
বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে ‘ঘৃণার প্রতীক’ হিসেবে পাকিস্তানের পতাকা আঁকতে গিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী সেখানকার প্রক্টর ও আরেক দল শিক্ষার্থীর বাধার মুখে পড়েছেন। এসময় লাঞ্ছিত হয়েছেন ক্যাম্পাসের এক সাংবাদিক। পরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সহায়তায় সড়কে দুটি পতাকা আঁকা হয়, যাতে দেওয়া হয় জুতার ছাপ। এরপর শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেয় ‘রাজাকারি আর করিস না, পিঠের চামড়া রাখব না’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রথম প্রহরে প্রধান ফটকের সড়কে একদল শিক্ষার্থী ওই পতাকা আঁকতে গেলে বাধ সাধেন প্রক্টর অধ্যাপক মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক। এ সময় তিনি প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে পতাকা আঁকার পরামর্শ দেন। তখন শিক্ষার্থীদের তরফে বলা হয়, এর আগে ইসরায়েলের পতাকা আঁকা হলেও তখন অনুমতির প্রয়োজন হয়নি, এখন অনুমতি লাগবে কেন?
এ নিয়ে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন প্রক্টর। এরপর আস-সুন্নাহ আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা বাসে করে ক্যাম্পাস থেকে হলে যাচ্ছিলেন। তখন পতাকা আঁকিয়েরা বাসটিকে বিকল্প হিসেবে দ্বিতীয় ফটক ব্যবহার করতে বলেন।
তখন বাস থেকে নেমে আস-সুন্নাহ আবাসিক হলের একজন বলেন, “পাকিস্তানের পতাকা আঁকা ঠিক হচ্ছে না ভাই, তাদের সঙ্গে আমাদের এখন মিউচুয়াল হচ্ছে...।”
এসময় আঁকিয়েদের তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে ওই শিক্ষার্থী বাসে উঠে যান। এরপর বাসে থাকা শিক্ষার্থীদের একাংশ দলবেঁধে নেমে আঁকিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান। এ সময় তারা রঙের কৌটা ঢেলে পতাকা মুছে দেন।
এ ঘটনা সরাসরি সম্প্রচারের সময় কালের কণ্ঠ’র সাংবাদিক মিনহাজুল ইসলামকে হেনস্তা করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। লাইভ চলা অবস্থায় ওই সংবাদকর্মী ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রক্টরের কাছে গিয়ে হামলাকারীদের দ্রুত বহিষ্কারের দাবি জানান।
মিনহাজুল তখন বলেন, “অনুমতি না নেওয়ার অজুহাতে যদি পতাকা আঁকতে আসা শিক্ষার্থীদের তাৎক্ষণিকভাবে প্রক্টর অফিসে ডাকা যায়, তবে আজ বিজয়ের দিনে যারা পাকিস্তানপ্রেম দেখিয়ে আমাদের ওপর হামলা করেছে, তাদেরও এখনই বহিষ্কার করতে হবে।”
জবাবে প্রক্টর বলেন, “তোমাদের কাছে ভিডিও প্রমাণ আছে বলছো। প্রমাণসহ লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব।”
এরপর উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে চাইলে শিক্ষার্থীরা তার গাড়ির সামনে বসে পড়েন। প্রায় আধা ঘণ্টা অপেক্ষার পর বাধ্য হয়ে তিনি প্রশাসনিক ভবনে নিজের দপ্তরে চলে যান।
এদিকে আস-সুন্নাহ হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটক দিয়ে বাস চালিয়ে যাওয়ার পর সেখানে ফের ‘ঘৃণার’ পতাকা আঁকতে শুরু করেন আঁকিয়ে শিক্ষার্থীরা।
এরপর রাত দেড়টার দিকে ক্যাম্পাসে ঝটিকা মিছিল বের করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল। তারা আঁকিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে ‘রাজাকারের বাচ্চারা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘পিন্ডির দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘রাজাকার আর স্বৈরাচার, মিলেমিশে একাকার’, ‘রাজাকারি আর করিস না, পিঠের চামড়া রাখব না’সহ নানা স্লোগান দেন।
এরপর তারা উপাচার্য ও প্রক্টরকে প্রশাসনিক ভবনের ভেতরে অবরুদ্ধ করেন। এরপর প্রশাসনিক ভবনের সামনে প্রবেশমুখের সড়কে পাকিস্তানের আরেকটি পতাকা আঁকা হয়, দেওয়া হয় জুতার ছাপ।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, “সবার আগে বাংলাদেশ। এ দেশের প্রতিটি শ্রেণি, পেশা ও মতের মানুষকে ধারণ করেই রাজনীতি করতে হবে।
“আজ আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রতীকী ঘৃণাস্তম্ভের মাধ্যমে একাত্তরের ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে। সেখানে পাকিস্তানের দালালরা হামলা চালিয়েছে, সাংবাদিকদেরও ছাড় দেয়নি। প্রশাসনকে এর সুষ্ঠু বিচার করতে হবে।”
এদিকে পতাকা অঙ্কনে বাধার প্রতিবাদে এবং রাজাকার ঘৃণা প্রদর্শনে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও জুতা নিক্ষেপ কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। তবে বেলা ১১টাতেও এ ধরনের কোনো কর্মসূচি দেখা যায়নি।
বিবার্তা/এমবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]