শিরোনাম
গোয়েবলস আজকে বেঁচে থাকলে লজ্জা পেতো
প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২১, ১৫:২৫
গোয়েবলস আজকে বেঁচে থাকলে লজ্জা পেতো
সংগৃহীত ছবি
অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
প্রিন্ট অ-অ+

আমি সম্প্রতি আমার পারিবারিক একজন শিশুর চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে আমেরিকা এবং ব্রিটেন মিলে প্রায় ৫ সপ্তাহ থেকে দেশে ফিরেছি। এই সময় আমি কতগুলো জিনিস বিদেশে থাকার সময় লক্ষ্য করেছি। সেই বিষয়গুলি আমাকে খুব নাড়া দিয়েছে এবং এই বিষয়গুলো নিয়ে বিশেষ করে সৈয়দ বোরহান কবীর অনেক লেখা লিখেছেন।কিন্তু আমি নিজে আমার নিজস্ব অনুভূতিতে প্রথম আমি আমেরিকার কথায় আসি, যদি আমেরিকায় না যেতাম তাহলে অতটা ভালোভাবে বুঝতে পারতাম না।


সবাই জানে, বিশেষ করে যারা বাংলা ইনসাইডারের নিয়মিত পাঠক তারা ভালোভাবেই জানেন যে, আমেরিকাতে, কানাডাতে এবং ইউরোপে -এই তিনটি জায়গায়ই এবং ইউকেতে লন্ডনে বসে তারা এখন সাইবার যুদ্ধ শুরু করেছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ ঠিক বললেও এটা ভাসা ভাসা বলা হয়। আসলে তাদের টার্গেট হচ্ছেন রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। যার জন্য আজকে গোয়েবলসীয় যদি আজকে হিটলারের সেই মন্ত্রী বেঁচে থাকতো আজকে সে লজ্জা পেতো। কেননা তার গোয়েবলসীয় সত্যের সাথে মিথ্যা মিশিয়ে এমনভাবে প্রচার করত যে লোকে ওই মিথ্যাটাকে বিশ্বাস করতো।


কিন্তু এরা সোজাসুজি মিথ্যাটাকেই খুব সুন্দরভাবে পরিবেশনা করে এবং ক্রমাগতভাবে জনগণকে বারবার জানাচ্ছে। যাদেরকে দিয়েই করানো হচ্ছে, এদের দেখলাম যে কাজের দিক থেকে মোটামুটি ভালো ভাবে। কেননা তাদের যে টিম, তারা ভালো একটা টিম করে নিয়েছে এবং এই টিমে যারা স্ক্রিপ্ট লিখে দেওয়া, এরা যাতে ঠিকমত টাকাপয়সা পায় সেটার ব্যবস্থা করা এবং তারা ঠিকমতো পরিবেশন করলো কিনা।


প্রত্যেকটা জিনিস বোঝা যায় যে এটা একটা নির্দিষ্ট ছক এঁকে করা হচ্ছে, একটা রোডম্যাপ একে করা হচ্ছে এবং এই রোডম্যাপের টার্গেট জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং টার্গেট হচ্ছে পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত। তাদের এই কাজটি তারা তাদের দৃষ্টি থেকে আমি দেখলাম অত্যন্ত নিখুঁতভাবে করছে। আর আমাদের অনেকেই আমেরিকায় আছে। আর তাদের দুর্দিনের সময় নেত্রীর জন্য, আওয়ামী লীগের জন্যে অনেক অবদান আছে এবং এটা ঠিক।


এরমধ্যে অর্থনৈতিক দিক থেকেও এরা ভালো অবস্থানে আছে। অনেকে এসে যে বাংলাদেশে পাওয়ার প্লান্ট এনেছে আমি সেগুলার উদাহরণ আনতে চাই না। কারণ এমনিতেও তাদের অনেক টাকা। কিন্তু দুঃখজনক হলো যেভাবে নেত্রীকে আক্রমণ করা হচ্ছে, আমাদের এতো লোক থাকা সত্ত্বেও তারা বড় বড় কথা বলে কিন্তু আমেরিকাতে সেইভাবে একটা অর্গানাইজড ওয়েতে এর উত্তর দেয়ার জন্য সামান্য কোন প্রচেষ্টা আমার চোখে পড়েনি।


বুঝতে হবে যে, যারা বিদেশে থাকে যতই আমরা বলিনা কেন এরা মিথ্যা হলেও তাদের কিছু কিছু লোক এই মিথ্যাকে কিন্তু বিশ্বাস করে। তাদের সংখ্যা হয়তো বেশি না, কিন্তু এই তাদের মিথ্যাকে যে বিশ্বাস করে তাদের আত্মীয়-স্বজন ঢাকা, বাংলাদেশে আছে। তারা বাংলাদেশেও আসে। সুতরাং কিছু লোক হলেও তারা কিন্তু আস্তে আস্তে অন্তত এটাকে প্রচারের ফলে একটা কনফিউশনে পড়ে যায়। অথচ এজন্য আমরা একটা ছক এঁকে এবং কিছু লোককে ভালো করে দায়িত্ব দিয়ে প্রয়োজনে তাদের অর্থনৈতিক সহযোগিতা করে সবাই মিলে এটাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওইখান থেকে উত্তরণের ব্যবস্থা করতে হবে।


কারণ, নাহলে আমাদের এমনিতেই আমি নিজেই বিশ্বাস করি যে আওয়ামী লীগের প্রচার সেল অত্যন্ত দুর্বল। এখানে মন্ত্রী হলেও প্রচারের ব্যাপারে আমাদের আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ যথেষ্ট সক্রিয় এবং তার সাথে আরো কয়েকজন আছেন। তাছাড়া মোটামুটি অনেকেই রাজনীতি বেশ ভালো বুঝেন, অনেকের অতীত ইতিহাস অত্যন্ত ভালো। অথচ তারা সেইভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষে যুক্তিপূর্ণভাবে দিয়ে কোনো বক্তব্য দেন না, এমনকি যারা মন্ত্রী বা দলের লোক যেরকম বাহাউদ্দিন নাছিম, নানক এরা অন্তত বাংলা ইনসাইডারে মাঝে মাঝে লেখে। এই যে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সব যায়গায় মন্ত্রী এবং দলের যারা তাদের তো ভালো লিখতে পারে।


কমিউনিস্ট পার্টি থেকে অনেক লোককে আওয়ামী লীগে নেত্রী স্থান দিয়েছেন এবং আমি বিশ্বাস করি যে উনি দিয়েছেন যে তারা লেখাপড়া জানা এবং এরা আওয়ামী লীগের দুর্দিনেও অবদান রাখবে। কিন্তু এই সময় যারা আমাদের কমিউনিস্ট ভাইরা আওয়ামী লীগে এসে এখনো কমিউনিস্টের গন্ধ হয়তো শরীর থেকে সরাতে পারেননি তাদের আমি সেরকম কোন কাজকর্ম অন্তত আমার কোনো চোখে পড়ছে না।যারা এরকম আর্টিকেল লেখতো তাদের ভাবখানা এই যে নেত্রীর যেনো একাই দায়িত্ব, তিনিই সবকিছু করবেন। তিনি দায়িত্ব এবং সবকিছু করতেছেন কিন্তু তাকে তো সাহায্য করার জন্যে আমাদের সকলের সামান্য সামান্য হলেও অবদান রাখা প্রয়োজন। সেটা রাখা হচ্ছে না।


সুতরাং আমি প্রথম যেটা আমেরিকার ব্যাপারে বললাম এটা ব্রিটেনের ব্যাপারে, কানাডার ব্যাপারে, সবজায়গার ব্যাপারেই সত্য যে আজকাল আরেকটা কথা এর সাথে বলে ফেলি যে সোশ্যাল মিডিয়া এখন খুব পাওয়ারফুল। এই সোশ্যাল মিডিয়ার জন্যেই আওয়ামী লীগের আলাদা একটা সেল করা দরকার। এসব সেল লোককে জানিয়ে বিভিন্ন প্রকাশ করে কমিটি করে দরকার নাই।


নেত্রী নিজেই কাউকে দায়িত্ব দিবেন। সেই যারা যারা এসব ব্যাপারে অভিজ্ঞ এবং পারবে তাদের মোটামুটি ফুল টাইম দায়িত্ব হবে শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ার উপর লক্ষ রাখা। আরেকটি গ্রুপ থাকতে হবে যারা পত্রিকার উপরে। এখানে কিন্তু শুধু লক্ষ রাখলে হবে না। সাথে সাথে তার উত্তরটাও দিতে হবে। যেমন- টকশো হাজার বলি না কেন যতই বলিনা, টকশোতে বড় বড় কথা চলবেই। ইলেকশন পর্যন্ত চলবে, পরেও চলবে।


এর উত্তর হচ্ছে আমাদেরও কিছু লোক সেখানে যেয়ে যেমন অনেকে অংশগ্রহণ করে তারা বেশ ভালো বলে। আমাদের আওয়ামী লীগের যারা যারাই টকশোতে যেয়ে অংশগ্রহণ করে আমি প্রায় সবারটাই শুনি এবং আমি মনে করি তাদের ক্ষমতার মধ্যে যথেষ্ট অবদান রাখে এতে কোন সন্দেহ নাই। এখন অনেক মিডিয়াকে আমি দেখেছি যে, টেলিভিশন মিডিয়ার কথায় আসি।


নেত্রী নিজের হাতে যাদেরকে অনুমতি দিয়েছেন তারা আলোচনায় এমনসব ব্যক্তিদের আনেন তারা কিছু থাকবেন নিরপেক্ষভাবে যারা সুশীল সমাজ হয়ে যান, আর কিছু কায়দা করে নেত্রীর বিরুদ্ধে বলেন। এখানে যে একটা আমাদের লোকজন যারা এটা ভালো করে বলতে পারবে এবং আছে তাদেরকে কিন্তু তারা অনেক মিডিয়াতে ডাকেন না। তারা নতুন নতুন বিজ্ঞ সমাজ গড়ে তুলতেছেন।


যেমন- প্রথম আলো এদেশে সবাইকে বিজ্ঞ বানিয়েছেন, তারাই সুশীল সমাজ হয়েছে, ঠিক একই পন্থা কিছু কিছু মিডিয়া গ্রহণ করেছে। কিন্তু একের পর এক আবার নতুন টেলিভিশন চ্যানেলও অনুমতি পাচ্ছে। সত্যিকারে আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমি খুব সাধারণ মানুষ, আমি বুঝিনা, আমার বুদ্ধিতে কুলায় না যে এসব এভাবে কেন হচ্ছে। এত বড় দল, এত বিজ্ঞ লোক অথচ একটি কাজ রোডম্যাপ অনুযায়ী কেন হবেনা। না হওয়ার তো কোন কারণ নেই।


আর আমি যদি আমেরিকায় যেয়ে না দেখতাম এবং সাধারণ মুদি দোকান আলাপ করেছি। যদিও আমেরিকাতে আমাদের চেয়ে অবস্থা খারাপ তবুও সেখানে তারা মাস্কও কেউ পরে না, না পরেই ঘুরে বেড়ায়। যদিও আমি যে কয়দিন ছিলাম, যে কাজে গিয়েছিলাম মাস্ক পরে সে কাজে যেতে হয়েছে। সব যায়গায় আলাপ করে দেখেছি যে সাধারণ লোকজনের ভিতরে কিছু কিন্তু ইনফ্লুয়েন্স হচ্ছে। এটা যদি অস্বীকার করেন আমার মনে হয় তিনি জিনিসটাকে গভীরভাবে দেখতেছে না।


সুতরাং এই যে সোশ্যাল মিডিয়া এবং এর সাথে ইউটিউব সব মিলিয়ে তারা যে একটা সাইবার যুদ্ধ আমদের বিরুদ্ধে শুরু করেছে এর বিরুদ্ধে আমদের অবিলম্বে আমাদের যারা এই জিনিসটা ভালো করে বুঝেন এবং করতে পারেন তাদেরকে দিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। সকলে শুধুমাত্র নেত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। সবাই তো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্ষমতা আছে। অনেকগুলো বাঁশের কঞ্চি যদি একসাথে বাঁধা যায় তাহলে একটা বাঁশের চেয়ে সেটি শক্তিশালী হয়। তো সেই শক্তি আমাদের আছে।


আমি নাম বললে দুঃখ পাবেন কারণ, তারা আমার কাছে যথেষ্ট বিজ্ঞ, এখন মন্ত্রণালয় চালান, যারা অনেকদিনের মন্ত্রী। প্রত্যেক পত্রিকা খুললেই পাবেন ২০০৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত একটি রাজনৈতিক বক্তব্য আওয়ামী লীগ বা নেত্রীর পক্ষে বা বঙ্গবন্ধুর পক্ষে সরাসরি বলতে শুনিনি। এটা আমি প্রমাণ দিয়ে বলতে পারবো। প্রমাণ দেয়া লাগবে না, কারণ আপনারা সকলে বিজ্ঞরা, এটা সকলেই জানেন, এই হচ্ছে আমাদের অবস্থা। সুতরাং আমার মনে হয় যে আমাদের এই জিনিসটির প্রতি খুব লক্ষ দেয়া প্রয়োজন।


লেখক: চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলর।


বিবার্তা/এমবি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com