শিরোনাম
নিজের পরিচয়ে পরিচিত শেখ কামাল
প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২১, ১১:৩৫
নিজের পরিচয়ে পরিচিত শেখ কামাল
মো. শফিকুল ইসলাম
প্রিন্ট অ-অ+

শেখ কামাল ১৯৪৯ সালের ৫ আগস্ট গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আজ ৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ ছেলে শেখ কামালের ৭২তম জন্মবার্ষিকী।। আজ তাঁর জন্মদিনে জানাই অনকে অনকে শুভচ্ছো।


১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের গুলিতে অকালে শাহাদাৎ বরণ করেন। বাংলাদেশ সৃষ্টির রুপকার এবং হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র ছিলেন শেখ কামাল। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট ভাই। তিনি ছিলেন ক্রীড়া ও সংস্কৃতির একজন পদ প্রদর্শক। শেখ কামাল ছিলেন একজন ভদ্র ও নিরহঙ্কারি মানুষ। মানুষ তাকে বলতে পারতো না যে সে রাষ্ট্রপতির ছেলে। সহপাঠীদের আলোচনায় আমি তা শুনতে পাই। তার আচরণ এবং চলাফেরা ছিলো একবারেই সধারণ। তিনি বেড়ে উঠেছেন দেশপ্রেমকে ধারণ করে এবং ছিলেন ক্রীড়া আন্দোলনের পথিকৃত। তিনি এক চির তারুণ্যর প্রতীক। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী ছিলেন শেখ কামাল। তিনি সর্বস্তরে ছিলেন বিস্তৃত। যেমন রাজনৈতিক মাঠ থেকে শিক্ষাঙ্গন, নাটকের মঞ্চ, খেলার মাঠ সব জায়গায় ছিলো তার দীপ্ত উপস্থিতি। তিনি ছিলেন ক্রিকেটের সফল পথ প্রদর্শক এবং আধুনিক ক্রিকেটের প্রবর্তক। কারণ আজকের ক্রিকেটের বর্তমান অবস্থান কিন্তু শেখ কামালের হাত ধরে শুরু হয়।


কামাল ১৯৬৭ সালে ঢাকা শাহীন স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট পাস করেন। তিনি ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি গানের বিদ্যালয় ছায়ানটে সেতার অনুশীলন করেন। তিনি তার সহপাঠির মধ্যে কোন সমস্যা দেখা দিলে, সমাধান করার চেষ্টা করতো। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ সংগঠক। যা তার কর্মজীবন বিশ্লেষণ করলে আমরা উপলদ্ধি করতে পারি। তিনি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যকলাপে জড়িত ছিলেন। ১৯৭১ সালে শেখ কামাল মুক্তি বাহিনীর গেরিলা সংগ্রামেরও সংগঠক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যুদ্ধকালীন কমিশন পান।


শেখ কামাল একজন বীর মুক্তিযুদ্ধ ছিলেন এবং মুক্তিযোদ্ধার সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানীর এডিসি হিসাবে কাজ করেন। স্বাধীনতার পরে তিনি সামরিক বাহিনী থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এসে সমাজবিজ্ঞানে বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তার মর্মান্তিক মৃত্যুর পূর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। তিনি শ্রেণী কক্ষে অন্যান্য ছেলেদের মতোই সাধারণভাবে চলাফেরা করতেন। এমনকি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র হওয়া সত্ত্বেও তিনি কোনো অহংকারী ব্যক্তি ছিলেন না, তিনি সকলের জন্য বিনয়ী, মায়াময় ও খুবই হেল্পফুল ছিলেন।


১৯৭৫ সালের ১৪ জুলাই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা ক্রীড়াবিদ সুলতানা খুকিকে বিয়ে করেন। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা তাদেরকে বাঁচতে দিল না। অনেকেই মনে করতেন তিনি শেখ মুজিবের উত্তরসূরি হতে যাচ্ছেন। আমাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হতে দিল না ঘাতকের দলেরা। তারপরও শেখ কামাল বেঁচে থাকবে আমাদের সবার মাঝে তার কাজের মাধ্যমে। শেখ কামাল একজন আগ্রহী ক্রীড়াবিদ হিসেবে ১৯৭২ সালে আবাহনী প্রতিষ্ঠা করেন, যা বর্তমানে বাংলাদেশের জনপ্রিয় ক্রীড়া ক্লাব। তিনি ক্রিকেট, ভলিবল এবং অন্যান্য খেলায় পারদর্শী ছিলেন। তিনি ইতিবাচক লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতেন এবং তিনি কেবল আবাহনী লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেননি এবং দেশের ফুটবলে রেখেছেন বিশাল ভূমিকা। তিনি আবাহনী ক্লাব তৈরি করলেও অন্যান্য ক্লাবগুলোকে নানাভাবে সহায়তা করতেন। খুব অল্প বয়সেই শেখ কামাল খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন এবং ক্লাবের উন্নয়নে কল্যাণে ব্যাপক কাজ করে গেছেন।


এছাড়াও তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন যেমন ১৯৬৬ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার সাতমসজিদ রোডে কেডিএস ফার্মাসিউটিক্যাল ল্যাবরেটরির সামনে আজ আবাহনী মাঠ নামে পরিচিত তা বন্ধ্যা জায়গা নামে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় । কিন্তু ঐ অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শেখ কামালের নেতৃত্বে তার বন্ধুরা এবং ধানমন্ডি এলাকার একদল যুবক মিলে তীব্র প্রতিবাদ গড়েন। তিনি ছিলেন গণতান্ত্রিক মনা কারণ আবাহনী ক্লাব গঠন করার সময় সংগঠনের নাম চেয়ে ধানমন্ডি এলাকার প্রতিটি বাড়িতে চিঠি বিতরণ করেন। ফলে লালমাটিয়া কলেজের বাংলার অধ্যাপক মতিউর রহমানের পরামর্শে আবাহনী নামটি নামকরণ করা হয়।


শেখ কামালের প্রথম এবং প্রিয় খেলা ছিল বাস্কেটবল। তিনি বিএএফ শাহীন স্কুলের বাস্কেটবল দলের সাথে খেলা শুরু করে পরে স্পার্স ক্লাবে থাকেন। তিনি আজাদ স্পোর্টিং, রেঞ্জার্স এবং ওয়ান্ডার্স ক্লাবের হয়ে খেলেছেন এবং অনেক ট্রফি জিতেছেন। তিনি খুলনা আবাহনীর পক্ষে শক্তিশালী বাস্কেটবল দলও গঠন করেন। শেখ কামাল স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনের সময়ে অ্যাথলেটিক্স ইভেন্টগুলোতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন এবং ১৯৭৫ সালে সলিমুল্লাহ হলের বার্ষিক ক্রীড়া ইভেন্টে ১০০ মিটার স্প্রিন্ট সহ তিনবার চ্যাম্পিয়ান হন।


শেখ কামাল ক্রিকেটে ছিলেন দুর্দান্ত কারণ দ্রুত গতিতে বোলিং করতেন। ১৯৭৪-৭৫ মৌসুমে তিনি জেন্ডারিয়া ক্রিকেটারদের হয়ে শের-ই-বাংলা কাপ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে জাতীয় ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ানশিপ খেলায় অংশগ্রহণ করেন। তিনি আবাহনীকে ১৯৭৪ সালে প্রথম বিভাগ লিগ শিরোপা জিতিয়ে দেন এবং একবার পুরাতন ক্লাব জেন্ডারিয়ার বিরুদ্ধে ২৮ রানে পাঁচ উইকেট নেন। ভলিবলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় সময়ে সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগকে আন্তঃ-গৃহ ভলিবল চ্যাম্পিয়ান হওয়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।


শেখ কামাল খুব অল্প বয়সেই একজন নিপুণ এবং দক্ষ আয়োজক হিসাবে তার যোগ্যতা প্রমাণ করে কারণ তার নেতৃত্বে কয়েকজন ফুটবলারকে কাজী সালাহউদ্দিন, গোলাম সরোয়ার টিপু এবং অমলেশ সেনের মতো খেলোয়ারদেরকে আবাহনীতে নিয়ে আসেন যা একটি শক্ত দলে ভূষিত হয়। বাংলাদেশের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শেখ কামালের অবদান আজও বাংলার মানুষ গভীরভাবে স্মরণ করছে। তিনি ছিলেন দেশের নামকরা ক্রীড়া ক্লাব আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি এবং ঢাকা থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য। কামাল স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশে আধুনিক ফুটবলের সূচনা করেন। শেখ কামাল ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সব নেতাদের মধ্যে এবং রাজনৈতিক পরিবেশে তিনি তরুণদের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন।


বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই মুক্তিযুদ্ধের অগ্রদূত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বিভক্ত হয়ে পড়ে। সেই সঙ্কটের মুহুর্তে শেখ কামাল দলটির পুনর্গঠন শুরু করেন যা পরবর্তীতে ছাত্রলীগকে আরো গতিশীল করে তোলে। দিন-রাত কাজ করে এবং তৃণমূলের সকল স্তরে যোগাযোগ এবং সমন্বয় করে এক মাসের মধ্যে তিনি ছাত্রলীগকে বাংলাদেশের অন্যতম শক্তিশালী ছাত্র সংগঠনে পরিণত করেন। তাই বলা হয় শেখ কামাল বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করতে তার অবদান অনেক এবং অপরিসীম। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে একটি শক্ত ভিত্তি স্থাপন করেন যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিস্তার করে।


শেখ কামাল শুধু দেশের তরুণদের অনুপ্রেরণা হিসাবে নন, তিনি সকলের উত্ধসঢ়;সাহের প্রতীক। তিনি এমন স্মরণ শক্তি সম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন যে তাঁর সংস্পর্শে যে কেউই আসতো পরে তাদেরকে সহজেই চিনতে পারতেন। সারাদেশে তার শত শত বন্ধু এবং অনুগামী রয়েছে যারা তাকে কখনই ভুলতে পারবেন না। তিনি সহজেই নতুন বন্ধুদের সাথে মিশতে পারতেন এবং অল্প সময়ের মধ্যেই তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠতেন। শেখ কামাল ছিলেন সাধারণ মানুষের একজন সত্যিকারের নেতা। তিনি এত স্বাভাবিক জীবন যাপন করতেন যে কেউই তাকে বুঝতে পারত না যে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পুত্র, যদি না অন্য কেউ তাকে পরিচয় করিয়ে দেয়। কারণ তিনি নিজেই নিজের কার্যক্রমে জনমানুষের নিকট সুপরিচিত ছিলেন এবং ভবিষ্যতে থাকবেন। শেখ কামালকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ এবং তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করছি। নতুন প্রজন্ম তাকে ধারণ করে ক্রিকেট এবং অন্যান্য খেলা সহ দেশের রাজনীতি এগিয়ে নিয়ে যাবে এটাই আমার প্রত্যাশা।


লেখক: শিক্ষক ও সাবেক সভাপতি-শিক্ষক সমিতি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ত্রিশাল, ময়মনসিংহ। পিএইচডি ফেলো, জংনান ইউনির্ভাসিটি অব ইকোনমিকস অ্যান্ড ল, উহান, চীন।


বিবার্তা/এনকে

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com