
গাজীপুরের কাশিমপুর রোডে একটি পোশাক কারখানায় ইলেকট্রিক মেকানিককে চোর অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই লিটন বাদী হয়ে কোনাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করলে পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
সোমবার (৩০ জুন) কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহ উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার (২৭ জুন) রাত আনুমানিক ৮টা থেকে শনিবার (২৮ জুন) বিকাল সাড়ে ৪টার মধ্যে এই ঘটনা ঘটলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করায় ঘটনাটি দেরিতে প্রকাশ পেয়েছে। এরপর থেকে কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার (২৭ জুন) রাত আনুমানিক ৮টা থেকে শনিবার (২৮ জুন) বিকাল সাড়ে ৪টার মধ্যে এই ঘটনা ঘটলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করায় ঘটনাটি দেরিতে প্রকাশ পেয়েছে। এরপর থেকে কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
পুলিশ জানায়, ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার হাসান মাহমুদ মিঠুন টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী থানার হাদিরা বাজার এলাকার মফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী থানাধীন কুদ্দুসনগর এলাকায় আয়নালের বাড়ির ভাড়াটিয়া।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার (২৮ জুন) সকালে চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে হৃদয়ের হাত-পা বেঁধে একটি কক্ষে নিয়ে যায়। পরে সেখানে তাকে নির্মমভাবে নির্যাতন ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। দুপুরের দিকে হৃদয় মারা যায়। ঘটনার খবর আশপাশের অন্যান্য পোশাক কারখানার কর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
পরে, প্রায় ৪০০-৫০০ শ্রমিক রাস্তায় নেমে এসে গ্রীনল্যান্ড গার্মেন্টসের সামনে গিয়ে কারখানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হৃদয় হত্যার বিচার দাবি করেন। এ সময়ে তারা কয়েক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
স্থানীয় সূত্র আরও জানায়, হত্যাকাণ্ডের পর কর্তৃপক্ষ গার্মেন্টসের মূল ফটকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নোটিশ সাঁটিয়ে পালিয়ে যায়।
সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, গত শুক্রবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে (২৮ জুন শনিবার) কতিপয় লোক হৃদয়কে দড়ি দিয়ে হাত-পিঠ বেঁধে কারখানার ভিতরে একটি কক্ষে নিয়ে যাচ্ছে। পরে ওই কক্ষে তার ওপর অমানুষিক ও নির্মম নির্যাতন করা হয়। শনিবার সকাল ১০টা ১৪ মিনিটে কারখানা ভেতরে একটি এম্বুলেন্স প্রবেশ করতে দেখা যায়। মৃত অবস্থায় হৃদয়কে নিয়ে ১০টা ২১ মিনিটে এম্বুলেন্সটি কারখানা ত্যাগ করে।
হৃদয় মারা যাওয়ার পর তার শরীরের একাধিক ছবি ও ভিডিও পাওয়া গেছে। তাতে তার হাঁটুতে, কোমরে, পিঠে, হাতের কব্জিতে, কনুইতে, হাতের নখে, গলায়, মুখমন্ডলে রক্তাক্ত ও কালচে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। এসব থেকে তার ওপর নির্যাতনের মাত্রা অনুমান করা যায়।
ধারণা করা হচ্ছে, কারখানার ভিতরে নির্যাতনের তার মৃত্যু হওয়ার পর বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষ তাকে আহত দেখিয়ে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। তাকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে বলে হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে উল্লেখ করা হয়। পরে পুলিশ মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে স্থানান্তর করে।
নিহতের ভাই ও মামলার বাদি লিটনের মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ২৮ জুন বিকাল সাড়ে ৪টার সময় বাদীর মা মোবাইলে ফোন করে বাদীকে জানায় যে, গত ২৭ জুন রাত্র আনুমানিক ৮টার দিকে হৃদয় খাওয়া-দাওয়া শেষে বাসা থেকে বের হয়ে ডিউটির উদ্দেশ্যে যায়। এরপর থেকে সে এখন পর্যন্ত বাসায় ফিরে আসেনি।
এই সংবাদ পেয়ে বাদী তাৎক্ষণিক মায়ের বাসায় এসে মাকে নিয়ে হৃদয়ের অফিসে যায়। সেখানে গিয়ে লোকজনের কাছ থেকে জানতে পারেন যে হৃদয়ের হত্যার ঘটনায় গ্রিণল্যান্ড লিমিটেড ফ্যাক্টরীর শ্রমিকরা টাঙ্গাইল-গাজীপুরগামী মহাসড়কের রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করছেন।
তখন পরিবারের লোকজন হৃদয়ের লাশের সন্ধান করলে কারখানার লোকজন জানায় যে, হৃদয়ের লাশ শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছে। পরে পরিবারের লোকজন হাসপতালে উপস্থিত হয়ে হৃদয়ের লাশ শনাক্ত করে।
মামলার এজাহারে আরো বলা হয়, ওই সংবাদ পেয়ে কোনাবাড়ী থানা পুলিশ ও হৃদয়ের পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে হাসপাতালে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে কোনাবাড়ী থানার ওসি সালাহ উদ্দিন বলেন, আমাদের কাছে খবর আসে একজন চোর কারখানার দেয়াল টপকে ভিতরে আসার সময় ড্রেনে পরে আহত হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরে হাসপাতাল কতৃপক্ষ জানায়, ওই ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে।
ওসি বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে প্রকৃত ঘটনা শোনার পর কারখানায় অভিযান চালিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ ও হত্যায় ব্যবহৃত অন্যান্য আলামত সংগ্রহ করা হয়। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আমরা হত্যাকান্ডের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছি।
তিনি জানান, গ্রেপ্তার আসামিকে গাজীপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি মামলার অজ্ঞাত আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
বিবার্তা/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]