শিরোনাম
বিবাহ সমাচার ও ফোর-বি ফর্মুলা
প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২১, ২০:১৭
বিবাহ সমাচার ও ফোর-বি ফর্মুলা
প্রফেসর ড. মো. নাসির উদ্দীন মিতুল
প্রিন্ট অ-অ+

পাত্রীর সন্ধানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ঘনিষ্ঠ সহকর্মীর সাথে আলাপ করছিলাম। প্রথম আলাপেই বললো, ‘হাতে একটা পাত্রী আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। তোমার এলাকারই মেয়ে। পাত্রী হিসেবে খুব ভালো হবে। মেধায় মননে মেয়েটা প্রমিজিং। দেখতে পারো’। হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলাম, কনের ‘ফোর-বি’ ভাল আছে তো? শুনে বললো, ‘ফোর-বি’র অধিকাংশই পাত্রীর এর সাথে কমপ্লাই করে। তুমি এগুতে পারো’। ভাবলাম ‘ফোর-বি’ তাহলে উনিও জানেন। তার কথা শুনে পরিবারের মাধ্যমে প্রস্তাব পাঠাই। ওদের পরিবার সরাসরি হ্যাঁ-না কিছু না বললেও রেসপন্স খুব ধীর এবং এক পর্যায়ে তা হ্যাং হয়ে যায়। কারণটা জানতে পারিনি।


মন খারাপ হলেও করার কিছু নেই। এটা নিয়েতো আর জোর চলে না। জীবন বহমান। অন্যত্র চেষ্টা করি। ভালো কিছু প্রস্তাবও পাই। কিন্তু মন পড়ে থাকে এখানে। খানিকটা জিদও চেপে যায়। পাশের বাড়ির মেয়ে। চোখের সামনে স্কুলে যেতে দেখেছি। প্রাইভেট পড়তে দেখেছি। তাদের বাড়ির সামনে রোজ বিকেলে বন্ধুদের নিয়ে জমিয়ে কত আড্ডা দিয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে দেখেছি। রোকেয়া হলের সামনে দু’চারদিন আড্ডাও যে মারিনি, তা কিন্তু নয়। মাঝে মাঝে পাড়াতো বোন হিসেবে লাইব্রেরীর সামনে আইসক্রিমও খাইয়েছি। বন্ধুদের কেউ কেউ তাকে খুব পছন্দ করতো। তাদের হয়ে প্রেমের প্রস্তাবও দিয়েছি। কিন্তু আমি কখনো ভাবিনি তার প্রতি আমার নিজের কোনো দূর্বলতা তখনো জন্মেছে? তবে প্রস্তাব ঝুলিয়ে রাখার কারণে মনে মনে হালকা জিদের পাশাপাশি কেমন যেন এক রকমের হালকা আকর্ষণও অনুভব করতে শুরু করলাম।


মনকে সান্ত্বনা দিই। ভাবি নিজেই বা কম কিসে? উপজেলার সেরা স্কুলের সেরা ছাত্র ছিলাম! ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিধারী ছিলাম। স্কাউট কমান্ডার ছিলাম। ব্যাডমিন্টন খেলায় চ্যাম্পিয়ান ছিলাম। বোর্ডে স্ট্যান্ড না করলেও স্টারমার্কসধারীতো ছিলাম! যদিও ঢাবিতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসে দেখি টপ মার্কস নিয়ে এমন হাজারো সুপারষ্টার আমার সামনে-পিছে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ফর্ম জমা দেয়ার জন্য। তাদের কাছে আমি কোন নস্যি হে? এদতসত্ত্বেও যুদ্ধে হারিনি। ভর্তি হয়েছি। ঢাবির পাঠ চুকিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছি। কিন্তু মাথায় ঢুকছে না কেন আমার প্রস্তাবের ফাইল অযত্ন-অবহেলায় ধুলোয় ফেলে রাখছে? পাত্র হিসেবে আমি খারাপটা কিসে?


পাত্রী খুঁজতে ফোর-বি ফর্মুলা কোথায় শিখেছিলাম? ভুলে গেছি। তবে এইটুকুন মনে আছে হোস্টেল জীবনে বন্ধুদের কাছ থেকে নিতান্তই মজা করে এটি জেনেছি। পরবর্তীতে পাত্রী খোঁজার সময় তা মনে গেঁথে যায় দারুণভাবে। ফোর-বি অনেকটা কনে খোঁজার প্যারামিটার হিসেবে কাজ করে। এর ইন্ডিকেটর ও ভ্যারিএবেলগুলো প্রয়োগ করতে গিয়ে দেখি কম-বেশী অন্য সকলের কাছেই বিষয়টি বেশ পরিচিত। কনেপক্ষ আগে থেকেই এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল। আমার প্রস্তাব ঝুলিয়ে রেখে ফোর-বি নিয়ে তারা গোপনে কাজ শুরু করে।


১৯৯৯ সাল। মোবাইল ফোন তখনও মধ্যবিত্তের নাগালে আসেনি। ল্যান্ডফোনে এনডব্লিউডি কল করা ছিল বেশ ব্যয়বহুল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় প্রধানেরই কেবলমাত্র এটি ব্যবহারের অনুমতি ছিল। তিনি আবার পাসওয়ার্ড দিয়ে ফোনসেটটি লক করে রাখতেন। নিতান্ত প্রয়োজনে বিশেষ অনুরোধে মাসে এক-আধবার পাসওয়ার্ড খুলে দিলেও সময়সীমা বেঁধে দিতেন। ফলে প্রয়োজন মিটলেও কথা বলায় তৃপ্তি মিটতো না। এ্যানালগ ফোনের পাশাপাশি কার্ড ফোনের প্রচলন ছিল তখন। বিয়ে সংক্রান্ত জরুরি আলাপের জন্য প্রায়শই ৩০০ টাকা দিয়ে একখান কার্ড কিনে রাবির’র গেস্ট হাউজ ‘জুবেরী’র ফোন বুথে ঢুকে খানিক বাদে মন খারাপ করে বেরিয়ে আসতাম। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা কলিগ বা বন্ধুদের অনেকে প্রশ্ন করতো কি হয়েছে? ফোন খারাপ নাকি লাইন খারাপ? কি উত্তর দিব, ভেবে পেতাম না। কি করে বুঝাই যে, কার্ডের ৩০০ টাকা যেভাবে দ্রুত ফুরিয়ে গেলো তার সাথে পাহীবিহীন সুপারী গাছ থেকে ছ্যাচড়ে পড়ার অদ্ভুদ যেন একটা মিল রয়েছে। বরিশালের প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম আমার। সেখানেই দেখেছি সুপারী গাছে উঠতে গ্রামের লোকজন দু’পায়ে এক ধরনের রশি বা কাপড় ব্যবহার করে। যা ‘পাহী’ নামে পরিচিত। নামার সময় এটি খুলে নিলে খুব সহজেই দ্রুত ছ্যাচড়ে নীচে নামা যেতো। কার্ড ফোনের কথা মনে হলেই গ্রামের এ অদ্ভুত স্মৃতির কথা আমার মনে পড়তো। উপমাটি মনে করে নিজেই হাসতাম। কিন্তু উত্তরবঙ্গের অনেকেই এমন উপমার মানে বুঝবে না। তাই মন খারাপের কারণ ব্যাখ্যা থেকে বিরত থাকতাম।


বলছিলাম ফোর-বি ফর্মুলার কথা। এটি এ্যারেঞ্জড ম্যারেজের উপযুক্ত প্যারামিটার। এখনও উপযুক্ত পাত্র-পাত্রীর জন্য মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন এই চারটি বি’এর ওপরই নির্ভর করেন। গুছিয়ে হয়তো ফর্মুলা অনুসরন করেন না। কিন্তু অন্তরে ধারণ করেন। এ্যাফেয়ার ম্যারেজ এর সাথে এটি ঠিক যায় না। কারণ সেখানে এসব ভাবাভাবির পূর্বেই কর্মসাড়া। ক্ষেত্র বিশেষে, অনেকে প্রেমে পড়ার আগে ধৈর্য ধারন করে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করে নিতে একটি অলিখিত গোপন চুক্তির আওতায় ফোর-বি ফর্মুলা প্রয়োগ করে দেখতে পারেন। ভালো ফল পেলে এগুবেন নচেৎ ওখানেই যবনিকা টানবেন। এতে বড় ধরনের কোনো ঝুঁকি থাকবে না। তবে অতি আবেগীয় প্রেমে এ ফর্মুলার ফলাফল জিরো। সেখানে ফোর-বি পুরোই অকেজো।


অনেকেই প্রকাশ্যে বলবেন, ‘ফোর-বি? এসব আবার কি? বাবা-মায়ের পছন্দে বিয়ে করেছি। ফোর-বি বলে কিছুই চিনতাম না’। জ্বী! ফর্মুলা এমনই। নিজের অজান্তেই সুস্পষ্ট কিছু ক্রাইটেরিয়া সেট করে আপনি এর প্রয়োগ ঘটিয়ে বসে আছেন অথচ ঠিক গুছিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারছেন না। এবার একনজরে দেখা যাক কি আছে ফোর-বি তে।


ফোর-বি মানে চারটি ‘বি’ যার প্রথমটি দিয়ে ‘ব্যাকগ্রাউন্ড’ বুঝায়। পাত্র-পাত্রীর ব্যাকগ্রাউন্ড কেমন? অর্থাৎ তাদের বেড়ে ওঠার পটভূমি, পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা কেমন? এটা কোনো প্রতিষ্ঠিত শক্ত ভিতের ওপর গড়ে উঠেছে কিনা? উভয়ের পশ্চাদ্ভূমি এক হলে আচার-আচরণ সংস্কৃতিতে মিল থাকবে এটাই স্বাভাবিক। না থাকলে বিয়ের পরে অভিযোজন প্রক্রিয়ায় বর-কনে কতটুকু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম? সব পরিবেশে মানিয়ে নেয়ার মত কোপিং ম্যাকানিজম রয়েছে কিনা? ডাক্তারী ভাষায় যাকে বলে ‘প্রিভিয়াস হিষ্ট্রি’। অর্থাৎ অতীত ইতিহাস থেকে বর্তমান ও ভবিষ্যত জেনে নেয়া। মুলত ব্যাকগ্রাউন্ড এর মাধ্যমে পাত্র-পাত্রীর অতীত প্রেক্ষাপটের চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়। যদিও বুদ্ধিমানের কাজ হচ্ছে অতীতের আলোকে কখনোই বর্তমানের বিচার না করা। তাই অতীতকে এড়িয়ে চলাই ভালো। আমাদের ক্ষেত্রে বাড়ির অবস্থান পাশাপাশি হওয়ায় উভয়ের ব্যাকগ্রাউন্ড জানতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। এদতসত্ত্বেও স্যাটেল ম্যারেজে এর প্রয়োগের আবশ্যকতা অনস্বীকার্য।


দ্বিতীয় বি’র মানে ব্রেইন। এটি দিয়ে পাত্র-পাত্রীর মেধা অর্থাৎ মাথার ঘিলু যাচাই করা হয়। তাদের বুদ্ধিদীপ্ত চিন্তা-চেতনার যথার্থ ঊম্মেষ ঘটেছে কিনা? পড়াশোনায় কেমন? সামাজিক কিনা? ভবিষ্যতে কিছু করে খেতে পারবে কিনা? সংসারের হাল ধরার মত মেধা আছে কিনা? অনেকের বিশ্বাস, মেধাবী মা-বাবার সন্তানও মেধাবী হয়। তাই বিয়ের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের মেধার সন্নিবেশ ঘটানো যাবে কিনা? সংসার ধর্ম আর যুদ্ধক্ষেত্র সমার্থক শব্দ। অতএব আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তারা সক্ষম কিনা? এসব বিষয়ে পাত্র-পাত্রীর ‘মাথার ঘিলু’ পরিমাপের নিমিত্তে ‘ব্রেইন’ মুল্যায়ন জরুরি। আমার মনে আছে পাত্রীর খোঁজ দেয়ার সময় আমার সহকর্মী বলেছিল, ‘মেয়েটি প্রমিজিং’। উক্তিটির মধ্য দিয়ে তার ব্রেইন ভালো বুঝাতে চেয়েছেন। যার বাস্তব প্রতিফলন আমি বর্তমানে দেখছি।


তৃতীয় বি’র মানে হল ব্লাড। এর দ্বারা পরিবারের বংশ পরিচয় বুঝানো হয়। পাত্র-পাত্রীর মন-মানসিকতা, স্বভাব, বিলিভস, রিচুয়ালস, প্র্যাকটিসগুলো কি রকম এটা নির্ধারন করে দেয় ব্লাড। সঠিক বংশ পরিচয়ে বেড়ে ওঠা উত্তম। অভিজাত ও মধ্যবিত্তের সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানের একটি বড় প্যারামটার হিসেবে এখনও বংশ পরিচয় একটি ফ্যাক্টর। অনেকে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আশ্রয় নেয় প্রতারণার। ঘটনা এমনও ঘটছে যে, কেউ কেউ নিজেকে এমন বংশের লোক বলে দাবি করে, যে বংশের সঙ্গে তার আদৌ কোনো সম্পর্ক নেই। বংশ পরিচয় নিয়ে লুকোচুরি কাম্য নয়। পরে এটা নিয়ে সংসারে তিক্ততা বাড়ে। আর এ নিয়ে কোনো পক্ষেরই ইনফেরিয়র কমপ্লেক্সিটিতে ভোগা উচিত নয়। কারণ উচ্চ-বংশীয় হতেই হবে, এটা মোটেই গুরুত্বপূর্ণ নয়। প্রবাদের সেই কথা নদীর জল ঘোলাও ভালো। বংশের মেয়ে কালোও ভালো। এসব সনাতনী প্রবাদ। ভুলে যান এসব। এখন আর এসব চলে না। আজকের দিনে বিশ্ব প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ আলাদা। দক্ষতা ও মেধা এখানে টিকে থাকার এমমাত্র নিয়ামক শক্তি। শিল্পায়নের এ যুগে যোগ্যতার অগ্রাধিকার সর্বাগ্রে। বংশ পরিচয় এখানে অনেকটা ম্রিয়মান। এদতসত্ত্বেও পারিবারিক শিক্ষা যা বংশ পরম্পরায় প্রচলিত আছে তার প্রভাব ও গুরুত্ব ব্যক্তি তথা সমাজ ও রাষ্ট্র জীবনে অপরিসীম। আমাদের ক্ষেত্রে যেহেতু ‘যোগ্যতা’ই মূল প্যারামিটার ছিল তাই ‘বংশ পরিচয়’ এর তেমন কোনো প্রভাব এখানে পরিলক্ষিত হয়নি। তবে দীর্ঘদিন পাশাপাশি বসবাসের কারনে বংশ পরিচয়ের ব্যাপারটা বেশ ভালো করেই উভয়ের জানা ছিল। এ নিয়ে সন্তোষ্টি ছিল উভয় পরিবারের মধ্যে।


চতুর্থ বি’র মানে বিউটি। যার অর্থ সৌন্দর্য। বিয়ের প্রসঙ্গ এলেই পাত্র-পাত্রী কিংবা তাদের পরিবার পরিজন কৌতুহলভরে প্রথমেই জিজ্ঞাসা করেন, সুন্দর কিনা? এ্যারেঞ্জড ম্যারেজে এটি একটি সাধারন জিজ্ঞাসা। অর্থাৎ চেহারার গুরুত্ব সর্বাগ্রে। চেহারায় স্বাভাবিক সৌষ্ঠব রয়েছে কিনা? মুখশ্রী কেমন? উচ্চতার সাথে শরীরের গঠন ঠিকাছে কিনা? ইত্যাদি। অনেকেই উপরের চাকচিক্য আর মুখাবয়ব দেখে মনের খবর জানতে পারেন না। ফলে সংসার জীবনে নানানভাবে এর খেসারত দিতে হয়। অথচ সৌন্দর্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানটি অন্তর্নিহিত রয়েছে স্বভাব ও চরিত্রে। এখানে চেহারার সৌন্দর্যের চেয়ে মনের সৌন্দর্যকে গুরুত্ব দেয়া হয়। পাত্র-পাত্রী উভয়ের স্বাভাবিক রুপ- লাবন্যের মাধুর্য ও মুখশ্রীর শোভা উজ্জ্বল করে এই স্বভাব-চরিত্র। চেহারা ভালো অথচ স্বভাব খারাপ। কেউ পছন্দ করবে না। কিন্তু একটু উল্টো করে ভাবুন। চেহারা খারাপ অথচ স্বভাব-চরিত্র উত্তম। সকলের মন কেড়ে নিবে। এটাই সমাজের বাস্তব চিত্র। আমাদের ক্ষেত্রে আমি বলবো যতটকু প্রত্যাশা ছিল প্রাপ্তি ঘটেছে তার থেকে ঢের বেশী। তাই যাচাই-বাছাইয়ে সময়ক্ষেপণ হলেও সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।


আমাদের সমাজে পাত্রী দেখার যে রীতি প্রচলিত রয়েছে তার পুরোটাই ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসনের পরিপন্থী। যেমন ধরুন, পাত্রের বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজন মিলে ১০-১২ জনের একটি দল পাত্রীর বাড়ি যাওয়া এবং সবার সামনে বসিয়ে মাথার কাপড় সরিয়ে, দাঁত বের করে, হাঁটিয়ে দেখা। চুল কেমন? ঘড়ির টাইম জানে কিনা? রান্না জানেতো? নামাজ পড়ে? কোরান শরীফ শুদ্ধ উচ্চারনে পড়তে পারেতো? আচ্ছা, পারলে একটু শোনাবেন, সুরা ফাতেহা শুদ্ধ করে? ইত্যাদি। এগুলো দারুণ বিব্রতকর। জানি না এসব সমাজ থেকে কবে চিরতরে নির্মুল হবে।


অনেকেই বিয়ের সময় পাত্রীর সৌন্দর্য ও সম্পদকে বিবেচ্য বিষয় হিসেবে দেখে। এ ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি চোখে পড়লে মেয়ে ও তার পরিবারের সামনেই মন্তব্য করতে থাকে। যাতে মেয়ের পরিবার কষ্ট পায়, মনঃক্ষুণ্ন হয়। যেমন-মেয়ে কালো, খাটো, চোখ সুন্দর না, ঠোঁট মোটা, ইত্যাদি। যে কোনো ধর্মে এভাবে মন্তব্য করতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। আর ইসলামেতো বাহ্যিক সৌন্দর্যের চেয়ে আত্মিক ও ঈমানের সৌন্দর্যকে প্রাধান্য দেয় সবচেয়ে বেশী। তাই এসব বলে মানুষকে কষ্ট দেয়া রীতিমত অন্যয়।


শুনেছি রাশিফলে তিন ধরনের পাত্রীর ব্যাপারে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করা হয়েছে। ধরণ তিনটি হচ্ছে-ক্যান্সার ক্যুইন, এমপ্রেস এরিজ ও রুলার লিও। এরাই নাকি পাত্রী হিসেবে সবচেয়ে বেশী উপযুক্ত! ধরণ বুঝে অনুধাবন করতে পারি, ফোর-বি প্রয়োগে আমি ‘রুলার লিও’ ক্যাটাগরীর পাত্রী পেয়েছি। কারণ এরা সংগ্রামী। বিপদে পিছিয়ে পড়ে না বরং শক্ত হাতে রুখে দেয়। এদের মানসিক শক্তি অসাধারণ। এরা কখনও আবেগের জোয়ারে ভাসেন না। অসাধারণ ব্যক্তিত্বের জন্যই এরা অন্যদের থেকে আলাদা। দায়িত্ববান। সবরকম বিপদ থেকে স্বামী-সন্তানকে আগলে রাখেন।এ ক্যাটেগরীর বর্ণনায় এমনটিই লেখা আছে।


বিয়ে কোনো ছেলেখেলা নয়। অনেক বড় একটি দায়িত্ব এটি। তাই নিজেকে একটু গুছিয়ে নিয়ে কাজটি সম্পন্ন করলে ভাল হয়। আগামী প্রজন্ম যেন জীবনের এই কঠিন সিদ্ধান্তটি সঠিকভাবে নেয়, নারীপুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্য এমনটিই প্রত্যাশা।


লেখক : ডিন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।


বিবার্তা/জাই


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com