দীর্ঘ ৭ বছর পর ঢাকার মঞ্চে প্রদর্শিত হতে যাচ্ছে নাট্যদল ‘তীরন্দাজ রেপার্টরি’র ষষ্ঠ প্রযোজনা আলোচিত নাটক ‘কণ্ঠনালীতে সূর্য’।
আগামী ১৫ ডিসেম্বর (শুক্রবার) বাংলাদেশ মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে বিকেল সাড়ে ৫টা ও সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কণ্ঠনালীতে সূর্য’র দুটি প্রদর্শনী হবে।
মানুষ ও মানবিক গুণের দর্শনের উপর ভিত্তি করে রচিত কাব্যময় নাটক ‘কণ্ঠনালীতে সূর্য’র গল্পে দেখা যাবে মানুষের সহজাত পরিচিতির ব্যাস-বিন্যাসের চিত্র। নাটকের গল্প আবর্তিত হয়েছে এক আগন্তুককে ঘিরে। এখানে আগন্তুকের হঠাৎ উপস্থিতি আমাদের এক অদ্ভুত ধারণার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়।
আমরা জানতে পারি আগন্তুক এক চিকিৎসালয়ে এসেছেন তার কন্ঠনালীতে সূর্য আটকে গেছে। বহুকাল ধরে তিনি তা বহন করছেন। তিনি তা বের করতে চান বা চিরকালের জন্য হৃৎপিন্ডে রেখে দিতে চান। তার এমন অদ্ভুত দাবিতে নানা বিদ্রুপ করতে থাকেন চিকিৎসালয়ে আসা মিলি ও সমীর। তাতে দমে না গিয়ে আগন্তুকও কণ্ঠনালীতে আটকে থাকা সূর্যের একটা ফয়সালা করতে চান।
Time and space এর সমস্ত কনভেনশন ভেঙ্গে যায় যখন এই আগন্তুক আমাদের কাছে সৃষ্টির বিবর্তনের প্রতীক হয়ে দাঁড়ান - যেন মানুষ অনাদিকালের সুন্দরকে বয়ে চলেছে কণ্ঠনালীতে।
অথচ তখনই, মুহুর্তের মধ্যেই আমরা আবার অস্তিত্বের সংকটে পড়ে যেতে হয়, যখন দেখা যায় এই একই মানুষ ধীরে ধীরে মানবীয় রূপ থেকে কুকুরে পরিণত হয়। তবে কি এই যান্ত্রিক নগর সভ্যতা, এই পুঁজিবাদী আস্ফালন, ধর্মান্ধতা আমাদেরকে অস্তিত্বের সংকটে ফেলে দিচ্ছে? মানুষ আসলে কারা?
কণ্ঠনালীতে সুন্দরকে ধারণ করা মানুষ নাকি লোভের দর্শন আর ক্ষোভের দর্শন প্রচার করা কুকুর? এভাবেই বোধ করি নিরন্তর দ্বন্দ্বের ভেতর দিয়ে চলেছি আমরা। এক ভোর থেকে অন্য ভোরে আমরা প্রত্যেকেই আসলে একেকজন আগন্তুক।
পরম বাস্তবতা, পরাবাস্তবতা এবং অস্তিত্ববাদ এই তিনের সংকট, সংঘর্ষ আর মিলনের গল্পের নাটক কণ্ঠনালীতে সূর্য।
কণ্ঠনালীতে সূর্য এত বছর মঞ্চে অনুপস্থিত থাকার কারণ জানিয়ে অভিনেতা ও নির্দেশক দীপক সুমন বলেন, এই নাটকের মতোই সামগ্রিকভাবে আটকে যাওয়া সমাজের ভেতরে বন্দী আমরা। এই আটকে যাওয়া সমাজ বাস্তবতার প্রতিফলন হচ্ছে, ৭ বছর ধরে কণ্ঠনালীতে সূর্য নাটকটি মঞ্চস্থ হতে না পারা। শিল্পকলায় একটি বাহাস করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তার কারণে শিল্পকলায় আমাদের মঞ্চ বরাদ্দ বন্ধ করা হলো, এরপর দীর্ঘদিন ধরে হলের বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করে গেছি। কিন্তু পাইনি। এই প্রতিকূল পরিস্থিতির ভেতরেই চেষ্টা করছি, কীভাবে সূর্যোদয় ঘটানো যায়।
মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের রচনায় নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন দীপক সুমন। মঞ্চসজ্জা ও আলোক পরিকল্পনা করেছেন ফয়েজ জহির। এতে আগন্তুক চরিত্রে অভিনয় করবেন দীপক সুমন আর চিকিৎসক চরিত্রে কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন।
মোহিত চট্টোপাধ্যায়কে তার জীবিতকালে একটা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো- তিনি নিজেকে একজন absurd নাটকের নাট্যকার বলে মনে করেন কিনা।
এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তরে তিনি বলতেন তিনি তা নন। তবে যেহেতু তিনি একজন কবি-তাই তার নাটকে কাব্যময়তা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কণ্ঠনালীতে সূর্য সেই কাব্যময়তারই প্রকাশ।
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]