’৭৫-এর ১৫ আগস্ট পরবর্তি বাংলাদেশে দুই ধারার রাজনীতি বিদ্যমান। এক ধারায় দেশের জন্মতত্ত্ব মানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জনকের আদর্শ চর্চা তাদের আন্দোলন- সংগ্রামের মূল নিয়ামক। বিরোধী দলে থাকতে তারা তাদের শক্তি, ঐক্যের প্রতীক ও আশা-আকাঙ্ক্ষার মধ্যমণি দলীয় প্রধানকে পাশে পায়। তাই দ্বিতীয় কারও মানে সেকেন্ড ইন কমান্ড এর তেমন প্রয়োজন হয় না।
বাংলাদেশের জন্মদান তথা স্বাধীনতায় এ দলের সীমাহীন ত্যাগ থাকায় দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধন দলীয় প্রধানের মূখ্য এজেন্ডা। ফলে দলটি সরকারে থাকাকালে কর্মীরা অবিভাবকহীন হয়ে পড়ে৷ দলের দ্বিতীয় ব্যক্তি হয়ে নেতাকর্মীদের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে দল ও সরকারের সাথে যোগসূত্র স্থাপন করা কিংবা নেতা-কর্মীদের বিপদ-আপদ এবং প্রয়োজনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার লোকটি নেই! ফলে এ দল সরকারে থাকাকালে কিছু লোকের আদর্শ চ্যুতি, সুবিধাবাদী চক্রের ষড়যন্ত্রের শিকার হলে কিংবা সাধারণ নেতাকর্মীদের অসহায়ত্বে দল যথাযথ ভূমিকা নিতে পারে না। আর সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো দলীয় প্রধান যাকে যে পদে দায়িত্ব দেয় সে যেন কোনো অদৃশ্য কারণে তার পূর্বের সহকর্মীদের ভুলে শত্রু-মিত্রতে একাকার হয়ে যায়!
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ এর ৩ ও ৭ নভেম্বর; জেনারেল জিয়া, জেনারেল এরশাদ ও খালেদা জিয়ার স্বৈরশাসনের যাতাকল; ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তি সহিংসতা; ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট এবং ২০০৭ সালের ১/১১ পূর্ব ও পরবর্তি ঘটনা তারা বেমালুম ভূলে যান! ফলে সরকারি দলে তারা মোটামুটি খিচুড়ি টাইপের মজাদার খাবার বনে যান, যা সবার জন্য উন্মুক্ত রাখলেও বন্টনে নিজেদের লোক না থাকায় নিজ কর্মীরা অভুক্ত থেকে হাহাকার করলেও তা কর্তা ব্যক্তিদের কর্নকূহরে তেমন একটা প্রবেশ করে না।
অন্যদিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করার মাধ্যমে দ্বিতীয় ধারার রাজনীতির সূচনা হলেও দেশের স্বাধীনতায় বিরোধিতা করা, ক্ষমতায় গিয়ে লুটেপুটে খাওয়া, নীরব থেকে সুযোগের সন্ধানে ওৎঁপেতে থাকা সুবিধাবাদী চক্রের জোট এরা। এদের আলাদা আলাদা দল থাকলেও চরিত্রগত দিক থেকে এক ও অভিন্ন। এরা সরকারে থাকলে সমগোত্রীয়দের নিয়ে সব ভাগবাটোয়ারা করে নেয়, আর বিরোধী শক্তি মানে ১ম ধারা নিশ্চিহ্ন করতে নানা পদক্ষেপ নেয়। বিরোধী দলে থাকতে এরা পরাশ্রয়ী হয়ে ১ম পক্ষের উদারতার সুযোগ নেয়। এরা সীমারের ন্যায় নির্মম; অকৃতজ্ঞ, মুনাফেক ও মীর জাফরের বংশধর। বাংলাদেশের অধিকাংশ সম্পদ এদের কব্জায়।
প্রথম ধারার রাজনৈতিক দলের প্রধান অনেকটা আর্জেন্টিাইন জাদুকর মেসির মত যোগ্য সহচরের অভাবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছতে পারছেন না। ব্যক্তিগতভাবে সমসাময়িক বিশ্বে তার মত নেতা নেই। আন্তর্জাতিক পুরস্কার-সম্মানোনায় হাফ সেঞ্চুরি হয়ে গেছে! কিন্তু তিনি নিজেও নিরাপদ নন, অদৃশ্য বুলেট তাকে তাড়া করে। তেমনি দীর্ঘদিন সরকারে থাকলেও তার সাধারণ-তৃণমূল কর্মীরা ভালো নেই। অথচ স্বৈরশাসকদের বন্দুকের সামনে বুক পেতে দিয়ে, পেটোয়া বাহিনীর নির্মম প্রহার উপেক্ষা করে, গ্রেনেড-বুলেটের ক্ষত নিয়ে লড়াই সংগ্রাম করে এরাই দলকে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছে। আজ সে দুর্দিনের কর্মীদের নানা ষড়যন্ত্রে নিষ্পেষিত করা হলেও তাদের পাশে কেউ নেই। চলছে সুবিধাবাদীদের ভোগ উৎসব।
ক্ষমতার সিড়ি সাধারণ নেতাকর্মীদের দুমড়ে মুচড়ে, ভেঙে চুরে জ্বালানির ন্যায় আগুনে পুড়লেও তার খবর কেউ রাখে না। তৃণমূলের কর্মীরা যে দলের মূলশক্তি তা বেমালুম ভুলে গিয়ে সব সময় ক্ষমতায় থাকা দুধের মাছিদের নিয়ে চলছে অনিশ্চিত যাত্রা। কোথায় এর গন্তব্য, কে তাদের মাঝি তা কেউ জানে না। নিজ দলের নেতাকর্মীদের দর্শক সারিতে কখনও কখনও গ্যালারির বাইরে রেখে চলছে তাদের কর্মযজ্ঞ। এ যেন ‘ডিপ পাড়ে হাসে খায় বাঘডাশে’।
লেখক: সাবেক ছাত্রলীগ নেতা।
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]