সাক্ষাতকার
যেকোনো স্বীকৃতি নতুন দায়িত্ববোধ তৈরি করে : ড. ওয়াহিদুন্নেসা
প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৩, ১৩:১৩
যেকোনো স্বীকৃতি নতুন দায়িত্ববোধ তৈরি করে : ড. ওয়াহিদুন্নেসা
মহিউদ্দিন রাসেল
প্রিন্ট অ-অ+

ড. গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী। সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত এক নাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের এই অধ্যাপক গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় ২০২৩ সালে এশিয়ার শীর্ষ ১০০ বিজ্ঞানীর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। তাঁর সাথে তালিকায় রয়েছেন দেশের অদম্য আরেক নারী বিজ্ঞানী। তিনি হলেন অণুজীববিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা।


রবিবার (১১ জুন) ‘দ্য এশিয়ান সায়েন্টিস্ট ১০০’ শিরোনামে নিজেদের ওয়েবসাইটে তালিকার অষ্টম সংস্করণ প্রকাশ করেছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক বিজ্ঞান সাময়িকী ‘এশিয়ান সায়েন্টিস্ট’। যেখানে এশিয়ার শীর্ষ ১০০ বিজ্ঞানীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের এই দুই নারী বিজ্ঞানী। গবেষণা খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় ২০১৬ সাল থেকে বিজ্ঞানীদের তালিকা প্রকাশ করে আসছে সাময়িকীটি। প্রতিবছর ১৭ ক্যাটাগরিতে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়ে থাকে।বাংলাদেশের পাশাপাশি তালিকায় রয়েছে চীন, ভারত, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন, হংকং, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামও।


এশিয়ার সেরা ১০০ বিজ্ঞানীর তালিকায় স্থান পাওয়া অধ্যাপক গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী প্লাস্টিকের দূষণ এবং প্রকৃতি ও মানুষের জীবনে এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে একাধিক গবেষণা করেছেন। ২০২২ সালে তিনি জলজ প্রতিবেশ এবং বিপন্ন প্রাণী সুরক্ষায় অবদানের জন্য তিনি ওডব্লিউএসডি-এলসিভিয়ার ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড পান। উপকূলীয় নারীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য কাজ করছেন তিনি। ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী জুওলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের সদস্য।


বরেণ্য এই নারী বিজ্ঞানী কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিদ্যায় (জলভূমি পরিবেশবিদ্যা) বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের বিপন্ন জলাশয় ও প্রাণিকূল নিয়ে গবেষণা করছেন। জেলেরা ব্যবহারের অনুপোযোগী নাইলনের জাল নদী বা জলাশয়ে ফেলে দেন, এটি প্লাস্টিকদূষণ। জেলেদের এ দূষণ বন্ধে কাজ করেছেন তিনি। বর্তমানে কাজ করছেন প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা ও এর ঝুঁকি নিয়ে



সম্প্রতি জলজ পরিবেশবিদ এই নারী বিজ্ঞানী বিবার্তা২৪ডটনেটের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় কথা বলেছেন। আলাপে তিনি স্বীকৃতির পাওয়ার বিষয়সহ ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। তাঁর সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিবার্তা প্রতিবেদক মহিউদ্দিন রাসেল।



বিবার্তা: আপনি এশিয়ার সেরা ১০০ বিজ্ঞানীর তালিকায় জায়গা অর্জন করেছেন। এই বিষয়ে আপনার অনুভূতি কেমন?


ড. গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী: দেখুন- আমি আমার ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে প্রথমে স্বীকৃতির বিষয়ে জানতে পেরেছি। আর যেকোনো স্বীকৃতি অবশ্যই ভালো লাগার বিষয়। এই স্বীকৃতিতে আমি সম্মানিত বোধ করছি। তবে এটা একইসাথে বিরাট দায়িত্বের ব্যাপারও বটে। আমাকে এখন দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে অনেক সচেতন হতে হবে। আর কমিটমেন্টের জায়গা থেকে আমার চলমান কাজগুলোকে আরও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে হবে। তবে হে, এটা সত্যি যে, এই স্বীকৃতি ভবিষ্যতে আরও কাজের জন্য এক ধরণের উৎসাহের জায়গা তৈরি করেছে।


বিবার্তা: নারীরা গবেষণার কাজে কম আসছে। এর পেছনে আপনি কী কারণ দেখেন?


ড. গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী: এই কথা তো অনস্বীকার্য যে, মেয়েদের জন্য গবেষণার কাজ অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। তারপরেও যাদের দৃঢ় মনোবলের সাথে একান্ত চেষ্টা রয়েছে তারা এই কাজে আসছেন, আর সফলও হচ্ছেন। সত্যি কথা বলতেই গবেষণা হচ্ছে সাধনার বিষয়। যার জন্য অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা করতে হয়। যেটার ধৈর্য্য অনেকের থাকে না। মোটকথা, গবেষণাকে ভালোবাসতে হবে, লেগে থাকতে হবে। তবে এখন আমাকে দেখে আমার ছাত্রছাত্রীরা সবাই বিশেষ করে ছাত্রীরা গবেষণার কাজে এগিয়ে আসার সাহস পাবে। আমার এই স্বীকৃতিতে আমার ছাত্রীরা অনুপ্রাণিত হবে বলে আমার বিশ্বাস।


বিবার্তা: প্লাস্টিক দূষণ ও পরিবেশের উপর এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে একাধিক গবেষণা করেছেন। এই বিষয়ে আপনার ভবিষ্যতে আর কোন পরিকল্পনা আছে কিনা?


ড. গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী: দেখুন, আমরা পরিবেশে বাস করি। কাজেই পরিবেশ ভালো থাকলে আমরাও ভালো থাকবো। কিন্তু এরপরেও আমরা এই কথাটি ভুলে যায়! ফলে পরিবেশ দূষণ করতে কুণ্ঠাবোধ করি না। একবারও ভাবি না, আমার- আপনাকে নিয়ে পরিবেশ। কাজেই আমি দূষণ করলে নিজেরও ক্ষতি, একইসাথে অপর জনেরও ক্ষতি। তাই এই বিষয়গুলো মাথায় নিয়ে পরিবেশের উপর আমার প্রজেক্ট চলমান রয়েছে। আর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে সমসাময়িক বিষয়ে যাওয়া। তবে এক্ষেত্রে এখন যেভাবে বিভিন্ন সংকট ও ক্ষতিকর দিক উঠে এসেছে, সামনে এর দৃশ্যমান কোন সমাধানে যেতে পারি কিনা, সেই কাজ করার একান্ত ইচ্ছে রয়েছে।


বিবার্তা: বিজ্ঞান গবেষণায় তহবিল বরাদ্দ কম হওয়ার বিষয়টি প্রায়শই আলোচিত হয়। আপনি এই বিষয়টিকে কিভাবে দেখেন?


ড. গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী: এটা সত্যি যে পরিমাণ তহবিল দেওয়া হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তবে এক্ষেত্রে আমার যেটা নাই, সেটা হয়তো অন্য কারো কাছে আছে অর্থাৎ দলগতভাবে কাজ করলে এটা ওভারকাম করা যায়। আর এই কাজটা আমি নিজেও করি। কারণ, আমাদের দেশটা দরিদ্র। কাজেই এখানে অভাব থাকবে, কম্পিটিশন থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এটাকে নেগেটিভভাবে নিয়ে বসে থাকবো, কাজ করবো না, এটা ঠিক না।



এক্ষেত্রে যেভাবে কাজটা করে নেওয়া যায় সেটা করা অবশ্যই ভালো অর্থাৎ হয়তো আমার নাই, আরেকজনের আছে। ফলে তার সাথে কোলাবোরেশনের মাধ্যমে কাজটি করলে সেটি নিজের জন্য, একইসাথে দেশের জন্যও মঙ্গলজনক হবে। আর রিসার্চের জন্য আমাদের টাকা থেকে শুরু করে অন্যান্য রিসোর্স, ল্যাব সরঞ্জামাদি দরকার। ফলে এক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা থাকলে কাজটি দ্রুততম সময়ে করা সম্ভব।



বিবার্তা: আপনারা দুইজন নারীই এই স্বীকৃতি পেয়েছেন। এটা নারীদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। নারীদের এগিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে কী বার্তা দিতে চান?


ড. গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী: নারীরা যেকোনো কাজে বেশি মনোযোগী হন। তারা দায়িত্ব পালনে অনেক বেশি সচেষ্ট থাকেন। তারা যদি ভালো সুযোগ পান, তাহলে তাদের দিয়ে অনেক বড় অর্জন সম্ভব। এক্ষেত্রে তাদের সততার সাথে এগিয়ে যেতে হবে। জীবনে নানা বাধা আসবে। কিন্তু থেমে থাকলে চলবে না। লক্ষ্যে অবিচল থেকে অবিরাম কাজ করে যেতে হবে। তাহলে সফলতা অবশ্যই ধরা দিবে।


বিবার্তা: বিবার্তাকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।


ড. গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী: আপনাকেও ধন্যবাদ।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com