সিলেটে আরিফুল হকের রেড সিগন্যাল গ্রিন সিগন্যাল থিওরি
প্রকাশ : ২১ মে ২০২৩, ২০:৫০
সিলেটে আরিফুল হকের রেড  সিগন্যাল গ্রিন সিগন্যাল  থিওরি
জুয়েল রাজ
প্রিন্ট অ-অ+

অনেক জল ঘোলা করে, ঢাকঢোল পিটিয়ে সর্বশেষ সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী ২০ মে সিলেটে সমাবেশ করে ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি আর নির্বাচন করবেন না। তিনি মোটা দাগে যে অভিযোগের ভিত্তিতে নির্বাচন বর্জন করেছেন সেই অভিযোগগুলো হলো, নির্বাচনের পরিবেশ নেই, ইভিএ-এ ভোটের প্রতি অনাস্থা, দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার-হয়রানির অভিযোগ।


সর্বোপরি দলের সিদ্ধান্তের প্রতি অনুগত থেকে নির্বাচন থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। আরিফুল হক নির্বাচন করবেন না, সেটি গত ২ এপ্রিল যখন তিনি লন্ডনে এসেছিলেন তখনই নির্ধারিত হয়ে যায়। ২ এপ্রিল লন্ডনে এসে তিনি প্রায় ১৫ দিন অবস্থান করেন। আর তখনই গল্পের গরু আকাশে উড়ার মত অবস্থা শুরু হয়। একবার তিনি নির্বাচন করবেন, আরেকবার তিনি নির্বাচন করবেন না। একবার বিএনপি ছাড়ছেন, আরেকবার বিএনপি তাকে বহিস্কার করছে- নানা আলোচনা ছিল দেশে-বিদেশে। জনাব আরিফুল হক চৌধুরী কিংবা তার নেতা তারেক রহমান টু শব্দটি করেননি। লন্ডন ছাড়ার আগে এক ইফতার পার্টিতে তারেক রহমানসহ তিনি আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। সেখানেই প্রথম উল্লেখ করেন, ‘আমার নেতা আমাকে একটি সিগন্যাল দিয়েছেন। সেটি গ্রিন না রেড তা সময়মতো সবাই জানবেন।’ এরপর দেশে ফিরেও তিনি একই কথা বলেন। এরপর একের পর এক অভিযোগ তুলতে শুরু করেন। কিন্তু নির্বাচন কেন্দ্রিক কোন প্রচারণা, জনসংযোগ, সভা-সমিতি কিছুই করেননি। সিগন্যাল আসলে কী ছিল? সিলেটে তার জনপ্রিয়তার হিসাব-নিকাশ দেখিয়ে ভোটে দাঁড়াতে লন্ডন থেকে গ্রিন সিগন্যাল চেয়েছিলেন তিনি। কিন্ত আরিফুল হককে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়েছে- ভোটে দাঁড়ালেই রেড সিগন্যাল! কারণ আওয়ামী লীগের অধীনে আর কোন নির্বাচনেই যাবে না বিএনপি। এটা একদম পরিস্কার বলে দিয়েছিলেন তারেক রহমান। তাই যারা বিদ্রোহী হয়ে ভোটে দাঁড়াচ্ছে তাদেরকে আজীবনের জন্য দল থেকে বহিস্কার করা হচ্ছে। মূলত এই রেড সিগন্যাল নিয়েই দেশে ফিরেছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী।


সাক্ষাতের এই সুযোগে বিএনপির রাজনীতির মাঠের চমক জনাব আরিফ, তার নেতা তারেক রহমানের সাথে ও রাজনৈতিক বাজি খেলে নিয়েছেন। তিনি নিজের জনপ্রিয়তার ইতিহাস পূঁজি করে, সেই বাজি জিতে আসেন। জাতীয় নির্বাচনে তাকে নমিনেশন দিতে হবে এবং কেন্দ্রীয় বিএনপিতে সহ-সভাপতি পদ দিতে হবে। তারেক রহমান বলেছেন সময় হলে দেখবেন। মানে বাকী দুইটি আশ্বাস নিয়ে তিনি দেশে ফিরে আসেন।


তাহলে দীর্ঘ এক মাস এতো নাটকীয়তা কেন! কোন গ্রিন সিগন্যালের জন্য? তিনি তো এসেই ঘোষণা দিতে পারতেন- দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে আমি নির্বাচন করব না। কিন্তু তিনি তা না করে, বিগত একমাস নির্বাচনী মাঠ জরিপ করেছেন- তিনি কতটা ঝুঁকি নিবেন।


দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আসন্ন গাজীপুর সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় গত ১৬ মে ২৯ জন নেতাকর্মীকে আজীবন বহিষ্কার করেছে বিএনপি। সিলেটে ২৫ জনের তালিকা গেছে কেন্দ্রে। এইসব হিসাব নিকাষ তো ছিলই, সাথে তিনি যে দুইবার নির্বাচিত হয়েছিলেন যতোটা না বিএনপির ভোটে, তার চেয়ে বেশি আওয়ামী লীগের কোন্দলে। কারণ দুই নির্বাচনের ভোটেই আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর পাশ করেছেন। কিন্ত একই সেন্টারে মেয়র পাশ করেননি। আরিফুল হক এখনও সিলেটের প্রয়াত মেয়র বদর উদ্দিন কামরানের চেয়ে বেশি জনপ্রিয় নেতা নন। কিন্ত সেই কামরানই দুই দুইবার পরাজিত হয়েছেন আরিফুল হকের কাছে। আরিফুল হক হয়ত এবারও দলীয় রেড সিগন্যাল অমান্য করেই ঝুঁকি নিতেন। কিন্ত বিএনপি তাকে বহিস্কার করলে সমস্যা হলো কোন নেতা কর্মীকে আর প্রচার প্রচারণায় পাবেন না। সব সেন্টারে এজেন্ট দেয়ার মানুষও খুঁজে পাবেন না। অভ্যন্তরীণ দলীয় রাজনীতিতে কোণঠাসা আরিফ। স্থানীয় নেতারা তাঁকে পছন্দ করেন না। আবার নেতাদের বিরোধীতার মুখেও মেয়র নির্বাচিত হওয়াতে কর্মীদের কাছে তিনি আস্থার জায়গা তৈরি করেছেন। তেমনি দলীয় কর্মী হত্যার অভিযোগেও দলের একটা অংশ তার বিরোধী আছে। তাই সবমিলিয়ে বিএনপির নিজেদের ঘরে আরিফুল হকের এক হিসাব, আবার আওয়ামী লীগের ঘরে তার হিসাব ভিন্ন। প্রথমত প্রবাসী প্রার্থী হিসেবে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে কেমন প্রভাব পড়ে তা তিনি অবলোকন করেছেন, বুঝতে চেষ্টা করেছেন। হাওয়া কোনদিকে বহে! আর সেই হাওয়াতে তিনি বুঝে গেছেন, এবার আর আওয়ামী লীগকে পাশে পাচ্ছেন না আরিফ। মূলত আওয়ামী লীগের এই রেড সিগন্যালই তিনি আটকে গেছেন। আর সেই রেড সিগিন্যালটি হচ্ছে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।


কারণ গত দুই নির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক প্রভাবশালী নেতাকে দেখা যায়নি দলীয় প্রার্থীর প্রচারে। নীরব থেকে তারা বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর পক্ষে কাজ করেছেন বলে বাজারে প্রচলিত আছে। আর ভোটের মাঠের হিসাবও তাই বলে। সব বড় বড় নেতাদের সেন্টারে নৌকার ভরাডুবি হয়েছিল। মূল গ্রিন সিগন্যালটি আওয়ামী লীগ থেকে পাননি বলেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন আরিফুল হক। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় রেকর্ড ভোটে সিলেটে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন বদর উদ্দীন কামরান। বড় ধরনের কোন অভিযোগ ছাড়াই সেই একই প্রার্থী সরকারি দলের প্রার্থী হিসাবে পরাজিত হয়েছিলেন প্রয়াত এই নেতা। অভিযোগের তীর ছিল দলের নেতাদের দিকে।


কিন্ত আনোয়ারুজ্জামান প্রার্থী হওয়াতে জনাব আরিফের হিসাব-নিকাশ উল্টাপাল্টা হয়ে গেছে। তিনি যে আওয়ামী লীগের নৌকায় পা দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পাড় হয়েছেন- সেই সুযোগ এবার আর হচ্ছে না। এখন দলের প্রতি শ্রদ্ধা, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ইত্যাদি অজুহাতে রেড সিগন্যালে আটকা পড়ে গেছেন আরিফ। ইতিহাস আপন গতিতে চলে, তাই রাজনীতিতে আরিফের ফিরে আসা কিভাবে হবে সেটি আগামী দিনের গ্রিন সিগন্যাল বলে দেবে।


লেখক : সম্পাদক- ব্রিকলেন নিউজ, যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি, দৈনিক কালের কণ্ঠ।


বিবার্তা/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com