
সুযোগ পেয়েও প্রতিশোধ নিতে পারল না পাকিস্তান। গ্রুপ পর্বের মতো এশিয়া কাপের সুপার ফোরের ম্যাচেও ভারতের কাছে হারল তারা। অভিষেক শর্মার ঝড়ের সামনে কোনো জবাবই দিতে পারেনি সালমান আলি আগার দল।
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রোববার পাকিস্তানকে ৬ উইকেটে হারায় ভারত। আগে ব্যাট করে ১৭১ রানের সংগ্রহ পায় পাকিস্তান। জবাবে ৭ বল বাকি থাকতে ম্যাচ জিতে যায় এশিয়া কাপের আটবারের চ্যাম্পিয়নরা।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৫ টি-টোয়েন্টিতে ভারতের এটি ১২তম জয়। তিন সংস্করণ মিলিয়ে এ নিয়ে টানা ৬ ম্যাচ জিতল তারা।
ভারতের জয়ের নায়ক অভিষেক ৬ চার ও ৫ ছক্কায় খেলেছেন ৩৯ বলে ৭৪ রানের বিধ্বংসী ইনিংস। এছাড়া শুবমান গিলের ব্যাট থেকে আসে ২৮ বলে ৪৭ রান।
রান তাড়ায় শাহিন শাহ আফ্রিদির করা ইনিংসের প্রথম বলেই ছক্কা মেরে দেন অভিষেক। এরপর আর থামাথামি নেই। অভিষেকের সঙ্গে যোগ দেন শুবমান গিল।
দুজনের ঝড়ে পঞ্চম ওভারে পঞ্চাশ করে ফেলে ভারত। পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬৯ রান হয় তাদের সংগ্রহ।
৪টি করে চার-ছক্কা মেরে মাত্র ২৪ বলে ফিফটি করে ফেলেন অভিষেক। দশম ওভারে পূর্ণ হয় ভারতের একশ রান।
দশম ওভারের চতুর্থ বলের হঠাৎ দেওয়া হয় পানি পানের বিরতি। এরপর প্রথম বলেই বোল্ড হয়ে যান ৮ চারে ২৮ বলে ৪৭ রান করা গিল। তার বিদায়ে ভাঙে ৫৯ বলে ১০৬ রানের ইনিংস।
পাকিস্তানের বিপক্ষে এটি ভারতের সর্বোচ্চ রানের উদ্বোধনী জুটি। ২০১২ সালে গৌতম গম্ভীর ও অজিঙ্কা রাহানে ৭৭ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েছিলেন।
পরের ওভারে সূর্যকুমার যাদবকে শূন্য রানে ফিরিয়ে দেন হারিস রউফ। তবু দলের ওপর চাপ আসতে দেননি অভিষেক। ফাহিমের ওভারে দুটি চার মারেন তিনি। পরের আবরার আহমেদের বল ওড়ান ছক্কায়।
ঠিক পরের বলে মারব কি ছাড়ব, দোটানায় পড়ে লং অনে ক্যাচ দেন ২৫ বছর বয়সী ব্যাটার। মাত্র ১৭ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে কিছুটা কমে ভারতের ঝড়। রানের চাহিদা খুব বেশি না থাকায় ঝুঁকিও নিতে হয়নি তিলক ভার্মা ও সাঞ্জু স্যামসনের।
তবু সহজে তেমন রান করতে পারেননি তারা দুজন। ২৫ রানের জুটি গড়তে ২৬ বল খেলেন তিলক ও স্যামসন। ১৭তম ওভারে রউফের বলে বোল্ড হন ১৭ বলে ১৩ রান করা স্যামসন।
এরপর আর উইকেট পড়তে দেননি তিলক ও হার্দিক পান্ডিয়া। ২টি করে চার-ছক্কায় ১৯ বলে ৩০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন তিলক। ৭ বলে ৭ রান করেন হার্দিক।
এর আগে ভারতের বাজে ফিল্ডিংয়ের পূর্ণ সুবিধা পায় পাকিস্তান। ইনিংসে ৪টি ক্যাচ ছেড়ে দেন ভারতের ফিল্ডাররা। দুবার জীবন পেয়ে দলের সর্বোচ্চ ৫৮ রানের ইনিংস খেলেন সাহিবজাদা ফারহান।
ভারতের পক্ষে বল হাতে সফল পার্ট টাইম মিডিয়াম পেসার শিবাম দুবে। ছয় নম্বরে বোলিংয়ে এসে ৪ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন তিনি। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট দুইটি নেন তিনি।
পাকিস্তানের ইনিংসটি ভাগ করা যায় তিন ভাগে। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ফারহানের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে প্রথম ১০ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ৯১ রান করে তারা।
এরপর ব্যাটারদের চেপে ধরেন দুবে ও কুলদিপ যাদব। পরের ৭ ওভারে মাত্র ৩৮ রান করতে ৩ উইকেট হারায় পাকিস্তান।
পরে শেষ ৩ ওভারে আবার ঝড় তুলেন মোহাম্মদ নাওয়াজ, সালমান আলি আগারা। শেষটা নিজেদের প্রত্যাশামাফিক করে ৩ ওভারে ৪২ রান নেয় সালমানের দল।
ম্যাচের প্রথম ওভারেই হার্দিক পান্ডিয়ার বলে ফারহানের ক্যাচ ছেড়ে দেন অভিষেক শর্মা। তখনও রানের খাতা খোলেননি ফারহান।
নিজের পরের ওভারে ফাখার জামানকে আউট করেন হার্দিক। উইকেটের পেছনে সাঞ্জু স্যামসনের ক্যাচটি নিয়ে সংশয় ছিল আম্পায়ারদের। রিপ্লে দেখে টিভি আম্পায়ার জানান, বলের নিচেই ছিল স্যামসনের আঙুল।
এরপর বরুণ চক্রবর্তীর বলে সাইম আইয়ুবের ক্যাচ ছাড়েন কুলদিপ যাদব। ৪ রানে জীবন পেয়ে শেষ পর্যন্ত ২১ রানে আউট হন আগের তিন ম্যাচে টানা শূন্য রানে ফেরাম সাইম।
অষ্টম ওভারে আবার জীবন পান ফারহান। বরুণের বলে ওয়াইড লং অনে আবার ক্যাচ নিতে পারেননি অভিষেক। এবার ৩২ রানে ছিলেন ফারহান। দুবার জীবন পেয়ে ৩৪ বলে ফিফটি করেন পাকিস্তান ওপেনার।
ফিফটির পর কমে যায় ফারহানের রানের গতি। শেষ ১১ বলে মাত্র ৮ রান করতে পারেন তিনি। দুবের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরেন ফারহান। এর আগে হুসাইন তালাতকেও আউট করেন ভারতের পেস বোলিং অলরাউন্ডার।
১৮তম ওভারে নিজের কোটার শেষ ওভারে ১৭ রান খরচ করেন দুবে। পরের ওভারে জাসপ্রিত বুমরাহর বলে ইনিংসের চতুর্থ ক্যাচ ছেড়ে দেন শুবমান ফিল। এবার ৬ রানে জীবন পান ফাহিম আশরাফ।
পরে শেষ ওভারে একটি করে চার-ছক্কা হজম করে ১৪ রান দেন হার্দিক। ৮ বলে ২০ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন ফাহিম।
নিজের বাজে দিনে ৪ ওভারে ৪৫ রান খরচ করেছেন বুমরাহ। তার ক্যারিয়ারে এটি তৃতীয় খরুচে বোলিং। ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫০ ও ২০১৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৪৭ রান দিয়েছিলেন বুমরাহ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১৭১/৫ (ফারহান ৫৮, ফাখার ১৫, সাইম ২১, তালাত ১০, নাওয়াজ ২১, সালমান ১৭*, ফাহিম ২০*; হার্দিক ৩-০-২৯-১, বুমরাহ ৪-০-৪৫-০, বরুণ ৪-০-২৫-০, কুলদিপ ৪-০-৩১-১, অক্ষর ১-০-৮-০, দুবে ৪-০-৩৩-২)
ভারত: ১৮.৫ ওভারে ১৭৪/৪ (অভিষেক ৭৪, গিল ৪৭, সূর্যকুমার ০, তিলক ৩০*, স্যামসন ১৩, হার্দিক ৭*; আফ্রিদি ৩.৫-০-৪০-০, সাইম ৩-০-৩৫-০, আবরার ৪-০-৪২-১, রউফ ৪-০-২৬-২, ফাহিম ৪-০-৩১-১)।
বিবার্তা/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]