
শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরারের পদত্যাগের দাবিতে সচিবালয়ে ভাঙচুর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় ১ হাজার ২০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ।
ডিএমপির সচিবালয় নিরাপত্তা বিভাগের এসআই গোলাম মুক্তি মাহমুদ মঙ্গলবার (২২ জুলাই) রাতে এ মামলা করেন।
২৩ জুলাই, বুধবার এজাহার গ্রহণ করে ঢাকার মহানগর হাকিম মো. সাইফুজ্জামান আগামী ২৮ আগস্টের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদেন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলায় ‘দাঙ্গা সৃষ্টি করে সচিবালয়ে প্রবেশ, ভাঙচুর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হত্যার উদ্দেশ্যে লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের’ অভিযোগ করা হয়েছে। বিভিন্ন কলেজের অজ্ঞাত শিক্ষার্থী ও ‘স্বার্থান্বেষী দুষ্কৃতকারীদের’ আসামি করা হয়েছে সেখানে।
শাহবাগ থানা আদালতের প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই জিন্নাত আলী এ তথ্য দিয়েছেন।
মামলার বিবরণে বলা হয়, মঙ্গলবার ঢাকার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে অজ্ঞাতনামা ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী ও ‘স্বার্থান্বেষী দুষ্কৃতিকারীরা’ মাইলস্টোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মর্মান্তিক দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে এইচএসসি পরীক্ষা দেরিতে স্থগিতসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে ‘মার্চ টু শিক্ষা মন্ত্রণালয়’ কর্মসূচি পালন করে। প্রথমে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাবোর্ড ও শিক্ষাভবনের উদ্দেশে মার্চ করলেও পরে শিক্ষাভবন থেকে বের হয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশে সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নেন।
অভিযোগে বলা হয়, আন্দোলন চলাকালে নিরাপত্তার স্বার্থে সচিবালয়ের সকল গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাদের সচিবালয়ে প্রবেশ না করার জন্য বিভিন্নভাবে অনুরোধ করা হয়। পরে তারা বেআইনি জনতাবদ্ধ হয়ে পুলিশের বেরিকেড ভেঙে সচিবালয়ের মেইন গেইটের সামনে এসে দাঙ্গা সৃষ্টি করে। গেইট ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে। তখন তাদের বাধা দিলে কর্তব্যরত পুলিশ, সেনাবাহিনী ও আনসার বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হত্যার উদ্দেশ্যে লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে অনেকে গুরুতর আহত হন। এ ছাড়া সরকারি গাড়ি ভাঙচুর করে ক্ষতি সাধন, বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে।
শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরারের পদত্যাগের দাবিতে মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘাতে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
পুলিশ লাঠিপেটা করে, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের সচিবালয়ের ভেতর থেকে বের করতে পারলেও আশপাশের এলাকায় কয়েক ঘণ্টা ধরে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষ চলে।
এই সংঘর্ষের মধ্যে আহত ৬৬ শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যায়।
উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সোমবার জঙ্গি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় মঙ্গলবারের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতের দাবি ওঠে। মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘসূত্রতায় পরীক্ষা স্থগিতের সেই ঘোষণা আসে সোমবার রাত ৩টার দিকে। অনেক শিক্ষার্থীর কাছে সেই খবর না পৌঁছানোয় কেন্দ্রে গিয়ে ফিরে আসতে হয় তাদের।
শিক্ষা উপদেষ্টার বরাতে তথ্য উপদেষ্টা সোমবার গভীর রাতে পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়টি ফেইসবুকে জানান। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে অনেক পরে, যা নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এরপর শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার এবং শিক্ষা সচিব সিদ্দিক জুবায়েরকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দেন বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনে নামা শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার দুপুরে প্রথমে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করতে যায়। সেখান থেকে বেলা দেড়টার দিকে তারা সচিবালয়ের সামনে জড়ো হন।
ঢাকার বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ, ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ, আইডিয়াল কলেজ, নূর মোহাম্মদ কলেজ, মিরপুর বাংলা কলেজ, কমার্স কলেজ, আদমজি ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, মিরপুর কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের চলমান এইচএসসি পরীক্ষার্থীসহ আরো কিছু শিক্ষার্থী এ কর্মসূচিতে অংশ নেন।
বিবার্তা/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]