সাক্ষাতকার
'বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই, তবে বই দেখে বুঝে পছন্দ করতে হবে'
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা
প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩:৪৩
'বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই, তবে বই দেখে বুঝে পছন্দ করতে হবে'
সামিনা বিপাশা
প্রিন্ট অ-অ+

সত্তর দশকের বাংলাদেশি প্রথিতযশা কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। জাতিসত্তার কবি হিসাবে অধিক পরিচিত তিনি। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা, গবেষণা ও প্রচারের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তিনি বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে।



কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার কবিতার পাশাপাশি কথাসাহিত্য, মননশীল প্রবন্ধ, লোকসংস্কৃতি, নন্দনতত্ত্ব ও অনুবাদ সাহিত্যেও বিচরণ রয়েছে। তিনি বাংলা একাডেমির একজন ফেলো; পাশাপাশি আমেরিকান ফোকলোর সোসাইটি, ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর ফোক ন্যারেটিভ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসসহ নানা আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য তিনি।



সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৫ সালে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন নূরুল হুদা। ১৯৮৮ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। ১৯৯৭ সালে লাভ করেন তুরস্কের রাষ্ট্রপতির বিশেষ সম্মাননা।


সম্প্রতি বিবার্তা২৪ডটনেট অনলাইন পোর্টালের প্রতিবেদকের সাথে আলাপচারিতায় অমর একুশে বইমেলা ২০২৪ প্রসঙ্গে নানা বিষয়ে কথা বলেছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।


বিবার্তা : করোনাকালের ঘাটতি কাটিয়ে বইমেলা কি স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে পেরেছে এইবার?


কবি নূরুল হুদা : এটা বলা কঠিন। কারণ, কোনো ঘাটতি সহজে পূরণ করা যায় না। কারণ, করোনার সময় যা হয়ে গেছে সেই ঘাটতি তো আর পূরণ করা সম্ভব নয়। কিন্তু বলা যেতে পারে, করোনার ফলে যে ক্ষতি হয়েছিল, ২০২১ সালে যে ক্ষতি, তা অপূরণীয় তবে আমরা চেষ্টা করেছি, পুরো বিশ্ব চেষ্টা করেছে, বাংলা একাডেমি চেষ্টা করেছে, তাতে ক্ষতি অনেকটাই কাটিয়ে উঠে স্বাভাবিক গতিতে ফেরা সম্ভব হয়েছে।


বিবার্তা : বইমেলা প্রায় শেষের দিকে, এবারের আয়োজন কতটা সফল ছিল বলে আপনি মনে করছেন?


কবি নূরুল হুদা : দেখুন, সব আয়োজনে কিছু না কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি থাকে, বইমেলাতেও সেটা থাকবে স্বাভাবিক। মেলায় এবার অনেক পারটিসিপেশন, অনেক অংশীদারিত্ব হচ্ছে, তবে আমি বলবো এবারের বইমেলা সব মিলিয়ে খুবই ভালো হচ্ছে, বেচা-বিক্রিও ভালো হচ্ছে।


আমরা এবার প্রথম থেকেই নানা সুবিধার দিকগুলো নিশ্চিত করতে পেরেছি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মোড়ক উন্মোচন মঞ্চের পেছনে গতবারও মেলার শেষ দিকে আমরা বাথরুমের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। কিন্তু এবার প্রথম থেকেই সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরকম বিভিন্ন বিষয়ে আমরা সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থাপনা করতে পেরেছি।


আবার যেমন, গতবার পরীক্ষামূলক ছিল কিন্তু এইবার সারিগুলো ঠিকভাবে বিন্যস্ত করা সম্ভব হয়েছে। আমরা পরিচ্ছন্নতাও নিশ্চিত করতে পেরেছি অনেকাংশেই। তবে, যেটা বললাম, ত্রুটি বিচ্যুতি থাকবেই। ত্রুটি না থাকলে পরবর্তীতে তার নতুন কিছু করার সুযোগ ঘটে না।


মানুষ হলেই ত্রুটি কিছু হবেই। সেটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা সবসময়ই রাখতে হয় এবং সেই চেষ্টা আমাদের আছে। এই বছর আর গত বছর আলাদা। গতবারের মতো করার চেষ্টা করলে এই বছর আমি নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো না। এবারের মতো এই বছরের চিন্তা করতে হবে। সেটা এবারের বইমেলায় বাংলা একাডেমি করতে পেরেছে বলেই মনে করছি।


বিবার্তা : আপনি অকপটে ত্রুটিগুলো স্বীকার করে নিচ্ছেন। এটি আপনার উদার মনের পরিচয়। এটা কি বর্তমানের কবি-সাহিত্যিকের মধ্যে দেখা যায়?


কবি নূরুল হুদা : এটা যার যার নিজস্ব বিষয়। ত্রুটি সবার মধ্যেই থাকে, সেটা ঠিক করে নেওয়াই সকলের উচিত।


বিবার্তা : বইমেলায় ১৬তম দিনে প্রকাশিত হয়েছে ২৯৮টি নতুন বই, এটা একদিনের রেকর্ড সংখ্যক প্রকাশিত বই। এছাড়াও প্রায় প্রতিদিনই প্রচুর বই বের হচ্ছে। অথচ বইয়ের মান ও লেখক, প্রকাশক ও প্রকাশনী নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠছে এটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?


কবি নূরুল হুদা : বই লেখে লেখক, বই প্রকাশ করে না। প্রকাশ করে প্রকাশক। প্রকাশক বই বের করার সময় যদি পাণ্ডুলিপিটি যাচাই করে নেয়, পদ্ধতির মাধ্যমে লেখকের পাণ্ডুলিপিটি যদি পরীক্ষা করে নেয় তাহলে এত বই প্রকাশ হওয়ার কথা নয়। এই দায় প্রকাশকের যে, পাণ্ডুলিপিটি যাচাই বাছাই করে বই প্রকাশ করতে হবে। সম্পাদিত বই দেখে শুনে যাচাই বাছাই করে প্রকাশিত হওয়ার প্রচলন এখনো আমাদের দেশে হয়নি।


বিবার্তা : তাহলে আমাদের মূল সমস্যাটা লেখকদের মাঝে নয়? লেখক চাইবেই বই প্রকাশ করতে কিন্তু প্রকাশের এই বিষয়টি দেখতে হবে?


কবি নূরুল হুদা : হ্যাঁ, অবশ্যই। এটা প্রকাশককে এটা দেখতে হবে। তাকেই যাচাই বাছাই পরীক্ষা করে বই বের করতে হবে।


বিবার্তা : আমরা যদি সম্প্রতি আলোচিত খন্দকার মুশতাক ও তিশার কথা বলি, অর্থাৎ এদের বইয়ের প্রসঙ্গটি টানি?


কবি নূরুল হুদা : অবশ্যই। একই। কোন বই যখন প্রকাশিত হয়ে যাবে তখন প্রকাশক হিসেবে যার নাম লেখা আছে, প্রথম দায় প্রকাশকের, বইয়ে যদি তেমন কিছু থাকে সেটা দেখলেন না কেন সেই দায় প্রথমে প্রকাশকের তারপর আসবে লেখকের প্রসঙ্গ, লেখক কেন এমন লেখা লিখলেন। একটা বইয়ের মেধাস্বত্ব লেখক, প্রকাশক দুজনেরই।


বিবার্তা : বইমেলা কি মেট্রোরেলের সুবিধাভোগী হতে পারছে? অন্যবারের চেয়ে মেট্রোরেলের কারণেই কি বইমেলাকে সফল বলা যায়?


কবি নূরুল হুদা : অবশ্যই। মেট্রোরেলের কারণে বইমেলায় লোক সমাগম অনেকটাই বেড়েছে, প্রচুর মানুষ আসছে। তবে, বইমেলা সফল হতে মেট্রোরেলই একমাত্র বা প্রধান কারণ নয়, তবে অন্যতম কারণ।


বিবার্তা : এই প্রজন্মের পাঠকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।


কবি নূরুল হুদা : বই পড়তে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই, তবে কোন বই পড়ব তা দেখে শুনে বুঝে পছন্দ করতে হবে।


বিবার্তা/এসবি/রোমেল/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com