ডিকাবকে বিক্রম মিশ্রি
বাংলাদেশের আগামী নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত ভারত
প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৩:০০
বাংলাদেশের আগামী নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত ভারত
আঙ্গুর নাহার মন্টি, নয়াদিল্লি থেকে
প্রিন্ট অ-অ+

বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচনে জনগণের সমর্থন নিয়ে যারাই সরকার গঠন করবে তাদের সঙ্গেই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আগ্রহী ভারত।সোমবার দিল্লির সাউথ ব্লকে ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্ট এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ - ডিকাবের সফররত সদস্যদের সঙ্গে মত বিনিময়ের সময় পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি একথা বলেন।


ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বলেন, যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, অর্ন্তভুক্তিমূলক এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় দিল্লি। তবে এই নির্বাচন কীভাবে হবে তা নির্ধারণ করবে সেদেশের জনগণ। তবে নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই নয়; আন্তর্জাতিক ভাবেও যেন বৈধতা পায়।


এক প্রশ্ন জবাবে বিক্রম মিশ্রি বলেন, শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে বাংলাদেশের অনুরোধের বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে ভারত। এটা আইনি ও বিচারিক বিষয়, তাই এই মুহূর্তে এর থেকে বেশি কিছু বলতে চায় না তারা।


অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, নিরাপত্তাজনিত কারণে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ভারত পর্যটক ভিসা বন্ধ রেখেছিল। এখন ক্রমশ ভিসা দেয়ার সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে।


মতবিনিময় সভায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধির জয়সোয়াল, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার বিষয়ক ডেস্কের যুগ্ম সচিব বি শ্যাম, ডিকাবের সভাপতি এ কে এম মঈনউদ্দিন ও সাধারন সম্পাদক আরিফুজ্জামান মামুনসহ ২৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিলেন। এসময় আগামী নির্বাচন, শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর প্রসঙ্গ ছাড়াও ভিসা ইস্যু, সীমান্ত হত্যা, পুশইন, গঙ্গা ও তিস্তার পানি চুক্তিসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা দিক উঠে আসে।


২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতন এবং দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধের পর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কতটা সম্ভব, এমন প্রশ্নে বিক্রম মিশ্রি বলেন, এটা বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের সিদ্ধান্ত। আমরা এতে হস্তক্ষেপ করতে চাই না।


ভারত আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করতে চায় বলে অনেকের ধারণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই ধারণা ভুল। আমরা কোনো বিশেষ দলকে সমর্থন করি না। বাংলাদেশের জনগণের ভোটে যে সরকার আসবে, আমরা তার সঙ্গেই কাজ করব। কারণ ভারত বাংলাদেশের জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।


এ প্রসঙ্গে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে অন্তর্বর্তী সরকারের বিধান না থাকলেও ভারত শুরু থেকেই এই সরকারের সঙ্গে কাজ করছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অভিনন্দন জানিয়েছেন। বাস্তবতা মেনে নিয়ে দুদেশের দৈনন্দিন কার্যক্রম বজায় রেখেছে। বর্তমান সরকারের দায়িত্ব হলো যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন আয়োজন করা, যার প্রস্তুতি আমরা লক্ষ্য করছি।


তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করেছে। আমরা আশা করি, নির্বাচনটি যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে এবং যে সরকারই জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আসবে, আমরা তার সঙ্গেই কাজ করব।



এসময় ঢাকা-দিল্লির সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরে উল্লেখ করে বিক্রম মিশ্রি বলেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারতের পররাষ্ট্র নীতি জনগণকেন্দ্রিক। দুদেশের সম্পর্ক সাংস্কৃতিক, ভাষাগত, ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক ভিত্তিতে গঠিত। ফলে রাজনৈতিক বা ভূ-রাষ্ট্রীয় পরিবর্তন আসলেও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে।


সীমান্ত হত্যা ও পানি বণ্টনসহ দ্বিপক্ষীয় ইস্যুতে আলোচনা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দুদেশের মধ্যে যৌথ নদী কমিশন রয়েছে। গঙ্গা পানি চুক্তির নবায়ন নিয়ে আলোচনা চলছে এবং নবায়ন করার সময় এখনও ফুরিয়ে যায়নি। সীমান্তে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বন্ধে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা চাই, ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক ভবিষ্যতমুখী হোক। ভারত পেছনে তাকাতে চায় না। ভারত সম্পর্ক ভালো চায়, শক্তিশালী করতে চায়, অতীতে যাই ঘটুক না কেন।


পুশব্যাক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বৈধ পথেই অবৈধ লোকদের ফেরত পাঠানো উচিত। কিন্তু দুই হাজারের বেশি মানুষের তালিকা আমরা বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের কাছে দিয়ে রেখেছি। কিন্তু সেগুলোর পরিচয় নিশ্চিত করে এখনো জবাব মিলেনি।


জুলাই আন্দোলন দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের রিপোর্ট সম্পর্কে বিক্রম মিশ্রি বলেন, রিপোর্টটি সম্পর্কে শুনেছি, তবে বিস্তারিতভাবে পড়ার সুযোগ হয়নি। আমরা আমাদের নিজস্ব পর্যবেক্ষণ থেকে মাঠপর্যায়ের অবস্থা দেখেছি।


বিবার্তা/মন্টি/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com