
স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের মাধ্যমে মধ্যম আয়ের পাশাপাশি স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
৮ অক্টোবর, বুধবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি ও পর্যালোচনা বিষয়ক এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে তিনি বলেন, “আমাদের কাছে এটা পরিষ্কার হতে হবে যে আমরা পরনির্ভর হতে চাই না। আমাদের যেই ডেডলাইন থাকুক না কেন আমাদেরকে আসলে স্বনির্ভর হতে হবে।
“আমরা যেন নিজেদের পায়ে নিজেরা দাঁড়াতে পারি। এটা পরিষ্কার হতে হবে যে আমরা আর পরনির্ভর হতে চাই না।”
বৈঠকে উপদেষ্টারা ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, কয়েকজন ব্যবসায়ী প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিকালে সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সচিব বলেন, বাংলাদেশের এলডিসি থেকে সহজে উত্তরণের বিষয়ে প্রস্তুতি কতটুকু? বাংলাদেশ কী করছে? বিভিন্ন খাতে, ওষুধ শিল্প বলেন, কৃষি বলেন, অন্য সমস্ত খাতে কী পরিমাণ কাজ হচ্ছে? এসব বিষয় মূল্যায়ন করা।
“আমরা কতদূর সক্ষমতা তৈরি করছি, সেগুলো নিয়ে আজকে বৈঠকটা ছিল।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, “এখন যেহেতু পরনির্ভর হয়ে আছি এর থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বের হয়ে হওয়ার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এর বাইরে আর আমাদের কোনো বিকল্প নাই। এজন্য আমাদের অভ্যাস পাল্টাতে হবে।
“আত্মনির্ভর হতে গেলে বুদ্ধি খাটাতে হবে। পরিশ্রম করতে হবে, লড়াই করতে হবে। এটা কঠিন হলেও এ কাজে আনন্দ আছে। আমরা যে নতুন বাংলাদেশের কথা বলি, নতুন বাংলাদেশ মানে হল স্বনির্ভর বাংলাদেশ।”
২০২৬ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বা এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের দিনক্ষণ রয়েছে। কোভিড মহামারী ও অন্যান্য দুর্যোগের কথা বিবেচনা করে এই সময় আরও পেছানোর সম্ভাবনাও দেখছেন অনেকে।
এ বিষয়ে প্রেস সচিব জানান, চলতি মাসে জাতিসংঘ বাংলাদেশের পর্যালোচনা কমিটি করবে। তারা আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ের মধ্যে পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন তৈরি করবে। সেই প্রতিবেদনের উপর নির্ভর করবে গ্র্যাজুয়েশনের সময়।
বৈঠকে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ (বিএপিআই) এর সভাপতি আব্দুল মুক্তাদির, বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান এবং ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে ইউরোপের দেশগুলোতে ভিসা জটিলতা নিয়েও আলোচনা হয়েছে জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, “পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে আমাদের নতুন নতুন শ্রমবাজার তৈরি হচ্ছে। নিউইয়র্ক সফরে প্রধান উপদেষ্টা কসোভোর প্রেসিডেন্ট, আলবেনিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে কথা বলেছেন। তারা বাংলাদেশ থেকে শ্রমশক্তি নিতে চাচ্ছে।
“তো তাদের ওইখানে যাতে ভিসার যে জটিলতা সেটা যেন না থাকে। কারণ পূর্ব ইউরোপীয় যে দেশগুলো আছে তাদের কারোরই আসলে বাংলাদেশে কোনো দূতাবাস নাই।
নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টা আইসিটি খাতের দিকে বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছেন বলে জানান তিনি।
“আইসিটিতে প্রচুর চাকরি তৈরি হচ্ছে। আইসিটিতে ৬ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হতো। আজকের বৈঠকে বলা হয়েছে, কিছু পুরনো খাতে প্রণোদনা ৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে এআইভিত্তিক খাতগুলোতে আরেকটু বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা,” বলেন প্রেস সচিব।
বৈঠকে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে কৃত্রিম তন্তু উৎপাদন খাতের বিকাশের স্বার্থে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাসের জন্য আরো ‘রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট’ স্থাপনের পরামর্শ দেওয়া হয়।
প্রধান উপদেষ্টা প্রচলিত পড়াশুনার পাশাপাশি বিজ্ঞানভিত্তিক পড়াশোনার উপরে জোর দিয়েছেন জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, “উনি উচ্চ মানের বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার কথা বলেছেন। উনি বলেছেন যে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক বেশি বিবিএ তৈরি করছে, যেটার আসলে বাজার একটা অতিরিক্ত সরবরাহ হয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের সত্যিকারের দরকার খুব, বিজ্ঞানের স্নাতক দরকার।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী, মুখ্য সচিব সিরাজউদ্দিন মিয়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক দূত লুৎফে সিদ্দিকী, ডাক, টেলিযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফায়েজ আহমেদ তৈয়ব, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মুরশেদ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বিবার্তা/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]