সাক্ষাতকার
'আন্তর্জাতিক চাপ দেশের গণতান্ত্রিক শক্তিকে উৎসাহিত করবে'
সাক্ষাৎকারে রুহুল কবির রিজভী
প্রকাশ : ১৯ জুন ২০২৩, ০৯:৫৭
'আন্তর্জাতিক চাপ দেশের গণতান্ত্রিক শক্তিকে উৎসাহিত করবে'
মো. ইলিয়াস
প্রিন্ট অ-অ+

অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। যিনি বর্তমানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। রিজভী ১৯৮৯ সালের সর্বশেষ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি নির্বাচিত হন। ভিপি থাকাকালীন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে রাজশাহী রেলস্টেশনে গুলিবিদ্ধ হন। তখন থেকেই নানান শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন তিনি।



যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা-নীতি, বিএনপির আন্দোলন, জামায়াতের প্রকাশ্য সমাবেশ, আসন্ন নির্বাচন, দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ নানা দিক নিয়ে বিবার্তার সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তার কথায় উঠে এসেছে গণতান্ত্রিক বিশ্ব বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। আন্তর্জাতিক চাপ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শক্তিকে আরও উৎসাহিত করবে। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন বিবার্তার নিজস্ব প্রতিবেদক মো. ইলিয়াস।



বিবার্তা: দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?


রুহুল কবির রিজভী: দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নিঃসন্দেহে সারা দেশ ও জাতির যে মূল্যায়ন আমার সেই একই মূল্যায়ন। মানুষ একটি অবরুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। মানুষের জান-মালের কোন নিরাপত্তা নেই, শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি বিরাজমান। যে সমাজ বা রাষ্ট্রে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই, সেই রাষ্ট্র বন্দিশালা ছাড়া আর কিছুই নয়। আমরা এই ধরনের বন্দিশালার মধ্যে অবস্থান করছি।


বিবার্তা: আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের উপর যে চাপ, সেই চাপ আগামীতে আরও বাড়বে বলে মনে করেন কিনা?


রুহুল কবির রিজভী: আমরা মনে করি গণতান্ত্রিক বিশ্ব বাংলাদেশের রাজনীতি পর্যবেক্ষণ করছে। যে সকল দেশে দীর্ঘদিন ধরে গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক অবস্থার চর্চা বিরাজমান রয়েছে- এমন দেশগুলো এ ধরনের ফ্যাসিবাদকে পছন্দ করে না। বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তাদের সহমর্মিতা রয়েছে, কারণ বাংলাদেশের জনগণ বন্দি অবস্থায় জীবনযাপন করছে। সে ক্ষেত্রে আমার মনে হয় আন্তর্জাতিক বিশ্বের এই চাপ বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার সংস্থা থেকে শুরু করে গণতান্ত্রিক দেশগুলো বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে তাদের দেয়া বক্তব্য, তাদের স্টেপ (পদক্ষেপ) নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শক্তিকে উৎসাহিত করবে।


বিবার্তা: বাংলাদেশের উপর আমেরিকার ভিসা নীতির পর বিরোধীদলগুলো যে আন্দোলন করছে এটা কি সঠিক পথেই রয়েছে নাকি আরও বাড়ানো উচিত?


রুহুল কবির রিজভী: কার্যকর হচ্ছে। আন্দোলন তার যাত্রাপথে, পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে এর উঠানামাটা। সেটা সেভাবেই নির্ভর করবে যে কখন কোন পরিস্থিতির উপর কোন ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হবে। আমরা যে দাবি করছি, সে দাবির উপর সরকার যদি সহমত না হয় তাহলে নিশ্চয়ই আমাদের কর্মসূচি আরও বেগবান ও তীব্র করতে হবে।


বিবার্তা: গত ৭ ডিসেম্বরের পূর্বে বিএনপির আন্দোলনের গতি যেরকম ছিল ভিসা নীতির পরে সেটা আরও বেশি হওয়ার কথা ছিল, সে রকম দেখা যাচ্ছে না। এবিষয়ে কী বলবেন?


রুহুল কবির রিজভী: ভিসা নীতি তো দেশের ব্যাপার। আমরা যে আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সেটা করেই যাব। আন্দোলন কর্মসূচি প্রতিহত করার জন্য সরকার তার সর্বোচ্চ প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। এর মধ্যেও আমরা জেগে উঠছি বড় বড় সভা, সমাবেশ, তারুণ্যের সমাবেশ, পথযাত্রা- একের পর এক কর্মসূচি হয়ে যাচ্ছে।


বিবার্তা: ১০ বছর পরে জামায়াতের প্রকাশ্য সমাবেশ কি ভিসা নীতির ফসল, নাকি ভিন্ন রাজনৈতিক কৌশল?


রুহুল কবির রিজভী: সরকার দেশকে যে পর্যায়ে নিয়ে গেছে, যার ফলে একটি বৃহৎ শক্তি বাংলাদেশে এই ভিসা নীতি প্রয়োগ করেছে। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যে অর্জিত একটি দেশ, সেই দেশে এটা কামনা করা যায় না। কিন্তু সরকারের কর্মকাণ্ডে আজকে এটি ঘোষিত হয়েছে। এর জন্য দায়ী আজকের অবৈধ সরকার।


বিবার্তা: সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক নিয়ে কিছু কথা বলাবলি হচ্ছে, এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?


রুহুল কবির রিজভী: এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না, এ বিষয়ে আমার কোন বক্তব্য নেই। পরিস্থিতি, রাজনৈতিক ডেভেলপমেন্ট সিচুয়েশন ছাড়া আগাম কিছু বলা যাবে না।


বিবার্তা: বিএনপি কবে নাগাদ এক দফা আন্দোলনে যেতে চায়?


রুহুল কবির রিজভী: বিএনপি এখন একদফা আন্দোলনে রয়েছে এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই। আমরা প্রতিদিন এক দফা আন্দোলনের মধ্যেই রয়েছি। আন্দোলনের মধ্যে রয়েছি বলেই প্রতিদিন আমাদের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে, গ্রেফতার করছে। এখন নতুন করে অনেক গায়েবি মামলা দেয়া হচ্ছে, হয়রানি করা হচ্ছে, যেটা ১৮ সালে নির্বাচনের পূর্বেও হয়েছিল।


বিবার্তা: সরকার যদি বিএনপির দাবি মেনে না নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই নির্বাচন করে ফেলে, তখন আপনারা কী করবেন?


রুহুল কবির রিজভী: বিএনপি জনগণকে সাথে নিয়ে এই সরকারের বিরুদ্ধে যেমন তুমুল প্রতিরোধ করা দরকার সেটাই করার চেষ্টা করবে। এটা হচ্ছে একটি ফ্যাসিস্ট সরকার, জনগণের অধিকারের ব্যাপারে এদের কোন সহমর্মিতা নেই। জনগণের ইচ্ছায় সরকার গঠিত হবে, আবার জনগণের ইচ্ছায় সরকার ক্ষমতা থেকে সরে যাবে। চিরকালীন এই পদ্ধতিটা ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্যই আমাদের সংগ্রাম, এই সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।


বিবার্তা: জনসম্পৃক্ততায় বিএনপির তেমন তৎপরতা চোখে পড়ে না, জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর কোন উদ্যোগ রয়েছে কিনা?


রুহুল কবির রিজভী: জনসম্পৃক্ততা না বাড়লে বিএনপির যে সকল কর্মসূচিগুলো হচ্ছে- জনসভায় হোক বা পথসভাই হোক প্রতিটি কর্মসূচিতে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ প্রমাণ করে বিএনপি একটি গণভিত্তিক রাজনৈতিক দল এবং প্রচুর জনসমর্থন রয়েছে। জনদাবিতে বিএনপির সব সময় কর্মসূচি পালন করে আসছে। বিএনপি সাম্প্রতিক যে সকল কর্মসূচি পালন করছে তার মধ্যে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে।


বিবার্তা: আগামীর বাংলাদেশ কেমন দেখতে চান?


রুহুল কবির রিজভী: আগামীর বাংলাদেশের একটি চমৎকার সোনালি ভোর এদেশের মানুষ দেখতে চায়। মূল কথা হলো একটি স্বাধীন সমাজ ব্যবস্থা এখানে গড়ে উঠবে। মানুষ মুক্ত কণ্ঠে কথা বলবে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে। সত্য এবং ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা হবে, বিচার বিভাগ সত্যিকারার্থে স্বাধীন হবে। বিচার বিভাগ হবে মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল, যেটা গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে দেখা যায়। এমন বাংলাদেশ আমরা প্রত্যাশা করি। মুক্তকণ্ঠে কথা বলার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা- এজন্যই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। দেশের মা বোনেরা নির্যাতিত হয়েছে। এই ঋণ পরিশোধ করার জন্যই দেশের গণতান্ত্রিক শক্তি সংগ্রাম করছে। তারা জীবন দিয়েছে শেখ হাসিনাকে সারাজীবন ক্ষমতায় রাখার জন্য নয়। এখানে তারা দেশের সম্পদ লুট করবে, আর বিদেশে তাদের পরিবার আরাম-আয়েশে থাকবে। তার জন্য কী এত রক্ত, এত মানুষের আত্মত্যাগ? সেজন্য নয়। মানুষ চেয়েছে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র- যেখানে প্রত্যেকের স্বাধীনতা নিশ্চিত থাকবে। যেটাকে আমরা বলি নাগরিক স্বাধীনতা অর্থাৎ প্রকৃত গণতন্ত্র। এটাই দেশের জনগণ দেখতে চায়।


বিবার্তা/এমই/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com