পাঁচ ভাই-বোনের সংসারের অভাব ঘোচানোর তাগিদে অনেক কষ্ট আর ঋণ করে ২০০৫ সালে পাড়ি দিয়েছিলাম মরুদেশ সৌদি আরব।
সংসারের ঘানি টানতে দীর্ঘ ১৩ বছর প্রবাসে কাটিয়ে দিলাম। এককথায় সংসারের সুখের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিলাম প্রবাসের মাটিতে। এভাবে কখন যে জীবনের ৩৪ বসন্ত কেটে গেলো বুঝতে পারিনি।
প্রথম দিকে যা বেতন পেতাম সবই মাসে মাসে বাড়িতে পাঠিয়ে দিতাম। এরই মাঝে বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় সংসারের পুরো চাপ আসে আমার ওপর।
একদিন বাবা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ায় এক বন্ধুর কাছ থেকে এক লাখে বছরে ৩০ হাজার টাকা সুদে চার লাখ টাকা ঋণ নিলাম, আরো দুই লাখ টাকা প্রবাসী বন্ধুদের কাছ থেকে ধার নিয়ে বাবাকে পাঠালাম।
ঋণ শোধের চিন্তায় কত রাত যে নির্ঘুম কেটেছে! মর্মে মর্মে বুঝতে পারলাম, ঋণ থাকলে জীবনটা কত যন্ত্রণা ও কষ্টের! মাসশেষে যা বেতন পাই তার বেশিরভাগই ঋণ শোধ করতে বেরিয়ে যেত।
এ সময় বাড়িতে আগের মতো টাকা বাড়িতে দিতে পারতাম না বলে বাড়ির সবাই আমাকে নানা কথা বলতে থাকে। খুব খারাপ লাগতো তখন।
মনে হতো, দেশ ছেড়ে কেন একা একা জ্বলছি দূর প্রবাসে! আমি তো চেয়েছিলাম সবাইকে নিয়ে সুখে থাকতে। কী পেলাম আপনজনদের থেকে যন্ত্রণা ছাড়া? কাদের জন্য জীবনের অনেকগুলো বছর যন্ত্রণার প্রবাসে ঘাম ঝরিয়েছি, কাদের সুখের জন্য তবে সৌদি মরুতে কবর দিয়েছি আমার যৌবন!
একটা সময় ঋণ শোধ হলো। দীর্ঘ সৌদি প্রবাসে থাকার কারণে আরবি ভাষাটা বলতে পারতাম ভালোই। ফলে ভালো কাজ জুটলো আর অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকল।
প্রবাসের শেষ বছরটা কিছুটা ভালো কাটছিল।
এ সময় আমি একটি আন্তর্জাতিক চেইন শপের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতাম।
এদিকে আমার স্ত্রী দেশে স্থায়ীভাবে ফেরার তাগিদ দিতে থাকে। অবশ্য এর মধ্যে বেশ কয়েকবার দেশে গিয়েছি স্বল্প সময়ের জন্য। আমার সন্তানও হয়েছে। তাকেও খুব দেখতে ইচ্ছা করে। তার শৈশবের দিনগুলোতে পাশে না থাকার যন্ত্রণাও আমাকে কুঁরে কুঁরে খায়। কিন্তু দেশে ফিরে কী করবো, সে চিন্তাও আমাকে পেয়ে বসেছিল। এটা ছিল একটা প্যারাডক্স! ফেরা আর না ফেরার দোলাচল।
কিন্তু আমার সিদ্ধান্ত যেন প্রকৃতি নিয়ে নিলো। সৌদি সরকারের অথর্নৈতিক সংস্কার উদ্যোগের কারণে সব ধরনের দোকানে সৌদি নাগরিক ব্যতীত অন্য দেশের কর্মীদের নিয়োগে আইনগত নিষেধাজ্ঞা এলো। ফলে চাকরি ছেড়ে নতুন চাকরির পেছনে ছুটতে হচ্ছিল।
এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি, ‘‘অনেক হয়েছে, দেশে ফিরে যাবো। সেখানেই কিছু করার চেষ্টা করবো।''
গত এপ্রিলে দেশে ফিরে আসি। পেছনে পড়ে থাকে পরাহত প্রবাসজীবন।
মো শফিউল্লাহর ব্লগ থেকে
বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]