আইএমএফের কঠিন শর্তে ঋণ নেবে না বাংলাদেশ
প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৪২
আইএমএফের কঠিন শর্তে ঋণ নেবে না বাংলাদেশ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, প্রতিশ্রুত ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আইএমএফের (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) যদি নতুন বা কঠোর কোনো শর্ত আরোপ করে তাহলে সরকার দ্বিতীয়বার ভাববে ঋণ নেবে কি না। বরং আমরা বিকল্প উৎস নিয়ে চিন্তা করব, কারণ আমাদের অর্থনীতি আগের থেকে অনেক স্থিতিশীল।


মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের বার্ষিক সভায় দ্বিতীয় দিনে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।


অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আইএমএফের (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) নতুন কোনো শর্ত আরোপ বা কঠোর হিসাব নির্ধারণ করা হলে সরকার তা পুনর্বিবেচনা করবে।


তিনি জানান, বাজেট সহায়তা নেওয়া হবে কি না—তা এখনো চূড়ান্ত নয়। তবে আইএমএফের শর্তসমূহ যদি দেশের জন্য অনুকূল না হয়, তাহলে সরকার বিকল্প উৎস থেকে সহায়তা নেওয়ার দিকেই নজর দেবে।


অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা এখন চেষ্টা করছি বিকল্প বাজেট সহায়তার ব্যবস্থা করতে—এডিবি, এআইআইবি’র মতো সংস্থাগুলোর সহযোগিতা নেওয়ার সুযোগ আছে।


তিনি আরও যোগ করেন, এই মুহূর্তে আমরা আইএমএফের চলমান প্রোগ্রামে আছি, তবে নতুন প্রোগ্রামে যাব কি না, সেটি সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।


করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক ধাক্কায় রিজার্ভের ধারাবাহিক পতন শুরু হলে ২০২২ সালে আইএমএফের দারস্থ হয় তৎকালীন সরকার। সে সময় নানা শর্তে ঋণ চুক্তি হয় ৪৭০ কোটি ডলারের। পরে ২০২৪ এর গণ আন্দোলনের পর ক্ষমতায় এসে আরও ৮০ কোটি ডলার ঋণ চুক্তি করে অন্তর্বর্তী সরকার। এর জেরে বাড়তে থাকে সংস্কার প্রশ্নে আইএমএফের নানা শর্ত।


উপদেষ্টা জানান, বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ বার্ষিক সভার পাশাপাশি একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশের আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে।


তিনি বলেন, আমরা এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, ওপেকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে উন্নয়ন ঋণ, অনুদান ও বাজেট সহায়তা নিয়ে আলোচনা করেছি। এরই ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যৎ সহযোগিতা ও সংস্কার কর্মসূচি নিয়েও মতবিনিময় চলছে।


অর্থ উপদেষ্টা জানান, সম্প্রতি এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে এবং আরও কয়েকটি বৈঠক নির্ধারিত রয়েছে। এছাড়া তিনি কমনওয়েলথ ফাইন্যান্স ব্রিজ ফোরাম-এ অংশ নিয়ে বাংলাদেশের আর্থিক অগ্রগতি ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নেওয়া পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেছি।


গত বছর যেখানে আমরা ছিলাম, তার চেয়ে এখন বাংলাদেশের অবস্থান অনেক ভালো। অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা এসেছে, বৈদেশিক মুদ্রাবাজার ও রিজার্ভের অবস্থান উন্নত হয়েছে, মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা কমেছে এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রমে গতি ফিরেছে, বলে দাবি করেন তিনি।


অর্থনৈতিক উপদেষ্টা আরও জানান, সরকার ব্যাংকিং খাতসহ বিভিন্ন সেক্টরে ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে, যা উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে। ‌‘সংস্কার কার্যক্রম এখনো চলমান এবং রেগুলেটরি কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করতে কিছু সময় লাগবে,’।


তিনি উল্লেখ করেন, সংস্কারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং পরবর্তী সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার দিকনির্দেশনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। নতুন প্রজন্ম যেন এসব সংস্কারের সুফল পায়, সেদিকেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।


সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতির ইতিবাচক রূপান্তর এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দৃশ্যমান। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে দুটি নতুন প্রকল্পের নকশা চূড়ান্ত হয়েছে, যা বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় নতুন মাত্রা যোগ করবে।’


তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, চলমান স্থিতিশীলতা ও সংস্কার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের অর্থনীতি আগামী বছরগুলোতে আরো ভালো হবে।


বিবার্তা/এসএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com