
বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের প্রথম স্ত্রী গুলতেকিন খান নিজের জীবনের কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। বিশেষত কিশোরী, তরুণী এবং তাদের অভিভাবকদের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবেই তিনি এ অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন।
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) নিজের ফেসবুক পোস্টে গুলতেকিন জানিয়েছেন, তার বিবাহিত জীবনে বহু ভুল বোঝাবুঝি ও কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তিনি মনে করেন, সেই সময়ে অভিভাবকরাও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। তিনি লিখেছেন—‘পুরো বিয়েটাতে আমার চেয়ে অভিভাবকদের বেশি ভুল ছিলো। আর কোনো মেয়ে যেন আমার মতো ভুল না করে।’
এক পর্যায়ে তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয়। নর্থ ডাকোটা ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করার সময় ব্যর্থতার কারণে মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। তখনই নানা রাগারাগি ও দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।
গুলতেকিন খানের স্মৃতিচারণ অনুযায়ী, একবার ডিসেম্বরের প্রচণ্ড শীতে হুমায়ূন আহমেদ তাকে বাসা থেকে বের করে দেন।
গুলতেকিন বলেন, ‘‘ওর তখন খারাপ একটি সময় যাচ্ছিল, নর্থ ডাকোটা ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডির জন্যে একটি পরীক্ষা হয় যার নাম কিউমিলিয়েটিভ, সেখানে দশ নাম্বার থাকে। পরীক্ষার জন্য সম্ভবত দুই বছর সময় থাকে। সেখানে অনেকগুলো পরীক্ষা হয় এবং দশের মধ্যে তিনটি ২ নাম্বার পেতে হয়, বাকি গুলো ১ নাম্বার পেলেই হয়। কিন্তু সে অনেকগুলো পরীক্ষা দিয়েও একটিতেও ২ নাম্বার পাননি তখনো। এটা নিয়ে তার মধ্যে ফ্রাসটেশন (বিষণ্নতা) কাজ করছিলো। তাছাড়া তিনি রেগে গেলেই বলতেন, ‘বাসা থেকে বের হয়ে যাও।’
সেদিনও পরীক্ষায় ১ পেয়ে মেজাজ খুব খারাপ ছিল। বাসায় এসেই অকারণে রাগারাগি শুরু করে। এবং এক পর্যায়ে কোনো কারণ ছাড়াই আমাকে বলেন, ‘বাসা থেকে বের হয়ে যাও!’
আমি বলি, কোথায় যাবো?
উনি বলেন, ‘যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাও!’ আমাকে চুপচাপ কাঁদতে দেখে আরও রেগে যান এবং আমাকে ধাক্কা দিয়ে বাইরে পাঠিয়ে ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে দেন। আমার গায়ে তখন একটি শার্ট এবং প্যান্ট, পায়ে স্পন্জের স্যান্ডেল ছিল। আর বাইরে ডিসেম্বর মাসের প্রচন্ড ঠান্ডা!আমি শীতে কাঁপতে কাঁপতে দরজা ধাক্কা দেই আর বলি, দরজা খোলো প্লিজ, কলিংবেল বাজাতে থাকি কিন্তু দরজা খুলে না।বেশ কিছুক্ষণ পরে আমার হাত পা প্রায় জমে যায়! তখন দৌড়াতে থাকি।’’
তখন গুলতেকিনের ঠান্ডায় হাত-পা জমে যাওয়ার উপক্রম হলে কাছের এক দোকানে গিয়ে এক আমেরিকান বৃদ্ধার সাহায্যে তিনি ফোন করতে সক্ষম হন। এক বন্ধুর সহায়তায় আশ্রয় নেন এবং পরদিন সন্তানের কাছে ফিরে আসেন।
তিনি আরও জানান, সেই সময় ড. ইয়াসমীন হক কয়েকজন আইনজীবী পাঠান তার বাসায়। আইনজীবীরা ব্যাংক হিসাব, ডিভোর্স এবং সম্পর্কিত বিষয়ে নানা প্রশ্ন করলেও তিনি দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। গুলতেকিনের দাবি, হুমায়ূন আহমেদ তার বইয়ে যেসব আত্মজীবনীমূলক ঘটনা লিখেছেন, তার অনেকটাই কল্পনা থেকে সৃষ্টি।
বিবার্তা/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]