
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে ৭০ হাজার টাকা চুরির অভিযোগে সুজন হোসেন (২৭) নামের এক যুবককে রাতে আটকে রেখে মারধরের পর সকালে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
১৮ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে কাশিড়া বাজারের হাট অফিস থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহতের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সেলিম হোসেন ও তার লোকজন সুজনকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।
নিহত সুজন কাশিড়া গ্রামের কুমিরপুকুর এলাকার ওসমান আলীর ছেলে।
পুলিশ, নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার দিবাগত রাতে পাশের রায়কালী ইউনিয়নের পাইকড় দাড়িয়া গ্রামে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান চলাকালে খালাতো বোনের বাড়ি থেকে ৭০ হাজার টাকা চুরির অভিযোগে সন্দেহভাজন হিসেবে স্থানীয়রা সুজনকে আটক করে ইউপি সদস্য সেলিম হোসেনকে খবর দেয়। রাতেই সেখান থেকে সেলিম মেম্বার তাকে আটক করে গোপীনাথপুর ইউনিয়নের কাশিড়া বাজারের হাট অফিসে এনে মারধর করেন।
পরে অভিযুক্ত সুজনকে গ্রাম পুলিশ মানিকের পাহারায় রাতভর সেখানেই রাখা হয়। সকালে সুজনকে নাস্তা করানোর পর ওই কক্ষে আটকে রেখে মানিক বাথরুমে যান। ফিরে এসে তাকে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলতে দেখতে পান।
খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন এসে তাকে রাতভর মারধর করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন। পরে সকাল ১০টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
গ্রাম পুলিশ মানিক বলেন, সেলিম মেম্বার রাতে আমাকে ডেকে সুজনকে পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব দিয়ে বাড়িতে চলে যান। আমি সকালে তাকে নাস্তা করিয়েছি। পরে বাথরুম থেকে এসে দেখি সুজন গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে আছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, একজন ব্যক্তিকে চুরির অভিযোগে ধরে এনে মারধর করে সারারাত আটকে রাখা অন্যায়। অন্য ইউনিয়নের ঘটনা আমাদের ইউনিয়নে সমাধান করার কথা নয়। ইউপি সদস্য সেলিম হোসেনের হেফাজতে থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।
নিহতের স্ত্রী মারুফা বেগম বলেন, চুরির অভিযোগ তুলে আমার স্বামীকে রাতে ধরে এনে সারারাত মারধর করা হয়েছে। তার শরীরে অনেক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে, মাথায় ব্যান্ডেজ করা আছে। রাতেই আমার স্বামীকে থানায় দিতে বলেছিলাম। কিন্তু সেলিম মেম্বার ও তার লোকেরা আমার স্বামীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। স্বামী হত্যার বিচার চাই।
ইউপি সদস্য সেলিম হোসেন বলেন, আগেও সে চুরি এবং মাদক সেবনের সাথে জড়িত ছিল। বুধবার রাতে তার খালাতো বোনের বাড়ি থেকে ৭০ হাজার টাকা চুরির ঘটনায় তাকে আটক করে কাশিড়া বাজারের হাট অফিসে নিয়ে আসা হয়। সে টাকা চুরির ঘটনা স্বীকার করে। তখন থানা পুলিশে খবর দিলে সকালে তাকে থানায় নিয়ে আসতে বলেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। পরে গ্রাম পুলিশের হেফাজতে দিয়ে বাড়ি আসি। সকালে জানতে পারি সুজন নাস্তা করার পর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন রেজা বলেন, তাদের রাতেই সুজনকে থানায় নিয়ে আসার কথা বললেও তারা থানায় নিয়ে আসেনি। সকালে এই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে ঝুলন্ত অবস্থায় সুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের কালচে দাগ রয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে পাঠানো হবে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
বিবার্তা/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]