শিরোনাম
বঙ্গবন্ধু ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী
প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২১, ২২:০১
বঙ্গবন্ধু ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী
মোঃ শফিকুল ইসলাম
প্রিন্ট অ-অ+

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শব্দ দুটি এক ও অবিচ্ছিন্ন। একটি অন্যটি ছাড়া কল্পনা করা যায় না। বঙ্গবন্ধু ছাড়া বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী কল্পনাও করা যায় না। বাংলাদেশ নামক দেশটি সৃষ্টিতে জাতির পিতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আজ আমরা বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী পালন করতে যাচ্ছি। এটা আমাদের জন্য খুবই খুশির খবর। আর এই দেশের জন্য যে কাজ করেছেন তিনি হলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাকে শ্রদ্ধা জানাই এবং তাঁর আত্নার শান্তি কামনা করছি। তিনি এই দেশ সৃষ্টিতে যে ভূমিকা পালন করেছেন,সেইজন্য দেশ ও জাতি আজীবন বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করবে। তিনি হলেন এক অবিসংবাদিত নেতা। কিন্তু এই মহান নেতাকে তারা হত্যা করছে, তাদেরকে ধিক্কার জানাচ্ছি। যাদের এখনও বিচার হয়নি বা গ্রেফতার করা যায়নি,তাদেরকে দ্রুত দেশে এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন আরো সার্থক হতো। কারণ ঐ কালোরাতের ঘটনা আমরা দেখেনি,কিন্তু আমরা শুনেছি,তা উপলদ্ধি করলে গা শিহরে উঠে। কত বড় অন্যায় তারা করছে এবং কি নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে, তা আর ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এরকম নিন্দনীয় এবং ঘৃণিত কাজ বিশ্বে আর কোথায় ঘটেনি।


তারপরও আজ দেশের বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি আমরা,কিন্তু প্রতিটি মুহূর্তে স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে। এই সুবর্ণজয়ন্তীতে তাঁর চেতনা ও আদর্শ জাতির এবং বর্তমান তরুণ সমাজের নিকট তুলে ধরতে হবে, যাতে তরুণ সমাজ তাঁর আদর্শকে জানতে পারে এবং বঙ্গবন্ধুর চেতনাকে ধারণ করে তাদের জীবনকে এগিয়ে নিতে পারে।বাংলাদেশের বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী হলো ১৬ ডিসেম্বর ২০২১। আজ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন হচ্ছে। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনে যোগ দিতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ গতকাল ঢাকায় আসছেন। রাষ্ট্রপতি হিসাবে এটি তার প্রথম বাংলাদেশ সফর। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী,মুজিববর্ষের সমাপনী এবং বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ভারতের রাষ্ট্রপতির সফর এক স্মরণীয় দিন। এটা একটি
বিশেষ মুহূর্ত। বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ২০২১ সালে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের এ ধরনের সফর দুই দেশের বিদ্যমান সম্পর্কের খাতায় মাইলফলক অধ্যায় হিসাবে স্বর্ণাক্ষরে উল্লেখ থাকবে।


সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। এই দিনে বাংলাদেশের সব সরকারি,স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে উত্তোলন করা হয় লাল সবুজের জাতীয় পতাকা। ঐদিন গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসমূহ আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করতে সরকার কর্তৃক নেওয়া সকল পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান বানীর মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছে। এটা খুবই প্রশংসনীয়। আমাদের দেশ ছাড়াও অন্যান্য দেশেও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করা হয়েছে।


স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ির’ দেশ আখ্যা দেয়া হয়েছিল। ১৯৭২ সালে প্রধান কাণ্ডারি হিসেবে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সুষ্ঠভাবে পুনর্গঠন করেছিলেন। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে দারিদ্র্য আর দুর্যোগের বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, শিক্ষা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন,নারীর ক্ষমতায়ন,মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ আর্থসামাজিক প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। এ প্রাপ্তি নিয়েই এবার জাতি বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছে।


বর্তমান সরকারের অনেকগুলো মেগা প্রকল্পগুলো কাজ চলমান যেমন-পদ্মা বহুমূখী সেতু প্রকল্প,মেট্রোরেল প্রকল্প,পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প,মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, কয়লা ভিত্তিক রামপাল থার্মাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, পায়রা বন্দর নির্মাণ প্রকল্প এবং সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্প, পায়রা সেতু প্রকল্প ইত্যাদি। এসব মেগা প্রকল্পের অনেকগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে এবং বাকিগুলো বাস্তবায়নের পথে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে আমাদের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি।


বাংলাদেশ তার বিজয়ের প্রথম পঞ্চাশ বছরে যা অর্জন করেছে তার ফলাফলস্বরূপ আজ সারাবিশ্ব বাংলাদেশকে প্রশংসার চোখে দেখছে। শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় অবদানকারী দেশ বাংলাদেশ,বিশেষ করে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সেনা প্রদানকারী দেশ হিসেবে আমাদের দেশ ব্যাপক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। যা বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখছে।


যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ-বাণিজ্য বিষয়ক সাময়িকী ফোর্বস এর ২০২১ সালের বিশ্বের ক্ষমতাধর নারীদের তালিকায় এবারও রয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার ৮ ডিসেম্বর এ তালিকা প্রকাশ করেছে সাময়িকীটি। এতে ৪৩তম অবস্থানে রয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০২০ সালের তালিকাতেও ছিলেন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘসময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনা,যা আমাদের গৌরবের বিষয়। এছাড়াও শেখ হাসিনাকে এই তালিকায় রেখে ফোর্বস বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তার সংগ্রামের কথা বলেছেন। খাদ্য নিরাপত্তা,শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে শেখ হাসিনা সরকারের গুরুত্ব আরোপের বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে যা খুবই ইতিবাচক ও প্রশংসনীয়।


১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। শুধু এ দেশের জনগণই নয়, বাংলাদেশের পক্ষে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয় প্রতিবেশী দেশ ভারত। তাই বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র, আশ্রয় ও খাদ্য দিয়ে সহায়তা করে ভারত। ঐ সময় আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ব্যাপক ভূমিকা রাখে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন (রাশিয়া)। সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে আরও ত্বরান্বিত করেছিল। এছাড়া বিশ্বের অনেক মুক্তিকামী ও গণতন্ত্রকামী মানুষ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন ও সহযোগিতা করেন।


দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম,মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও দুই লাখ মা বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি বিজয় লাভ করেন। আজ সেই ১৬ ডিসেম্বর। আজ বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে বিশেষ কর্মসূচি রয়েছে সরকারের।আজ ১৬ ডিসেম্বর নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে জাতি পালন করছে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী।


জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবার্ষিকী এবং বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে করোনা মহামারিকে বাংলাদেশ সরকার যেভাবে মোকাবেলা করছে,তা বিশ্বে খুবই প্রশংসনীয়। বাংলাদেশে এখন উন্নয়নের রোল মডেল এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতা চলমান। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি, আজ তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন বিশ্ব দরবারে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী ও সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে।


লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল,ময়মনসিংহ।



বিবার্তা/আবদাল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com