গ্রামে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয় আমাদের পাশের দেশ ভারতেই। মেঘালয় রাজ্যের এই গ্রামটির নাম মৌসিনরাম।এখানকার বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১১ হাজার ৮০২.৪ মিলিমিটার। বৃষ্টির জন্য বিখ্যাত মেঘলায়ের আরেক শহর চেরাপুঞ্জি থেকে জায়গাটির দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। বিশেষ করে বর্ষায় এখানে রোদ্রালোকিত দিন পাওয়া কঠিন।


সাগর সমতল থেকে মৌসিনরামের উচ্চতা ১ হাজার ৪০০ মিটার। এই গ্রামটিতে লম্বা বর্ষাকাল ও তুলনামূলক ক্ষণস্থায়ী শুষ্ক মৌসুম। এখানে টানা বৃষ্টির দুটি কারণ ওঠে এসেছে বিভিন্ন গবেষণায়। বর্ষার সময় বঙ্গোপসাগর থেকে ওপরের দিকে ওঠে প্রচুর জলীয় বাষ্পসহ মেঘ। খাসি পর্বতে বাধা পেয়ে নিচে নেমে মৌসিনরাম ও চেরাপুঞ্জি এলাকায় প্রচুর বৃষ্টি ঘটায় এ মেঘ।


টানা বৃষ্টি মৌসিনরামের মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখতে কিছু কৌশল অবলম্বন করেন এখানকার অধিবাসীরা। বৃষ্টিপাতের শব্দের আওয়াজ এড়াতে এখানকার অধিকাংশ বাড়ি শব্দরোধী। নাপস নামে পরিচিত এখানকার ঐতিহ্যবাহী ছাতাগুলি শরীরের বেশির ভাগ অংশই ঢেকে রাখে। এটি স্থানীয়দের বৃষ্টি থেকে সুরক্ষার জন্য ব্যবহৃত খুব একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি। এই ছাতাগুলো বাঁশ ও কলা পাতা দিয়ে তৈরি। তুমুল বৃষ্টির জন্য স্কুলের ক্লাস প্রায়ই বাতিল হয় এই এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দারা বর্ষায় দিনের একটা বড় সময় বাড়িতে কাটায়। বর্ষাকালে এখানকার মানুষের প্রিয় খাবার তালিকায় থাকে মরিচ, টমেটো এবং গাঁজানো মাছ দিয়ে তৈরি টুংটাপ নামক এক ধরনের চাটনি এবং সিদ্ধ আলু।


কুয়াশাচ্ছন্ন পাহাড়চূড়া, সবুজ জমি, শীতল বাতাস, জলপ্রপাত এবং জিভে জল এনে দেওয়া সব খাসি খাবার সব মিলিয়েই মনোরম এক গ্রাম এই মৌসিনরাম। একসময় রাজ্যের বাইরে খুব কম মানুষই চিনত গ্রামটিকে। তবে এখানকার অনন্য আবহাওয়ার আবহাওয়াবিদদের আগ্রহ জাগিয়ে তোলার পর থেকে মৌসিনরামের খ্যাতি বাড়তে থাকে। তারপর পৃথিবীর সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল গ্রাম হিসেবে গিনেস বুকে নাম ওঠা ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি একে জনপ্রিয় করে তুলে। শান্ত গ্রামটি ধীরে ধীরে একটি পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তরিত হচ্ছে।


মৌসিনরামের অবস্থান পূর্ব খাসি পর্বতমালার দক্ষিণ ঢালে একটি পাহাড়ের চূড়ায়। গ্রামে যাওয়ার পথে জলপ্রপাত এবং বৃষ্টিতে ভেজা গাছপালা, খেতের মনোরম দৃশ্য চোখে পড়বে। গ্রামটি থেকে কিছুটা দূরে থাকতেই কুয়াশার ঘন আবরণ দৃষ্টিসীমা কমিয়ে দেবে। কখনো কখনো সেটা কেবল ১০ মিটার পর্যন্ত। তারপরে একটি খাঁড়া পাহাড়ের পাশ দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে এগিয়ে গেছে রাস্তাটি। একসময় একটি সাইন পোস্টের সামনে লিখে রাখা আছে ‘মৌসিনরাম ভিলেজ’।


আবহাওয়ার এই আশ্চর্য আচরণ ছাড়াও মৌসিনরামে উপভোগের মতো অনেক কিছু রয়েছে। ছোট্ট গ্রামটি ও আশপাশে ইতস্তত হেঁটে বেড়ালেই স্থানীয়দের জীবনের চমৎকার এক চিত্র পাওয়া যাবে। গ্রামের কেন্দ্র থেকে একটু দূরে একটি ফুটবল খেলার মাঠ রয়েছে। আবহাওয়া যাই হোক না কেন এখানে নিয়ম করে ফুটবল খেলে স্থানীয় তরুণেরা। এখনকার বাজার বারগুলো রাস্তার ধারে সারি সারি দোকানে ফল, সবজি, তাজা মাংস, বিদেশি ফুল এবং মসলা বিক্রি করেন স্থানীয়রা। এখানে থাকাকালীন, পুসা (কমলার খোসার গন্ধ মাখা ভাতের পিঠা) ও শাস (লাল চা) বিখ্যাত।


মৌসিনরামের আগে পৃথিবীর সবচেয়ে বৃষ্টিস্নাত এলাকার তকমা ছিল পাশের শহর চেরাপুঞ্জির। ১৯৭৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গড় হিসেব করলে মৌসিনরামের গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১১ হাজার ৮০২.৪ মিলিমিটার। অপরদিকে ১৯৭১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত হিসেব করলে চেরাপুঞ্জির বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১১ হাজার ৩৫৯.৪ মিলিমিটার। এই তথ্য নিশ্চিত করেন ইন্ডিয়ান মেটিওরোজিক্যাল ডিপার্টমেন্টের (আইএমডি) গুয়াহাটি কেন্দ্রের বিজ্ঞানী সুনীত দাস।


বর্ষায় কখনো কখনো টানা ১৫-২০ দিন বৃষ্টি হয় চেরাপুঞ্জিতে। কলম্বিয়ার তুতোনেন্দো আছে বৃষ্টিবহুল এলাকার তালিকায় তিনে। আর্দ্র উষ্ণমণ্ডলীয় রেইনফরেস্টের আবহাওয়া চোখে পড়ে এলাকাটিতে।


সম্প্রতি অরুণাচল প্রদেশের কলোরিয়াং নামের একটি গ্রামও প্রচুর বৃষ্টির জন্য আলোচনায় এসেছে। এখানকার বাসিন্দাদের দাবি ঠিকভাবে পরিমাপ করলে মৌসিনরামকে টেক্কা দেবে তাদের শহর। ১০০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত শহরটিকে ঘিরে রেখেছে উঁচু সব পর্বত। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাস ছাড়া বাকি সময়টা এই এলাকায় বৃষ্টির কোনো কমতি হয় না। তবে এটি এখনো কেবল শহরবাসীর দাবির মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে। তাই মৌসিনরামই এখনো পৃথিবীর সবচেয়ে বৃষ্টিস্নাত এলাকা। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, আউটলুক ইন্ডিয়া, ডেকান হেরাল্ড


বিবার্তা/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com