
৭ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেল শাহরুখ খানের ‘প্যান ইন্ডিয়ান’ ছবি ‘জওয়ান’। তামিল পরিচালক অ্যাটলি, দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রির অভিনেত্রী নয়নতারা এবং তামিল অভিনেতা বিজয় সেতুপতি আত্মপ্রকাশ করলেন ‘জওয়ান’-এ।
ঘড়িতে তখন ঘণ্টার কাঁটা ৫টার ঘরে পৌঁছেছে। ভোরের আলো তখনও ভাল মতো ফোটেনি। কিন্তু সিনেমাহলের ভিতর যেন অন্য হাওয়া বইছে। শাহরুখ অনুরাগীদের গলা ফাটানো চিৎকারে কান পাতা দায়।
সাতসকালেও যখন হাউসফুল, তখন দর্শকের এই ছবি ঘিরে, শাহরুখকে ঘিরে কী পরিমাণ প্রত্যাশা রয়েছে তার আঁচ পাওয়া যায় বইকি! সকলের মনে একই প্রশ্ন, শাহরুখের ‘জওয়ান’ হিট হবে তো?
‘জওয়ান’-এর মূল কাহিনি দু’টি আলাদা সময়ের প্রেক্ষাপটকে ঘিরে। বিক্রম রাঠৌর এবং আজাদের জীবনের কাহিনি। তাদের পাওয়া-না পাওয়ার, হারজিতের গল্পকে কেন্দ্র করে এগিয়ে চলে ‘জওয়ান’। ছবি শুরু হতে না হতেই অ্যাটলি যেন তাঁর নিজস্বতার প্রমাণ দিলেন। প্রতিটি ফ্রেমে তাঁর হাতের ছোঁয়া রয়েছে, ফুটে উঠেছে দক্ষিণী ছাপও। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অনিরুদ্ধ রবিচন্দ্রের অসাধারণ আবহসঙ্গীত বা বিজিএম। ‘জওয়ান’-এর সূচনাপর্ব থেকেই ক্যামেরার কাজ, ধীর গতির অ্যাকশন দৃশ্য, আলো-আঁধারির খেলা, বিজিএম— সব যেন এক নিমেষে দর্শককে মন্ত্রমুগ্ধ করে ফেলার জন্য যথেষ্ট। উচ্চবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত সম্প্রদায়ের পার্থক্য থেকে শুরু করে নানা ধরনের সামাজিক বার্তাও ফুটে উঠেছে ‘জওয়ান’-এ।
সিদ্ধার্থ আনন্দের পরিচালনায় ‘পাঠান’-এর সঙ্গে যদি অ্যাকশন সিকোয়েন্সের তুলনা টানা যায়, তবে ‘জওয়ান’ সে ক্ষেত্রে হাজার ধাপ এগিয়ে। ছবিতে বিক্রম এবং আজাদের চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাহরুখ। চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে কখনও কেশহীন অবস্থায়, কখনও বয়স্কের সাজে পর্দায় ধরা দিয়েছেন অভিনেতা। প্রতিটি ‘লুক’-এই শাহরুখ অনবদ্য। কখনও শাহরুখের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন নয়নতারা, কখনও বা দীপিকা। কিন্তু অ্যাকশন ঘরানার ছবিতে চরিত্রদের এই প্রেমালাপ ‘জওয়ান’-এর ছন্দে তাল কাটেনি। দক্ষিণী অভিনেত্রী হিসাবে বলিউডে প্রথম কাজ করলেন নয়নতারা। অভিনয়ের ক্ষেত্রে ভাষাগত পার্থক্যের জন্য কোনও রকম জড়তা লক্ষ্য করা যায়নি তাঁর মধ্যে। বরং তাঁর সাবলীল অভিনয় সত্যিই প্রশংসনীয়।
খলনায়কের চরিত্রে যথাযথ বিজয় সেতুপতি। দক্ষিণী অভিনেতা হিসাবে বলিউডে প্রথম কাজ হলেও এর আগে হিন্দি ভাষায় অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে বিজয়কে। চলতি বছরে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পায় ওয়েব সিরিজ় ‘ফরজ়ি’। এই সিরিজ়ে অভিনয় করেছিলেন বিজয়। অভিনেতা হিসাবে তিনি যে প্রথম সারির, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু হিন্দি ভাষায় তিনি তেমন সড়গড় ছিলেন না বলে তা ধরা পড়েছিল ক্যামেরায়। ‘ফরজ়ি’তে বিজয়ের মধ্যে যে জড়তা দেখা গিয়েছিল, তা ‘জওয়ান’-এ কোথায় যেন উবে গিয়েছে। এই ছবিতে খলনায়কের চরিত্রে বিজয়ের মতো অভিনয় করেছেন বিজয়। তবে ছবির প্রথমার্ধের তুলনায় দ্বিতীয়ার্ধে যেন নিজেকে মেলে ধরলেন বিজয়।
ক্যামিয়ো চরিত্রে দীপিকা অভিনয় করেছেন ঠিকই, কিন্তু পর্দায় তিনি সময় মন্দ পাননি। সেই সময়ের মধ্যেই জোরদার অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকের মনে জায়গা করে নেবেন তিনি।
ভরপুর অ্যাকশন, জোরদার সংলাপ, হাস্যরসের ছিটেফোঁটা, রোম্যান্স— সব মিলিয়ে এই ছবিতে বিরিয়ানির মশলা ভরপুর। পরিচালক অ্যাটলি রেঁধেছেনও পাকা রাঁধুনির মতো। প্রায় তিন ঘণ্টার দীর্ঘ ছবি হলেও এক মুহূর্তের জন্যও লয়চ্যুত হয়নি ‘জওয়ান’।
পরতে পরতে টানটান উত্তেজনা তৈরি করতে ওস্তাদ অ্যাটলি। ‘থেড়ি’, ‘মার্শাল’, ‘বিজিল’ ছবিতেও তিনি নিজের এই ছাপ ফেলেছিলেন। অনিরুদ্ধও তাঁর ম্যাজিক দু’হাতে ঢেলেছেন ‘জওয়ান’-এ।
ছবি মুক্তির আগে দর্শকের একাংশ দাবি করেছিলেন, প্রথম ঝলকেই ছবির সব চমক প্রকাশ পেয়ে গিয়েছে। তা হলে সিনেমার জন্য আর থাকল কী? কিন্তু যেখানে পরিচালক অ্যাটলি এবং অভিনেতা শাহরুখ, সেখানে চমকের অনুপস্থিতি থাকবে, তা কী করে হয়!
‘জওয়ান’-এ কয়েকটি চরিত্রকে খুব যত্নে লুকিয়ে রেখেছেন অ্যাটলি যা দর্শকের কাছে ‘সারপ্রাইজ়’ই বটে।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]