আবারও সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে অবৈধ নিয়োগ!
প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৩, ১৭:১৮
আবারও সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে অবৈধ নিয়োগ!
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

উদ্বোধনের পর সময় মতো চালু করতে না পারা, নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগসহ নানা কারণে বারবার সমালোচিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজ হাসপাতাল। এবার এই হাসপাতালটিতে আবারও অবৈধ নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।



বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুর রহমানকে কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উপাচার্যের একচ্ছত্র আধিপত্যে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এক অশনি সংকেত।



জানা যায়, অধ্যাপক এ কে এম ফজলুর রহমানের বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ কর্ম দিবস ছিল গত ২৫ জুন অর্থাৎ ২৬ জুন থেকে তিনি Post Retirement Leave (PRL) এ গেছেন। কিন্তু তার এই অবসরের আগে গত ১ জুন তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওভাসকুলার স্ট্রোক সেন্টার/ কার্ডিয়াক সেন্টার থেকে সিনিয়র চীফ কনসালটেন্ট ও কো অর্ডিনেটর হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিয়োগ দেওয়া হয়। এদিকে তার অবসরের পরে এই নিয়োগ বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটিও করা হয়নি, বরং তাকে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে দায়িত্ব পালনের দিব্যি সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।



উপাচার্যের সম্মতিতে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এই নিয়োগের অফিস আদেশে বলা হয়,এই আদেশ অবিলকে কার্যকর হবে এবং পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।



বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন চাকরির বর্ধিতকরণ এভাবে হতে পারে না। এক্ষেত্রে মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুমতি ব্যতীত তা কখনো সম্ভব নয়। কিন্তু এরপরেও কিভাবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি অনুমতি ছাড়া উপাচার্যের একক কর্তৃত্বে অবসরপ্রাপ্ত এই অধ্যাপককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে সমালোচনার ঝড় বইছে।


সূত্র জানায়, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এ কে এম ফজলুর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদের ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন হওয়ায় এক্ষেত্রে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তাকে এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।


এদিকে এই নিয়োগ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সোসাইটি অব কার্ডিওভাসকুলার ইন্টারভেনশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মীর জামাল উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে উপাচার্যকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।


এতে বলা হয়েছে, কার্ডিওলজির অনারারি প্রফেসর এবং সুপার স্পেশালিস্ট হাসপাতাল, বিএসএমএমইউ-এর কার্ডিওভাসকুলার অ্যান্ড স্ট্রোক সেন্টারের চিফ সিনিয়র কনসালটেন্ট এবং কো-অর্ডিনেটর হওয়ার জন্য বিএসসিআই-এর গতিশীল সভাপতি অধ্যাপক ডা. একেএম ফজলুর রহমানকে অভিনন্দন। বিএসএমএমইউতে কার্ডিওভাসকুলার পরিষেবার উন্নয়নের জন্য সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার জন্য প্রফেসর ড. এম শরফুদ্দিন আহমেদ, ভিসি বিএসএমএমইউকে অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।


প্রেরিত এই চিঠিতে নিয়োগে উপাচার্যের ভূমিকা নিয়ে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। এদিকে গত ২৬ জুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের এক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কনসালটেন্ট থেকে শুরু করে ধোপা, মালি পদ পর্যন্ত ৫৪৪ জনকে নিয়োগের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ফলে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়া অবসরপ্রাপ্ত এই অধ্যাপককে সিনিয়র চীফ কনসালটেন্ট ও কো অর্ডিনেটর হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার ঘটনায় উঠেছে নানা প্রশ্ন।


তবে এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, অবসরপ্রাপ্ত এই অধ্যাপককে বিনা বেতনে অনারারি হিসেবে কাজ করার কথা বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উনাকে যে ইন্টারভেনশনে কাজ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেখানে প্রচুর কাজ থাকে। তাহলে তিনি সেখানে কোন স্বার্থে কাজ করবেন? সংশ্লিষ্টদের এটাও অভিযোগ- তিনি যদি বেতন না পান তাহলে কি স্টেন্ট কোম্পানি হতে কমিশন নিবেন নাকি সরকারি যন্ত্রপাতি ক্রয় বিক্রয় করবেন?


অবৈধ এই নিয়োগের বিষয়ে অবগত করে মন্তব্য জানতে চাইলে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের অতিরিক্ত পরিচালক হলেন ডা. মো. রসুল আমিন (শিপন) বিবার্তাকে বলেন, এই বিষয়টা ভিসি স্যারকে প্রশ্ন করলে অর্থাৎ প্রশাসনকে জিজ্ঞেস করলে তারা এর উত্তর ভালো বলতে পারবেন। আমি তো বলতে পারি না। কারণ, আমি তো অর্ডার করি নাই।


তিনি বলেন, আমি জানি উনাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনারারি অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তার সাথে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে এটা দেওয়া হয়েছে। আমি এইটুকু জানি। তারপরেও পুরো জিনিসটা ভিসি স্যার কিংবা প্রশাসন বলতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর নিজের ক্ষমতাবলে এবং কত সংবিধিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সেটাও উল্লেখ করা আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের নিয়ম মতে এই কাজ করা হয়েছে।


অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপককে এভাবে নিয়োগ দেওয়া যায় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটা জায়গা, যেখানে ভিসি স্যার সংবিধি অনুযায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে যেকোনো কিছু করা সম্ভব। এটার সাথে অন্যান্য জায়গার তুলনা হয় না।


অবসরপ্রাপ্ত এই অধ্যাপককে বিধি লঙ্ঘন করে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. আব্দুল্লাহ আল হারুন বিবার্তাকে বলেন, আপনি হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করলেও তো উনাকে ( অবৈধ নিয়োগ পাওয়া অধ্যাপক) পাবেন না। যেহেতু আমাদের পদ আছে সেহেতু উনার কাছ থেকে সার্ভিস পেতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।


অবসরপ্রাপ্ত একজন অধ্যাপককে এভাবে নিয়োগ দেওয়া যায় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যাঁ- কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন মনে করলে এভাবে নেওয়া যায়।


অবসরপ্রাপ্ত এই অধ্যাপকের নিয়োগের বিষয়ে অবগত করে মন্তব্য জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বিবার্তাকে বলেন, উনার (অধ্যাপক এ কে এম ফজলুর রহমান) এটা নিয়োগ না, উনি অনারারি কাজ করবেন। আর এটা দেখেন, ঐখানে লেখা আছে। আর কে দিয়েছে আপনাকে এই কাগজ? আমার এই হাসপাতাল চালানোর জন্য রিটায়ার্ড পার্সনরাও কাজ করতেছেন এখানে। তাই উনার টা-ও কোনো নিয়োগ না, বেতন ছাড়া।


বিবার্তা/রাসেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com