‘এ পথ যদি না শেষ হয়.... বিখ্যাত গানের লাইনটা নিশ্চয়ই কারো অজানা নয়। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কন্ঠে ঠোট মিলিয়েছিলেন উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেন। ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন তারা কিন্তু হলো না শেস রক্ষা, সেই হয়ে গেলো তাদের বিয়ের বিচ্ছেদ।

তারকারা অনেকেই ভালোবেসে বিয়ে করছেন, তারপরও সেই সম্পর্কে মনোমালিন্য, অবশেষে বিচ্ছেদ। কখনো কি মনে হয় না আমরা একই পথে চলতে পারতাম? হয়তো মনে হয়। যদি আবার এক হওয়ার সুযোগ থাকে কেন নয়? পথ তো শেষ নয়। এমন দৃষ্টান্ত কে রাখতে পারেন?

এমন অনেক তারকা দম্পতি আছে যারা সমপেশায় থেকেও সুন্দর বোঝাপড়ার মাধ্যমে সংসার করে চলছে। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে সৈয়দ হাসান ইমাম, লায়লা হাসান, তারিক আনাম খান-নিমা রহমান, আলী যাকের-সারা যাকের, নাঈম-শাবনাজ, ওমর সানী-মৌসুমী, বিপাশা হায়াত-তৌকীর আহমেদ, জাহিদ হাসান-মৌ, রিয়াজ-তিনাসহ আরও অনেকের নাম চলে আসে। তারা প্রত্যেকেই ভদ্র তারকা দম্পতির চমৎকার উদাহরণ।

মনোবিজ্ঞানী আর সমাজবিজ্ঞানীদের কথায়, তারকারা তাদের বিয়ে আর সংসারকে রীতিমতো তাসের ঘর বানিয়ে ফেলেন।

বলিউডের অন্যতম সুখী দম্পতি বলা হতো হৃত্বিক রোশন এবং সুজান খানকে। কিন্তু ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে দুজনার বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তবে বিচ্ছেদ হলেও দুই সন্তানের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা গেছে এই জুটিকে। দুই ছেলের দায়িত্ব সমানভাবে পালন করেছেন তারা।

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, আবারও বিয়ে করতে যাচ্ছেন হৃতিক। সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই তার এই সিদ্ধান্ত। পাত্রী আর কেউ নন সুজান খান। হ্যাঁ, সাবেক স্ত্রী সুজানকেই বিয়ে করতে চলেছেন। ব্রাড- পিট অ্যাঞ্জেলিনা জোলিও কিন্তু দেখা করেন সন্তানের টানে প্রায় প্রায়ই খবর রটায় হয়তো দূরত্ব ঘুচছে।

পশ্চিমা দেশগুলোর মতো বাংলাদেশের শোবিজ জগতেও বিবাহবিচ্ছেদ এখন মামুলি ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে হারে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটছে, তাতে দেশের সাধারণ মানুষও তারকাদের নিয়ে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করছেন। অনেকের মতে, বিয়েটা বেশির ভাগ তারকার কাছে ছেলেখেলা হয়ে গেছে।

গত কয়েক বছরের মধ্যে অহনা, তিন্নি-হিল্লোল, মিমো, মোনালিসা, অপি করিম, মিম, হাবিব-রেহান, শখ-নিলয়, তাহসান-মিথিলা, মিলা-পারভেজ সানজারি, স্পর্শিয়া-রাফসান, বাঁধন-সনেট, নোভা-রায়হান, হূদয় খান-সুজানা, মুরাদ পারভেজ-সোহানা সাবাসহ অনেকের ঘর ভেঙেছে। আরও আগের কারও কথা বলতে গেলে শমী কায়সার-রিঙ্গো, হুমায়ুন ফরীদি-সুবর্ণা মুস্তাফা, জয়া আহসান-ফয়সাল, বিজরী-ইমন দম্পতিসহ অনেকের নাম বলা যায়।

বিদেশের এমন খবরের ভীড়ে বাংলাদেশিরাও কিন্তু কম নয়। প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন শাকিব খান- অপু বিশ্বাস। কিন্তু বিয়ের পরে সংসার টিকলো না। অনেক জল গড়িয়ে শাকিব খান- অপু বিশ্বাসের সম্পর্ক এখন বেশ। ছেলের স্কুলে যায় শাকিব। সেখানেই দেখা মিলে দুজনার। তাছাড়া একে অন্যকে নিয়ে এখন কোন কথাও বলতে চায় না। চুপিচুপি ছেলের বদৌলতে দেখা হয় রেস্টুরেন্টে।

সেলিব্রিটি জুটি তাহসান-মিথিলার দাম্পত্য জীবনের আনুষ্ঠানিক অবসান ঘটেছে। ভক্তকুল সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছেন তাদের একমাত্র সন্তান আইরা তেহরীম খানকে নিয়ে। অনুরোধও করছেন মেয়ের ভবিষ্যত চিন্তা করে তারা যেন আলাদা না হন। এখন আইরা আছেন মায়ের কাছে। অনেকেই বলছেন এ জুটি ফের এক হতে পারে। তার কারণও আছে অনেক। আইরা মায়ের কাছে থাকলেও প্রতি সপ্তাহে তাহসানের সঙ্গে দেখা হয়। আর এই সময় প্রায় প্রায়ই এক হয় তাহসান মিথিলা। সেক্ষেত্রে পুরনো সেই প্রেমের স্মৃতি কী ভেসে উঠে? হয়তো উঠে। আর কাছে আসার জন্য সেটাও কিন্তু কম নয়।

২০১১ সালের ২৬ জানুয়ারি দিনাজপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান ও দিনাজপুরের পিকনিক স্পট স্বপ্নপুরীর স্বত্বাধিকারী শিবলী সাদিককে হঠাৎ করে বিয়ে করেন কন্ঠশিল্পী সালমা। ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি সালমার কোল জুড়ে আসে এক কন্যা সন্তান। বিয়ের বছর দুয়েক আগে দিনাজপুরের স্বপ্নপুরীতে একটি অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করতে গেলে শিবলীর সাথে সালমার পরিচয় হয়। সেই সুত্র ধরেই দুই পরিবারের মধ্যস্থতায় সম্পূর্ণ ঘরোয়াভাবে তাদের বিয়ে হয়। গত বছর তাদের বিবাহ- বিচ্ছেদ হয়। শোনা যাচ্ছে, এখন তাদের বেশ ভালো সম্পর্ক। প্রথমদিকে সালমা তার স্বামীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করলেও এখন কিছু বলেননা। হয়তো এ দম্পতি নতুন কিছু ভাবতে পারেন।

তারকাদের সংসার ভাঙার পেছনে প্রধান কারণ হলো সন্দেহ এবং অবিশ্বাস। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, তারকাদের মধ্যে বহুগামী বিষয়টির প্রভাব বেশি। আর এ কারণেই তাদের সংসারে সহজেই টানাপড়েন দেখা দেয়, বিচ্ছেদে গড়ায় সম্পর্ক। যারা একে অপরকে সেক্রিফাইস করে চলতে পারেন তাদের সংসার ভাঙতে দেখা যায় না।

বিবার্তা/শারমিন