শিরোনাম
​বেকারদের কর্মসংস্থানে অবদান রাখতে চায় এক্সনহোস্ট
প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০১৮, ১৬:৩৪
​বেকারদের কর্মসংস্থানে অবদান রাখতে চায় এক্সনহোস্ট
উজ্জ্বল এ গমেজ
প্রিন্ট অ-অ+

ইচ্ছা ছিল কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংপড়বেন , কিন্তু সুযোগ না পেয়ে পড়েন সমাজবিজ্ঞানে। তবে হাল ছাড়েননি তিনি। বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘেঁটে ওয়েবসাইট তৈরির বিভিন্ন কলাকৌশল রপ্ত করতে শুরু করেন। এক সময় নিজের চেষ্টায় দাঁড় করালেন একটা ওয়েবসাইট। সেই যে পথ চলা শুরু, তিনি এখন একটা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।


বলছিলাম ডোমেইন হোস্টিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এক্সনহোস্ট’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সালেহ আহমদের কথা।


সম্প্রতি বিবার্তার কার্যালয়ে সালেহ আহমেদের সঙ্গে এক আড্ডায় উঠে আসে তাঁর উদ্যোক্তা-জীবনের কথা। বিবার্তার পাঠকদের ওই গল্প জানাচ্ছেন উজ্জ্বল এ গমেজ


ছোটবেলা থেকেই চাকরির প্রতি আগ্রহ ছিল না সালেহ আহমদের। নিজে কিছু একটা করবেন - এমনটাই ছিল তাঁর স্বপ্ন। স্কুলজীব থেকেই কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহ ছিল অনেক। সেই আগ্রহের কারণেই কলেজে ভর্তি হয়ে তাঁর কম্পিউটারে হাতেখড়ি হয় ট্রেনিং সেন্টারের মাধ্যমে।



সালেহ আহমেদ সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর শেষ করেন সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহের কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তিনি একটা কম্পিউটার কেনেন। ওই সময় ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পেয়ে কিছু একটা শেখার নেশা জাগে মনে। সেই নেশার তাগিদে ওয়েব ডেভেলপমেন্টে হাতেখড়ি। যেহেতু ওয়েবসাইট তৈরি করার পর হোস্টিংয়ের প্রয়োজন হয়, সেই চিন্তা থেকেই হোস্টিং নিয়ে ব্যবসা করার আগ্রহ জন্মে তাঁর। যেই ভাবা সেই কাজ।


২০০৯ সালের শেষের দিকে দেশের বাইরে থেকে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে দেয়ার কাজ পান সালেহ। সৌদি আরব থেকে এক ব্যক্তি তাদের থ্রি স্টার হোটেলের জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করতে তাঁর সাথে যোগাযোগ করেন। কোনো আগপিছ না ভেবে কাজটি করতে রাজি হয়ে যান সালেহ। প্রথমে বিদেশের আত্মীয়ের কাছ থেকে ডলার ধার নিয়ে ডোমেইন রিসেলার অ্যাকাউন্টে ফান্ড আপলোড করেন এবং সেই সাথে একটা রিসেলার হোস্টিং কেনেন। চালু করেন নিজের ডোমেইন হোস্টিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ‘অবসর ডটকম’ (obosor.com)। এভাবেই শুরু তাঁর।


এ বিষয়ে খুব বেশি ধারণা না থাকায় প্রথম দিকে তাঁকে নানান ধরনের প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হয়েছে। এ বিষয়ে সালেহ বলেন, প্রথমেই আমি যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি তা হচ্ছে- পেমেন্ট দেয়া ও নেয়া। শুরুতে ডোমেইন ও হোস্টিংয়ের বিল দেয়ার জন্য কোনো একজন ফ্রিল্যান্সারের সাহায্য নিতে হতো। সঠিক কম্পানি চিনতে না পারায় প্রথম মাসেই ওয়েবসাইটের ডাটাসহ ৩ হাজার টাকা লোকসানে পড়ি। কারণ যে কম্পানি থেকে সার্ভিস নেয়া শুরু করেছিলাম, কোনো ঘোষণা ছাড়াই এক মাস পর ওই কম্পানি বন্ধ হয়ে যায়। হোস্টিং কেনার ক্ষেত্রে প্রথমেই কম দামকে প্রাধান্য দেয়াটা ছিল আমার আরেকটা ভুল। শুধু তাই নয়, শুরুতে বাস্তবতা চিন্তা না করে শুধু লাভের কথাই চিন্তা করেছিলাম। ব্যবসায়িক জ্ঞান তো একেবারেই কম ছিল। কীভাবে মার্কেটিং করবো, কাস্টমারের কাছে পৌঁছাবো - এসব বিষয়ে তেমন কোনো ধারণাই ছিল না।



অনলাইনে পরিচয়ের সুবাদে পরিচয় হয় মাছুমুল হক নামের এক তরুণের সাথে। তিনিও ‘স্কাইহোস্ট বিডি’ নামের ডোমেইন-হোস্টিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন। এক পর্যায়ে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। তখন তারা চিন্তা করলেন আলাদা আলাদা ব্যবসা করার চেয়ে দুজন যদি একসাথে কাজ করেন তাহলে তাঁদের স্বপ্ন আরও এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। এমন ভাবনা থেকেই ২০১২ সালে দুই প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করে তারা চালু করেন ‘হোস্ট পেয়ার’। ২০১৭ সালের শুরুর দিকে ট্রেডমার্ক জটিলতার কারণে হোস্টপেয়ারের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘এক্সনহোস্ট’ (www.exonhost.com)। বর্তমানে এ নামেই সেবা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।


গ্রাহকবান্ধব সেবা দেয়ার মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাইরেও এক্সনহোস্ট বেশ পরিচিত হয়ে ওঠে। বর্তমানে ক্লাউড লিনাক্স, সিপ্যানেল, লাইটস্পিড, ক্লাউডফ্লেয়ার, সফটাকিউলাসসহ বিশ্বের নামকরা বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সাথে পার্টনারশীপ রয়েছে এক্সনহোস্টের। বিশ্বের প্রায় ৭০ দেশে ডোমেইন হোস্টিং সেবা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। দেশে-বিদেশে মিলিয়ে ৫ হাজারের বেশি কাস্টমার রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।


ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট থেকে শুরু করে কর্পোরেট ওয়েবসাইটের জন্য ডোমেইন, ওয়েব হোস্টিং, ভার্চুয়াল সার্ভার, ডেডিকেটেড সার্ভার ও ক্লাস্টার সার্ভার সলিউশন দিচ্ছে এক্সনহোস্ট। দেশি-বিদেশি কর্মীদের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা কাস্টমার সাপোর্ট নিশ্চিত করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন।


মানসম্মত গ্রাহকসেবার কারণে এরই মধ্যে দেশের প্রযুক্তি খাতে একটা আলাদা জায়গা করে নিয়েছে এক্সনহোস্ট। এরই স্বীকৃতি মিলেছে গত ২০১৬ সালে। দেশের উদ্যোক্তাদের প্লাটফর্ম ‘চাকরি খুঁজব না চাকরি দেব’ গ্রুপ ও ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে এক্সনহোস্টকে বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত করা হয়।



তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে সালেহ বলেন, যেকোনো ব্যবসাতেই ঝুঁকি নেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। এছাড়া সফল হওয়ার জন্য লাগবে প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি। এর সাথে একাগ্রতা, সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করলে যে কোনো ব্যবসাতেই সফলতা আসবেই। আর ব্যবসায় আসার আগে ব্যবসা সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিতে হবে। হোস্টিং ব্যবসা শর্টকাটে আয়ের কোনো রাস্তা নয়। প্রচুর ধৈর্য, কম্পিউটার এবং টেকনিক্যাল জ্ঞান থাকতে হবে। সততা এবং পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকলে যে কেউ হোস্টিং ব্যবসাকে পেশা হিসেবে নিতে পারেন। সাথে ঝুঁকি নেয়ার মানসিকতাও থাকতে হবে।


প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে ভাবনা সম্পর্কে এই উদ্যোক্তা বলেন, আমি সব সময় মাথায় রাখি একজন গ্রাহক কী চান। তার চাহিদা অনুসারে সেরা সেবাটা দেয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। আমার স্বপ্ন প্রতিষ্ঠানটিকে আরও অনেক বড় করার। দেশের নামকরা একটা হোস্টিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা এবং দেশের অর্থনীতি এবং বেকারদের কর্মসংস্থানে অবদান রাখা। শুধু দেশে নয়, বাইরেও যেন ডোমেইন-হোস্টিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কথা এলে সবাই যেন একনামে চিনতে পারে এক্সনহোস্টকে।


বিবার্তা/উজ্জ্বল/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com