শামীমা দোলা। একজন প্রগতিশীল সাংবাদিক। সংবাদ উপস্থাপিকা ও অনুষ্ঠান সঞ্চালক। শৈশব থেকেই বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে বিতার্কিক ও আবৃত্তিকার হিসেবে যথেষ্ট সুনাম ছিল তার। পড়াশুনার পাশাপাশি তিনি ছাত্র রাজনীতি করতেন। কিন্তু জীবনের পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন সাংবাদিকতাকে।
বর্তমানে তিনি একাত্তর টেলিভিশনে অর্থনীতি বিটে সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে কাজ করছেন। সেইসাথে একাত্তর টেলিভিশনে নিউজ প্রেজেন্টার ও জনপ্রিয় টকশো ‘অর্থযোগ’ এর সঞ্চালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। সাংবাদিক হিসেবে পেয়েছেন বেশ কয়েকটি জাতীয় পুরস্কার। এ পেশায় সম্মান ও সম্মানীর মেলবন্ধন দেখে সাংবাদিক হিসেবে তিনি কাটাতে চান বাকি জীবন।
কথা হয় এই প্রগতিশীল সাংবাদিকের সাথে। কথায় কথায় তিনি জানালেন জীবনের নানান অভিজ্ঞতার কথা। বিবার্তার পাঠকদের জন্য সম্প্রচার-সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিক শামীমা দোলার বৈচিত্র্যময় জীবনের কথা জানাচ্ছেন উজ্জ্বল এ গমেজ।
দোলা নানা-নানীর কাছে থেকে পড়ালেখা শুরু করেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ভালো রেজাল্টের কারণে বৃত্তি পেয়েই পড়াশুনা শেষ করেছেন। বলতে গেলে লেখাপড়ায় একদমই টাকা-পয়সা খরচ হয়নি তাঁর। প্রায় বিনা খরচেই শেষ করেছেন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাজীবন।
এসএসসির রেজাল্ট যে এতো ভালো হবে, তা অনেকের মতো দোলাও আশা করেননি। ৭০০-এর মতো মার্কস পেয়ে পাস করেছিলেন। এইচএসসিতেও সিদ্ধেশ্বরী কলেজ থেকে একইভাবে ভালো রেজাল্ট করেন তিনি।
এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানেই ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। প্রথমে টিএসসিকেন্দ্রিক স্রোত আবৃত্তি সংগঠন নামে একটি কালচারাল সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন।
কর্মজীবন শুরুর বিষয়ে দোলা বলেন, আমার চাকরিজীবন শুরু সাংবাদিকতা দিয়ে নয়। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে কয়েক মাস করে কাজ করে ২০০৬ সালে সাংবাদিকতা শুরু করি। এখনো সাংবাদিকতা পেশাতেই আছি। এই পেশাটাকে আমি উপভোগ করি। ২০০৬ সালে দৈনিক ''আমাদের সময়'' পত্রিকায় ইন্টারন্যাশনাল ডেস্কে কাজ শুরু করি। এরপর রিপোর্টিংয়ে চলে আসি। রেডিও আমার, এবিসি রেডিও, বৈশাখী টেলিভিশন হয়ে ২০১২ সালে একাত্তর টিভির সাথে যুক্ত হই।
পেশা হিসেবে সম্প্রচার-সাংবাদিকতাকে বেছে নেয়ার কারণ হিসেবে দোলা জানান, আমি সম্প্রচার-সাংবাদিকতাকে ভালোবাসি। আমি এটিকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছি।
আলাপ প্রসঙ্গে জানা গেল, দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে যেসব ‘বিজনেস শো’ সম্প্রচার করা হয় এগুলোর অন্যতম জনপ্রিয় অনুষ্ঠান একাত্তর টিভির ‘অর্থযোগ’। গতানুগতিক ফরমেট থেকে বেরিয়ে ভিন্নভাবে সাজানো অনুষ্ঠানটিতে রয়েছে অর্থনীতি আর বাণিজ্য নিয়ে সংবাদ প্রতিবেদন। সেই সাথে নির্ধারিত একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা। জনপ্রিয় এই টক শো সঞ্চালনা করেন শামীমা দোলা ও জুলিয়া আলম। দেশের সবগুলো ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সব-ক'টি বিজনেস শোর মধ্যে অর্থযোগের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি বললে অত্যুক্তি হবে না। শামীমা দোলার স্পষ্ট উচ্চারণে প্রাণবন্ত, সাবলীল উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানটিকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে। রিপোর্টিংয়ের পাশাপাশি বিজনেস শো'র মতো কঠিন, জটিল বিষয়কে সহজ আর জনপ্রিয় করে তুলেছেন তিনি তার সাবলীল উপস্থাপনায়।
বিশিষ্ট জনদের মূল্যায়ন
অর্থযোগ অনুষ্ঠান সম্পর্কে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) করদাতা ইউনিটের কমিশনার মতিউর রহমান বলেন, রাজস্ব প্রদানের অজনপ্রিয় বিষয়টি গণমাধ্যমের কারণেই জনগণের কাছে ভীতিকর নয়। মিডিয়ার সহযোগিতার কারণেই রাজস্ব আদায় বাড়ছে। গণমাধ্যমে যাদের ভূমিকা অন্যতম তাদের মধ্যে একাত্তর অর্থযোগ আর প্রতিবেদক শামীমা দোলা অন্যতম।
দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি, ইন্দো-বাংলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমেদ বলেন, দেশের অর্থনীতি বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্যর জন্যে দরকার সময়োপযোগী পলিসি। গণমাধ্যম এই বিষয়গুলো তাদের সংবাদে তুলে ধরে পাশে থাকছে। দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে গণমাধ্যমও ভূমিকা রাখছে। এসময়ে যে ক'জন অর্থনৈতিক প্রতিবেদন করেন তাদের মধ্যে নিঃসন্দেহে অন্যতম অর্থযোগ আর শামীমা দোলা।
সাংবাদিক হিসেবে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের ৭০তম ও ৭১তম অধিবেশনে যোগ দেন। এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বব্যাংকের বৈঠক, মালয়েশিয়া ও লন্ডন এক্সপোসহ ১৫/১৬ টির মতো আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ইভেন্টে সংবাদ কাভার করেছেন।
দেশের বাইরে এসব আন্তর্জাতিক ইভেন্টে গিয়েও প্রবাসীদের কাছে অর্থযোগ অনুষ্ঠানের প্রশংসা শুনেছেন। এ প্রসঙ্গে দোলা বলেন, প্রবাসীরাও নিয়মিত আমার সঞ্চালনায় অর্থযোগ অনুষ্ঠান দেখেন। তারা অনুষ্ঠানের অনেক প্রশংসা করেছেন। এ অনুষ্ঠান দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে অনেক ভূমিকা রাখবে বলেও জানান ওই প্রবাসী দর্শকরা। অনুষ্ঠানটি একাত্তর টেলিভিশনকে নিয়মিত চালানোর অনুরোধ করেছেন তারা।
অর্থনীতি নিয়ে অসামান্য রিপোর্টিংয়ের জন্য শামীমা দোলাকে বিভিন্ন পুরস্কার দেয়া হয়। এগুলো হলো এনবিআর-২০১৭, সমধারা সম্মাননা-২০১৬, বাংলাদেশ মহিলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সেরা প্রতিবেদক পুরস্কার ২০১৫-১৬।
সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনেক ক্ষেত্রে রয়েছে শামীমা দোলার বিচরণ। ফ্যামিলি প্ল্যানিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর যুব সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত। যুব সাংসদ নির্বাচন, বিতর্ক, অভিনয় প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বেসরকারী গণমাধ্যম উন্নয়ন সংগঠন ‘সমষ্টি’, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বৃহৎ করদাতা ইউনিট এলটিইউসহ বেশ কিছু সংগঠনের সেরা রিপোর্টার সম্মাননায় জুরি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
সাংবাদিকদের বেশ কয়েকটি সংগঠনে নেতৃত্ব দেবার অভিজ্ঞতাও রয়েছে তাঁর। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাহী পরিষদে দু’বার নির্বাচিত হয়েছেন। একবার সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে প্রথম ইসি মেম্বারও হয়েছিলেন তিনি।
দোলা অবসরে গান শোনেন, বই পড়েন আর ভালবাসেন পেন্সিল স্কেচ করতে এবং দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াতে। নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হতে এবং তাদের সম্পর্কে জানার একটা কৌতূহল কাজ করে তাঁর মনে। ইতোমধ্যে পনের থেকে ষোলটি দেশে ঘুরেছেন এই ভ্রমণপ্রেমী।
পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা প্রসঙ্গে দোলা বলেন, এটি অর্থ বিত্ত না দিলেও গৌরবজনক মহান পেশা। সাংবাদিক থাকতেই চাই আজীবন।
বিবার্তা/উজ্জ্বল/হুমায়ুন/মৌসুমী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]